স্লোগানমুখর আন্দোলনকারীদের দমাতে মরিয়া পুলিশ
সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। শাহবাগে শুরু হওয়া আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ঢাবি ক্যাম্পাস ও শাহবাগ চত্বরে এখনও চলছে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ। পুরো ক্যাম্পাসে এখন টিয়ারশেলের ঝাঁজ। থেমে থেমে টিয়ারসেল ও জলকামান নিক্ষেপ করছে পুলিশ।
মুখোমুখি সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত শতাধিক শিক্ষার্থী ও তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আটক করা হয়েছে পাঁচ শিক্ষার্থীকে। এছাড়া আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশের অভিযানে কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন। তবে তাদের কারও আঘাতই তেমন গুরুতর নয়। এ অবস্থায় বিশ্বাবিদ্যালয় ছাত্রলীগ রাস্তায় বের হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
রাত ১২টার দিকেও চারুকলার সামনে কয়েক হাজার সাধারণ শিক্ষার্থী গলা ফাটিয়ে স্লোগান দিচ্ছে- ‘গুলি করে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না, বুলেট দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না।’ মিছিলকারীদের সামনে জ্বলছে আগুন। টিয়ারসেলের ঝাঁজ থেকে বাঁচতে টায়ার ও পরিত্যক্ত কাঠ বাঁশে আগুন ধরিয়ে রেখেছেন তারা।
এদিকে আন্দোলন দমাতে মরিয়া হয়ে পড়েছে পুলিশ। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, রাবার বুলেট ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। সাঁজোয়া যান ও জল কামান নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের দিকে। শাহবাগ থানার সামনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ সদস্যরা সিনিয়র অফিসারদের নির্দেশের অপেক্ষায় এখন। পরিস্থিতি মোকাবেলায় আরও দুই গাড়ি পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে।
কিছুক্ষণ আগে ছবির হাট থেকে টিএসসি পর্যন্ত কয়েকটি পয়েন্টে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। শিক্ষার্থীদের স্লোগান চলছে। দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত তারা রাজপথে থাকবে বলে স্লোগান দিচ্ছে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে দুই শতাধিক পুলিশ পাবলিক লাইব্রেরির গেটের সামনে অবস্থান নেয়। শাহবাগের চারুকলা থেকে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিচ্ছে। আন্দোলনকারিদের পিছু হটাতে এর আগে পুলিশ সাজোয়া যান ও জলকামান নিয়ে ধাওয়া করে। আন্দোলনকারীদের চারুকলার সামনে থেকে পিছু হটিয়ে দেয়। তবে আন্দোলনকারীরা কিছুক্ষণের মধ্যেই আগের স্থানে ফিরে এসে শ্লোগান দিতে থাকে।
পরিস্থিতি শান্ত রাখতে পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মাইক হাতে বারবার শিক্ষার্থীদের পিছু হঠানোর আহ্বান জানাতে থাকেন। এই মুহুর্তে চারুকলা ও ছবিহাটের মাঝের সড়কে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় টায়ার পোড়াচ্ছে। পুলিশ টিয়ারসেল ছুঁড়ছে। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান দিয়ে আগুন জালাচ্ছে আন্দোলনকারীরা। সেখানে পুলিশ থেকে শিক্ষার্থীদের দূরত্ব ৫০ গজ।
কমপক্ষে ৫০ রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। রাত ১১টার দিকেও শিক্ষার্থীদের স্লোগান দিতে দেখা গেছে। চারুকলা থেকে টিএসসি পর্যন্ত কমপক্ষে ৩ থেকে ৪ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। পুলিশ চারুকলা গেটের সামনে থেকে রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। ওই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রক্টর এ একে এম গোলাম রব্বানি ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশকে পিছিয়ে যেতে বলেন। তিনি পুলিশকে ঢাবি সীমানা থেকে ফিরিয়ে আসতে বলেন। তবে পুলিশ যখন পিছিয়ে যাচ্ছিল তখন আন্দোলনকারীরা পুলিশের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। এ অবস্থায় পুলিশ আবারও তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে।
দুইটি সাঁজোয়া যান, দুইটি জলকামান ও একটি প্রিজন ভ্যান নিয়ে শাহবাগ চত্বরে মোতায়েন রয়েছে পুলিশ। সুফিয়া কামাল হলের গেটে ছাত্রীদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। কেউ কেউ হল গেট ভেঙে বাইরে বের হয়েছেন বলে জানা গেছে।
রাত সোয়া একটার দিকে শিক্ষার্থীরা পুলিশের দিকে এগিয়ে গেলে পুলিশ শর্টগানের গুলি ছোঁড়ে এবং তাদের টিএসসির দিকে ধাওয়া করে। এ সময় একজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে গেছে পুলিশ। আহত শিক্ষার্থীরা নাম শাওন। তিনি সমাজকল্যাণ বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র এবং এফ রহমান হল বাসিন্দা। এছাড়া এক পুলিশ সদস্যের মাথা থেকে রক্ত ঝরতে দেখা গেছে। তাকে বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ক হাসান আল মামুন বলেন, পুলিশ আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে নির্বিচারে হামলা চালিয়েছে। পুলিশের টিয়ারসেল, ফাঁকা গুলিতে আমাদের শতাধিক আন্দোলনকারী আহত হয়েছেন। আটক করা হয়েছে পাঁচজনকে। আমরা এ হামলার নিন্দা জানাই। হাসান আল মামুন জানান, তারা এখন চারুকলার সামনে অবস্থান নিয়ে হামলার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। কিন্তু পুলিশ সেখানে শাহবাগ থানার সামনে থেকে টিয়ারসেল নিক্ষেপ করছে।
রাত দেড়টার দিকে শিক্ষার্থীরা পুলিশের দিকে এগিয়ে আসলে পুলিশ শর্ট গানের গুলি ছুঁড়ে তাদের টিএসসির দিকে ঢুকিয়ে দেয়। এ সময় ১ জনকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে গেছে পুলিশ।
আটকদের ছেড়ে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক
রোববার রাত পৌনে ৮টার দিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে শাহবাগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর লাটিচার্জ ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করা শুরু করে পুলিশ। এরপরই ফাঁকা হতে শুরু করে শাহবাগ। ছত্রভঙ্গ করে দেয়ায় শাহবাগ পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
এমএইচ/এআর/ওআর/এমআরএম