চারুকলার ভেতরে-বাইরে বর্ষ বরণের প্রস্তুতি
বৃহস্পতিবার, রাত সাড়ে ৮টা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) চারুকলা অনুষদের প্রবেশদ্বারের দু’পাশের ফুটপাতে জ্বলছে উচ্চ ক্ষমতার বাতি। বেশ কিছু লোকজন জটলা পাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের সবার দৃষ্টি ফুটপাতের দেয়ালে। সেখানে রঙ-তুলি হাতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে দেয়ালচিত্র অঙ্কনে ব্যস্ত চারুকলার শিক্ষার্থীরা।
দেয়ালজুড়ে শোভা পাচ্ছে রঙ তুলিতে আঁকা হাতি, ঘোড়া, বাঘ, বিড়াল, পাখি, বক, ময়ুর, কলসিসহ গ্রামীণ বধূ, হাতপাখা, নৌকা ও ফুল। এসব অঙ্কনে ফুটে উঠেছে গ্রামীণ লোকজ সংস্কৃতি।
আগামীকাল (শনিবার) বাংলা নববর্ষ ১৪২৫। এ বছর বাংলা নববর্ষের স্লোগান ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’। এ স্লোগানকে সামনে রেখে বাংলার নতুন বছরকে বরণ করে নিতে চলছে জোর প্রস্তুতি। শুধু চারুকলার বাইরের ফুটপাতেই নয়, ভেতরে মঙ্গল শোভাযাত্রার বিভিন্ন মোটিফ নির্মাণে ব্যস্ত চারুকলার শিক্ষার্থীরা।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে গত চারদিন মঙ্গল শোভাযাত্রার সাজসজ্জা নির্মাণকাজ প্রায় ব্ন্ধ থাকায় শেষ মুহূর্তে দিনরাত কাজ করছেন শিক্ষার্থীরা। প্রতি বছর এ মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমেই নববর্ষকে বরণ করে নেয়া হয়।
চারুকলার প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করতেই বারান্দার চারপাশে চোখে পড়ে চারুকলার শিক্ষার্থীদের অাঁকা লোকজ সংস্কৃতির বিভিন্ন চিত্রকর্ম সাজিয়ে রাখা হয়েছে। দেয়ালে বড় বড় হরফে লিখা ‘ছবি তোলা নিষেধ’। সামান্য এগিয়ে গেলেই দক্ষিণ দিকে দেখা যায়, মঙ্গল শোভাযাত্রার সুবিশাল বেশ কিছু মোটিফ। কোনটির কাজ শেষ হয়েছে আবার কোনটির কাজ চলছে। সময় হাতে নেই বলে রাত জেগে কাজ করা হচ্ছে।
চারুকলার প্রবেশদ্বারের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে দেয়ালে অঙ্কনকারীদের নির্দেশনা দিচ্ছিলেন প্রাচ্য কলা বিভাগের প্রভাষক সুমন কুমার বৈদ্য। তিনি জানান, প্রতি বছর মোটিফ ও রঙের পরিবর্তন থাকে। গত বছরের অসংখ্য রঙের প্রাধান্য থাকলেও এবার তা কম।
তিনি আরও বলেন, এ বছর সবগুলো মোটিফে কমলা, হলুদ ও সাদা রঙে রাঙানো হয়েছে। শুধুমাত্র বর্ডারগুলোতে কালো রঙের ব্যবহার হয়েছে। মূলত গ্রামীণ সমাজে বাংলা নববর্ষ পালনের অতীত ঐহিত্য ও সংস্কৃতিতে রঙ-তুলিতে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে।
বাংলা নববর্ষ বরণে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, সারা বাংলাই সাজছে নতুন সাজে। নববর্ষ উপলক্ষে চারুকলার গেটে বসছে রঙিন চুড়ির পসরা। নববর্ষে নতুন পোশাকের সঙ্গে নানা রঙের চুড়ি পড়েন নানা বয়সি নারীরা। দোকানী জানান, তার বিক্রিও ভালো হচ্ছে।
এমইউ/আরএস/এমএস