প্রশ্ন ফাঁস রোধে ‘সরকারের আন্তরিকতা’ প্রয়োজন
দেশের বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস বন্ধে সরকারকে আরও আন্তরিক হওয়ার ওপর জোর দিতে বলেছেন সংশ্লিষ্টরা।
বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে 'প্রশ্ন ফাঁস রোধে করণীয়' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ মন্তব্য করেন। বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) বৈঠকটির আয়োজন করে।
বৈঠকে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের অনুসন্ধানী সাংবাদিক জিএম ফয়সাল বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জালিয়াতি করে ভর্তি এবং প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করি। এ সময় রকিবুল নামে নাটোর থেকে এক সরকারি কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করে সিআইডি। প্রায় দেড় মাস জেল খেটে জামিনে বের হয়েছেন তিনি। তবে তাকে বরখাস্ত কিংবা তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বরং অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের দুই পর্ব শেষ হওয়ার পর সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল থেকে বলা হলো, ‘আর ঢোকার চেষ্টা করবেন না যাতে আমরা বিব্রত হই।’ এসব কাজের সঙ্গে যারা জড়িত তারা কাছের লোক। আমরা তাদের অনুরোধে নিরব থেকেছি। তবে প্রশ্ন ফাঁসসহ নানা অনিয়ম বন্ধে সরকারের আন্তরিকতা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, আমরা একজনকে পেয়েছিলাম যিনি ১৩ লাখ টাকা দিয়ে জালিয়াতি করে তার সন্তানকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছেন। যখন জানতে পারলেন আমরা রিপোর্টটি করবো তখন ওই অভিভাবক আমাদের ৫০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা দিতে রাজি হলেন। শুধু শিক্ষার্থী নয়, এসব ক্ষেত্রে অভিভাবকরাও দায়ী।
অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, সরকারের আন্তরিকতা ও সৎ ইচ্ছা থাকলে প্রশ্ন ফাঁস রোধ সম্ভব। কেননা প্রশ্ন ফাঁস রোধে বোর্ড কর্তৃপক্ষকে জানালেও তারা তেমন গুরুত্ব দেন না। বিভিন্ন সময় সরকারের পক্ষ থেকে প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করার কারণে এটি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। তবে বর্তমানে সরকার যে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সেগুলো বাস্তবায়ন হলে প্রশ্ন ফাঁস রোধ হবে বলে বিশ্বাস করি। সভায় জেএসসি, জেডিসি পাবলিক পরীক্ষা কমিয়ে মাত্র একটি পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তাব করেন তিনি।
পাবলিক পরীক্ষা-সংক্রান্ত জাতীয় মনিটরিং কমিটির সদস্য এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার শেখ নাজমুল আলম বলেন, প্রশ্ন ফাঁস রোধে বিজি প্রেসকে আধুনিকায়ন করতে হবে। সম্প্রতি সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখলাম, যে রুমে প্রশ্ন ছাপা হয় সেই রুমের সিসিটিভি ক্যামেরা মুভ করে। ক্যামেরা পুরো রুম কাভার করে না। আমার প্রশ্ন, ওই রুমে কি আর কোনো ক্যামেরা লাগানো যায় না? দেশ ডিজিটাল হলেও বিজি প্রেস এখনও ডিজিটাল হয়নি। আধুনিকায়নের আগে সেখানে কোনো প্রশ্ন ছাপানো উচিৎ নয়।
তিনি আরও বলেন, প্রশ্ন ফাঁসকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পরীক্ষার আইন পরিবর্তন ও সংশোধন করতে হবে। ১৯৮১ সালের পাবলিক এক্সামিনেশন অ্যাক্টে আসামিকে ২-১ দিনের বেশি রিমান্ডে নেয়া যায় না। অনেক সময় তদন্তের গভীরেও যাওয়া যায় না। পাশাপাশি তারা দ্রুত জামিন পেয়ে যায়।
শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ মমতাজ লতিফ বলেন, জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার কারণেও প্রশ্ন ফাঁস বেড়েছে। মুখস্ত পদ্ধতি তুলে দিয়ে সৃজনশীল রাখতে হবে। কারণ সব কিছুতে শুধু মুখস্ত পদ্ধতি রাখলে সৃজনশীলতা নষ্ট হয়ে যাবে।
দৈনিক যুগান্তরের বিশেষ প্রতিনিধি মিজান মালিক বলেন, প্রশ্ন ফাঁসকে ফৌজদারি অপরাধ বিবেচনা করে নতুন আইন করে আসামিদের বিচার ও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। গুরুত্বর এ অপরাধীদের বিচার করতে প্রয়োজনে আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন করা যেতে পারে।
বৈঠকের শুরুতে ক্র্যাবের দফতর সম্পাদক রুদ্র রাসেল একটি ধারণা পত্র পাঠ করেন। এতে গত কয়েক বছরে সারা দেশে প্রশ্ন ফাঁসের চিত্র, ফাঁস বন্ধে গঠিত তদন্ত কমিটির কার্যক্রম এবং সরকারের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ক্র্যাবের সভাপতি আবু সালেহ আকন, সাংগঠনিক সম্পাদক এমএম বাদশাসহ ক্র্যাবের নেতা ও সদস্যরা।
এআর/এএইচ/এমএস