ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

সারাটা জীবন কষ্টেই কেটেছে রাজীবের

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশিত: ১২:২৯ পিএম, ১৭ এপ্রিল ২০১৮

‘মামা, ঘুরতে তো মন চায়, কিন্তু একটু ভালো থাকতে হলে তো টাকা দরকার। একটু ফ্রি আছি একটা ঘণ্টা কম্পিউটারে কাজ করলে ৬০ টাকা পাব, ভালো একটা চাকরি পেলে তখন ঘুরবো।’

এ কথাগুলো মামা জাহিদুল ইসলামকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন রাজধানীতে দুই বাসের চাপায় হাত হারানোর ১৩ দিন পর মৃত্যু কোলে ঢলে পড়া তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব হোসেন।

আজ মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে এভাবেই মৃত ভাগ্নে রাজীবের স্মৃতিচারণ করছিলেন জাহিদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, রাজীবের সারাটি জীবন কষ্টে কষ্টেই কেটেছে। অল্প বয়সে বাবা-মাকে হারিয়ে এতিম হয়েছে। নিজের ও দুই ছোট ভাইয়ের পড়াশোনার খরচ জোগাতে কাকডাকা ভোর থেকে নিজের পড়াশোনা, কলেজের ক্লাস, ক্লাস শেষে টিউশনি ও টিউশনি শেষে কম্পিউটার গ্রাফিস শেখা ও ফাঁকে ফাঁকে টাইপিংয়ের কাজ করে টাকা রোজগার করেছে সে।

তিনি বলেন, রাজীবকে কখনও ঘুরতে যেতে বললে সে বলত- ‘মামা, ঘুরতে তো মন চায়, কিন্তু একটু ভালো থাকতে হলে তো টাকা দরকার। একটু ফ্রি আছি একটা ঘণ্টা কম্পিউটারে কাজ করলে ৬০ টাকা পাব, ভালো একটা চাকরি পেলে তখন ঘুরবো।’

জাহিদুল ইসলাম আরও বলেন, টাকার অভাবে রাজীব কখনও স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তে পারেনি। তবু নিজে নিজে পড়াশোনা করে একাধারে অনার্স ও ডিগ্রিতে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিল। ইদানীং সে চাকরির জন্য বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করছিল। ছাত্র হিসেবেও খারাপ ছিল না, হয়তো চাকরিটাও পেয়ে যেতো। দুঃখের সাগর পাড়ি দিয়ে যখনই সুখের দিনের আশায় দিন গুণছিল তখনই এই দুর্ঘটনা ঘটে।

সোমবার দিনগত রাত সাড়ে ১২টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে থাকা রাজীবের মৃত্যু হয়। তার মরদেহ এখনও হাসপাতালেই রাখা হয়েছে।

রাজীবের খালা হ্যাপী আকতার জাগো নিউজকে জানান, হাসপাতালে সব প্রক্রিয়া শেষ করে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে রাজীবের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফলে। সেখানে তার বাবা-মায়ের কবরের পাশে শায়িত করা হবে তাকে।

উল্লেখ্য, গত ৩ এপ্রিল দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারের সার্ক ফোয়ারার কাছে বিআরটিসির একটি দ্বিতল বাসের পেছনের ফটকে দাঁড়িয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন সরকারি তিতুমীর কলেজের স্নাতক দ্বিতীয়বর্ষের ছাত্র রাজীব হোসেন। বাসটি হোটেল সোনারগাঁওয়ের বিপরীতে পান্থকুঞ্জ পার্কের সামনে পৌঁছালে হঠাৎ পেছন থেকে স্বজন পরিবহনের একটি বাস বিআরটিসির বাসটিকে গা ঘেঁষে অতিক্রম করে।

এ সময় দুই বাসের প্রবল চাপে গাড়ির পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা রাজীবের ডান হাত কনুইয়ের ওপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ ঘটনায় সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। এতে তার মাথায়ও প্রচণ্ড আঘাত লাগে। দুর্ঘটনার পর তাকে প্রথমে শমরিতা হাসপাতালে ও পরে ঢামেক হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। গত মঙ্গলবার (১০ এপ্রিল) ভোর পৌনে ৪টায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে রাজীব। এরপর ওই দিন সকাল ৮টায় তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়।

এমউই/এমবিআর/পিআর

আরও পড়ুন