নতুন বিধিমালায় প্রকৃত মালিকরা দ্রুত ফিরে পাবেন অর্পিত সম্পত্তি
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, অর্পিত সম্পত্তির বিষয়ে নতুন বিধিমালা হওয়ার পর ‘খ’ তালিকাভুক্ত সম্পত্তি নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা করার সুযোগ বন্ধ করা হচ্ছে। ফলে প্রকৃত মালিকরা দ্রুত তাদের সম্পত্তি ফিরে পাবেন। এ সময় ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দেয়ার জন্য অনুমোদন চান তিনি। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, বিবৃতির সুযোগ দেয়া হবে।
রোববার জাতীয় সংসদে আইনমন্ত্রী এ কথা বলেন। এর আগে পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য পঞ্চানন বিশ্বাস অর্পিত সম্পত্তির আইন নিয়ে সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অর্পিত সম্পত্তি আইনের নতুন বিধিমালার খবরে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা চমকে গেছে, যা নতুন সঙ্কট তৈরি করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। এ সময় তিনি দৈনিক কালেরকণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন তুলে ধরেন। ৩০০ বিধিতে আইনমন্ত্রীর বিবৃতিও দাবি করেন পঞ্চানন বিশ্বাস।
এর জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সকলকে আশ্বস্ত করে জানিয়েছেন, ‘খ’ তফসিলের সম্পত্তির বিষয়ে উচ্চ আদালতে রিট করার সুযোগ থাকলেও নতুন আইনে রিট করার সুযোগ থাকছে না। এরই মধ্যে এ সংক্রান্ত সার্কুলার আইন মন্ত্রণালয় থেকে ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও জানান, সংসদ সদস্য যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগে ‘ক’ তফসিল আর ‘খ’ তফসিল নিয়ে একটা বিভ্রান্তি ছিল। এই বিভ্রান্তি দূর করতে আমরা নতুন আইনের খসড়া করে ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। আগে ‘খ’ তফসিলভুক্ত ভূমি দখলদারিত্বের সুযোগ একেবারেই বন্ধ করে দেয়ার পর্যায়ে ছিল। তিনি এ ব্যাপারে সংসদে একদিন ৩০০ বিধিতে বিস্তারিত বক্তব্যে তুলে ধরার আগ্রহ প্রকাশ করলে স্পিকার তাকে সেই সুযোগ প্রদানের আশ্বাস দেন।
এর আগে পঞ্চানন বিশ্বাস প্রতিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, সরকারি জিম্মা থেকে অর্পিত সম্পত্তি ব্যক্তি মালিকানায় ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ স্বার্থসংশ্লিষ্ট যেকোনো ব্যক্তি বা সংস্থা অর্পিত সম্পত্তি কিনে সেখানে বাড়িঘর করতে পারবে। শিল্প-কারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল এসবও করা যাবে। সরকারি কর্মচারীরাও জোট বেঁধে এই সম্পত্তি কিনতে পারবেন। এসব বিধান রেখে অর্পিত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বিধিমালার খসড়া প্রস্তুত করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত পাওয়ার পর তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। আর সেটা হলেই নতুন সঙ্কট তৈরি হবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে সরকারের দখলে থাকা অর্পিত সম্পত্তির পরিমাণ দুই লাখ ২০ একর। এসব সম্পত্তির মালিকানা দাবি করে আদালতে এক লাখ ১৯ হাজার মামলা রয়েছে। অর্পিত সম্পত্তি বিষয়ে আমরা জানি, যে যত বেশি প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ডিসিআর (ডুপ্লিকেট কার্বন রশিদ) কাটতে পারত সে তত বেশি সম্পত্তির মালিক হত। যার বেশি ডিসিআরের সঙ্গে কিংবা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে তারা ডিসিআর কেটে নিচ্ছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ‘ক’ ও ‘খ’ তফসিল নামে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। ‘ক’ তফসিলে উচ্চ আদালতে মামলা হলেও ‘খ’ তফসিলে কোনো মামলা হবে না, যার সম্পত্তি তার কাছে চলে যাবে। সে রেকর্ড পাবে, খাজনাও দিতে পারবে। কিন্তু ‘খ’ তফসিলে সম্পত্তির মালিক তাদের জমি রেকর্ড হচ্ছে না, খাজনাও দিতে পারছে না। ‘ক’ তফসিল নিয়ে হাইকোর্টে পর্যন্ত মামলা চলছে। সেখান থেকে যার পক্ষে রায় আসবে সেই জমির ভোগ দখল করবে।
তিনি আরও বলেন, এই দেশে যেসব ভূমি অর্পিত সম্পত্তি বলে আখ্যায়িত হয়েছিল সেটা শুধু ধর্মীয় সংখ্যালঘুর তা কিন্তু নয়, প্রধানমন্ত্রীর দাদা-দাদীর সম্পত্তিও পাকিস্তান আমলে অর্পিত সম্পত্তি হয়েছিল।
এইচএস/জেডএ/এমআরএম