ওয়ান ইলেভেনের কুশীলবদের হিসাব-নিকাশ পরে করবো : প্রধানমন্ত্রী
ওয়ান ইলেভেনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তখন অত্যাচার নির্যাতন করেছে সদ্য ক্ষমতা ত্যাগকারী বিএনপি সরকার। আর গ্রেফতার করা হলো আমাকে। কারা এ কাজ করেছে, তা আমি জানি। ওয়ান ইলেভেনের কুশীলবদের হিসাব-নিকাশ পরে করবো।
মঙ্গলবার রাজধানীর ফার্মগেটের খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভায় এ কথা বলেন দলের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে নানা সময় কী কী ষড়যন্ত্র হয়েছে উল্লেখ করে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে তাকে গ্রেফতােরের কথা তুলে ধরেন।
সংবিধান স্থগিত করে জরুরি অবস্থা জারি করে ২০০৭ সালের জানুয়ারি থেকে দুই বছর দায়িত্ব পালন করা ফখরুদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার সেনা সমর্থিত বলে পরিচিত হলেও ওই সরকারের আমলে বাংলাদেশের কয়েকজন সম্পাদক এবং নাগরিক সমাজের সদস্যরা প্রভাবশালী হয়ে উঠেন। কেউ কেউ এটা ‘আমাদের সরকার’ বলেও পরিচয় দিতেন।
১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর দেশের উন্নয়ন করলেও ষড়যন্ত্রের কারণে ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়ী হতে পারেননি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০১ সালে ষড়যন্ত্র হলো। ভোট বেশি পেয়েও ক্ষমতায় আসতে পারিনি। ওই সময় বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে শুরু করলো জুলুম-অত্যাচার। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মতো তারা গ্রামের পর গ্রাম নির্যাতন চালিয়েছে। ভোট দেয়ার অপরাধে এমন কোনও অত্যাচার নেই, তারা করেনি। ছয় বছরের শিশুকে পর্যন্ত ধর্ষণ করেছে। প্রতিহিংসার বশে তারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এসব করেছে। পাঁচ পাঁচটি বছর দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছে বাংলাদেশকে।
বিএনপি-জামায়াত জোটের সময়ের বিবরণ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, তারা বাংলা ভাই সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশকে সন্ত্রাসের দেশে পরিণত করেছে। গ্রেনেড হামলা তো আছেই। এইভাবে অত্যাচার করে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার চেষ্টা করেছে তারা, ইতিহাসকে মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে।
২০০৮ সালের নির্বাচনেও যেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না আসতে পারে, তারজন্যও ষড়যন্ত্র হয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু সব ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। তিনি বলেন, আমরা সরকার গঠন করলাম। আমাদের লক্ষ্য ছিল, দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তুলব।
তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করলেন, তারা ভিক্ষা করবে বা রিকশা চালাবে, এটা অপমানজনক। তাদের সন্তানরা পড়ালেখার সুযোগ পাবে না, সেটা হতে পারে না। তাই আমরা ক্ষমতায় এসে তাদের জন্য কোটার ব্যবস্থা করলাম। আমরা চেষ্টা করছি, সবার মধ্যে ইতিহাসকে ছড়িয়ে দেয়ার। তরুণ প্রজন্ম ধীরে ধীরে উজ্জীবিত হচ্ছে, তারা সঠিক ইতিহাস জানতে পারছে। অথচ ইতিহাসকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তারা জানে না, ইতিহাসকে কেউ মুছে ফেলতে পারে না।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘২০০৮ সালে সরকার গঠন করেছি। এরপর ২০১৩ সালে তারা এক দুর্বিষহ অবস্থা তৈরি করে। সেই অবস্থা আমরা সামাল দিয়েছি। ২০১৪ সালে আবার নির্বাচন হয়, মানুষের ভোটে ক্ষমতায় আসি। কিন্তু তারা ২০১৫ সালে অগ্নিসন্ত্রাস করে। সাড়ে ৩ হাজার মানুষ পুড়িয়েছে। হাজার হাজার গাড়ি, বাস, ট্রাক, লঞ্চ আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে। সরকারি অফিসে আগুন দিয়েছে। কেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলো এটাই তাদের অন্তর্জ্বালা। তারা তো ক্ষমতায় থেকে ভোগ-বিলাস করেছে, মানি লন্ডারিং করে ধরা পড়েছে। এতিম খানার টাকা পর্যন্ত আত্মসাৎ করেছে। সবকিছু ধরা পড়েছে। এতে আমাদের কোনও হাত নেই। কিন্তু আদালত তাদের সাজা দিলে তারা মানে না। তারা কিছুই মানে না। তারা ক্ষমতায় থেকে মানুষকে হত্যা করেছে, এখনও তাই করতে চায়। দেশের কোনো উন্নয়ন তারা চোখেই দেখে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ক্ষমতায় আসার পর দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। জাতির পিতা মাত্র সাড়ে ৩ বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশে রূপ দেন। এর ৪৩ বছর পর আজ দেশ উন্নয়নশীল হয়েছে। আমরা জনগণের কল্যাণে কাজ করেছি। আমরা বাজেট বাড়িয়েছি, দেশের জনগণের মাথাপিছু আয় বাড়িয়েছি। এ সময় বিএনপি জোটের ক্ষমতায় থাকাকালে ২০০৫-০৬ অর্থবছরের বিভিন্ন তথ্যের সঙ্গে বর্তমান সরকারের মেয়াদের একই খাতের বিভিন্ন তথ্যের তুলনা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিচ্ছি। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়েছি। মানুষ এখন সেবা পাচ্ছে, কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে, মানুষ কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। বাংলাদেশ এখন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে যাচ্ছে। এই স্যাটেলাইটের পর পর্যায়ক্রমে আরও স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে। আমরা মেট্রোরেল নির্মাণ করছি। আমরা ফ্লাইওভার তৈরি করেছি, হাইওয়েগুলো চারলেন করে দিচ্ছি। পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্র হয়েছিল, আমাদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া হয়েছিল। সেই চ্যালেঞ্জ আমরা মোকাবিলা করছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ক্ষমতায় আসার পর সরকারি কর্মচারীদের বেতন ১২৩ ভাগে বৃদ্ধি করেছি। পৃথিবীর কোন দেশে এমন নজির কেউ দেখাতে পারবে না। বর্তমানে দেশের ৯০ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে। বিএনপি আমলে বিদ্যুৎ নিয়ে হাহাকার ছিল। পানি ও বিদুতের কারণে মানুষের জীবন ছিল প্রায় অকার্যকর। তবে বিদ্যুৎ দিতে না পারলেও তারেক রহমান গ্রামে গঞ্জে খাম্বা দিয়েছিলেন। কারণ তার খাম্বার ব্যবসা ছিল।
এফএইচএস/জেএইচ/এমএস