ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

গ্রামে ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা : ঢামেকেই অ্যানালগ রেকর্ড সেন্টার

প্রকাশিত: ০৭:২৫ পিএম, ২৬ জুলাই ২০১৫

`রাজধানীসহ সারাদেশে ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা চালু হয়েছে` স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এমন দাবি করলেও দেশের অন্যতম বৃহৎ সরকারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের হাজার হাজার রোগীর মেডিকেল রেকর্ড অ্যানালগ পদ্ধতিতে হাতে লেখা কাগজ-কলমে সংরক্ষণ করা হচ্ছে! জরুরি ও অন্তঃবিভাগে ভর্তি সকল রোগীর অস্ত্রোপচারসহ চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সকল তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষণ, ইনজুরি সার্টিফিকেট, জন্ম-মৃত্যু সনদ ইস্যু, রোগীর নাম ও বয়স সংশোধন, বীমা দাবিসহ ইস্যুকৃত সকল প্রকার সনদের সত্যতা যাচাই প্রতিবেদন হাসপাতালের রেকর্ড সেন্টারে সংরক্ষণ করা হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) প্রকাশিত লোকাল হেলথ বুলেটিন-২০১৫ অনুযায়ী ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢামেক হাসপাতালের ইনডোরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে এক লাখ ৩৮ হাজার ৬শ’ ৫৬ জন ভর্তি হয়েছেন এবং জরুরি বিভাগে তিন লাখ ২৩ হাজার ৮শ’ ৭০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এ সময়ে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৬৭ হাজার অস্ত্রোপচার হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে ১৩ হাজার ৫শ’ ১৯ জনের।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, লাখ লাখ রোগীর প্রয়োজনীয় মেডিকেল রেকর্ড সংরক্ষণের জন্য ঢামেক হাসপাতালে মাত্র দুইজন রেকর্ড কিপার রয়েছেন। এক সময় পাঁচজন রেকর্ড কিপার থাকলেও অবসরগ্রহণ, স্বেচ্ছায় চাকরিত্যাগ ও অনিয়মের অভিযোগে সাসপেন্ড হওয়ার ঘটনায় তিনজন রেকর্ড কিপারের পদ বর্তমানে খালি রয়েছে। রেকর্ড কিপার দু`জন ছাড়া রেকর্ড রুমে জনবল বলতে আর দু`জন এমএলএসএস ও সুইপার।

অভিযোগ রয়েছে, প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবলের অভাব, আধুনিক রেকর্ড পদ্ধতি সম্পর্কে অজ্ঞতা, রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত সঠিক তথ্য পাঠানোর ব্যাপারে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের চরম অনিহা, বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে আন্তঃসম্পর্কহীনতা, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও সর্বোপরি সঠিকভাবে মনিটরিং ও সুপারভিশনের অভাবে দুই হাজার ৪শ’ বেডের এই হাসপাতালের মেডিকেল রেকর্ড সেন্টারটি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢামেক হাসপাতালের একাধিক সিনিয়র অধ্যাপক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা
জাগো নিউজকে জানান, বিশ্বের সব উন্নত দেশে মেডিকেল রেকর্ড সেন্টারকে হাসপাতালের প্রাণকেন্দ্র বলা হয়। হাসপাতালে কতো রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে, রোগীদের মধ্যে কে কোন ধরনের রোগে ভুগছে, কতোদিন ভুগছে, চিকিৎসক কী ধরনের চিকিৎসা দিয়েছেন, রোগীর অস্ত্রোপচার হয়েছে কি-না, হয়ে থাকলে কবে, কোন চিকিৎসক কী ধরনের অস্ত্রোপচার করেছেন ইত্যাদির হালনাগাদ তথ্য থাকে। কিন্তু ঢামেক রেকর্ড সেন্টারে দু`জন মেডিকেল রেকর্ড কিপার দিয়ে সুষ্ঠুভাবে হালনাগাদের তথ্য-উপাত্ত রাখা দায় হয়ে পড়েছে। জনবলের অভাবে রেকর্ড কিপাররা কুলিয়ে উঠতে না পারায় রোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।


এদিকে দেশের প্রাচীন এই হাসপাতালে যে মেডিকেল রেকর্ড সেন্টার রয়েছে তা রোগী ও তাদের অভিভাবকদের অনেকেই জানেন না। তবে প্রয়োজনে কোনো রোগীর অভিভাবক হাসপাতাল থেকে কোনো তথ্য সংগ্রহ করতে চাইলে হাসপাতাল পরিচালকের অনুমতি সাপেক্ষে এ সেন্টারের দ্বারস্থ হলে তখন তিনি হাড়ে হাড়ে টের পান রেকর্ড সংগ্রহে কী ভোগান্তিই না পোহাতে হয়। এছাড়া রোগীর নাম ঠিকানা, বয়স ও চিকিৎসাপত্রসহ অধিকাংশ তথ্যেই ভুলে ভরা থাকে।

হাসপাতালের অনেকেই ঠাট্টাচ্ছ্বলে বলেন, চীনের দুঃখ যেমন হোয়াংহো নদী তেমনি এ হাসপাতালের দুঃখ অ্যানালগ রেকর্ড সেন্টারটি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একটি আদর্শ মেডিকেল সেন্টারে যেসব তথ্য সার্বক্ষণিক হালনাগাদ পাওয়া যায় তা হলো রোগী ভর্তি, প্রাথমিক চিকিৎসা, জন্ম-মৃত্যু রেজিস্ট্রার, মেডিকোলিগ্যাল রেকর্ড সংরক্ষণ, রেকর্ডপত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, কর্তৃপক্ষের চাহিদা মতো দায়িত্ব সংরক্ষণ করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও মানসম্মত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।

রেকর্ড সেন্টার থেকে তথ্য-উপাত্ত নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বড় বড় গবেষণা হয়ে থাকে। ঢামেক হাসপাতালের মূল ভবনের দোতলায় মেডিকেল রেকর্ড সেন্টারটি সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মান্ধাতা আমলের অ্যানালগ পদ্ধতিতে শত শত ফাইল সংরক্ষণ করা হচ্ছে। কয়েক বছরের পুরনো ফাইলে ধুলোবালির স্তর পড়ে আছে।

অভিযোগ রয়েছে, ডাক্তার ও নার্সরা নিয়মিত রেকর্ডরুমে ফাইল পাঠান না। অধিকাংশ ফাইলে রোগের ইতিহাস লেখা থাকে না। প্রতি পাতায় রোগীর নাম, রেজিস্ট্রেশন নম্বর লেখার নিয়ম থাকলেও তা লেখা হয় না। রোগী রিলিজ হলে ডিজচার্জ সার্টিফিকেটে অনেক সময় তারিখ লেখা হয় না। ডিজচার্জ অন রিস্ক বন্ডে ডাক্তারের স্বাক্ষরও থাকে না।

এ ব্যাপারে জানতে মেডিকেল রেকর্ড সেন্টারের রেকর্ড কিপার আবদুল হান্নানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি হাসপাতাল পরিচালকের অনুমতি ছাড়া কোনো কথা বলতে পারবেন না বলে জানান।

অন্য দিকে হাসপাতাল পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মিজানুর রহমানের সঙ্গে কথা বলতে তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আবুল বাশারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, স্যার ভিতরে ব্যস্ত আছেন। কথা বলতে হলে পরে এক সময় আসতে হবে।

এমইউ/আরএস/বিএ