এখন বুঝছি বউয়ের কথা না শোনার পরিণতি
ফজলু মিয়া। বয়স ৬৫। মুখ ভর্তি দাড়ি। নিয়মিত নামাজও পড়েন। বয়সের তুলনায় এখনও বার্ধক্য তেমন জেঁকে বসেনি শরীরে। তবুও একমাস ধরে নিজের একটি ভুলের জন্য খেসারত দিচ্ছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের সিঁড়ির পাশে ফ্লোরে শুয়ে। ছেলেবেলায় বন্ধুদের সঙ্গে সিগারেটের একটা দু’টা টান দিতে দিতে একসময় তিনি সিগারেটে আসক্ত হয়ে পড়েন। সব কিছু ছাড়তে পারলেও ছাড়তে পারেননি সিগারেট।
মাস খানেক আগে নিজ বাসায় দুপুর ১২টার দিকে কাঠের হাতলওয়ালা চেয়ারে বসে মনের সুখে সিগারেট খাচ্ছিলেন ফজলু মিয়া। সিগারেটের সুখটানে হেলান দিয়ে চেয়ারে বসে কী যেন ভাবছিলেন। ভাবতে ভাবতে জ্বলন্ত সিগারেট হাতে নিয়ে কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছিলেন টের পাননি তিনি। দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠা আগুনের তাপে ঘুম ভাঙে তার।
ততক্ষণে শরীরের বেশ কিছু অংশ পুড়ে গেছে। তার চিৎকারে রান্না ঘর থেকে দৌড়ে এসে পানি ঢেলে প্রিয় স্বামীকে আগুন থেকে রক্ষার চেষ্টা করেন স্ত্রী আছিয়া। আগুনের তাপে ঘুম ভাঙলেও আগুনে পুড়ে আবার অজ্ঞান হয়ে যান ফজলু মিয়া।
নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার সৈয়দনগর গৌরিপাড়া গ্রামে ঘটে এ ঘটনা। দগ্ধ অবস্থায় প্রথমে নরনিংদী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে বিভাগে। রাখা হয় ইউনিটের ৫ম তলার সিঁড়ির পাশের ফ্লোরে। রাত-দিন স্বামীর পাশে থেকে এখন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন স্ত্রী আছিয়া।
স্বামীর পাশে বসে থাকা স্ত্রী আছিয়া জাগো নিউজকে বলেন, দুপুরের রান্না করছিলাম। তাকে দেখলাম চেয়ারে বসে বসে সিগারেট খাচ্ছে। এর কিছুক্ষণ পর আগুন আগুন বলে তার চিৎকার শুনে দৌড়ে আসি। এসে দেখি তার পাঞ্জাবিতে আগুন জ্বলছে। তাড়াতাড়ি রান্না ঘর থেকে পানি এনে তার গায়ে ঢেলে আগুন নেভালাম। এর মধ্য সে অজ্ঞান হয়ে যায়। স্বামীর এ অবস্থা দেখে হতবাক হয়ে পড়ি। কোনো কিছু চিন্তা না করে তাকে নিয়ে যায় নরসিংদী হাসপাতালে।
তিনি বলেন, হাসপাতালে নেয়ার পর তার জ্ঞান ফিরলে জানতে পারি সিগারেট থেকেই আগুন লেগেছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তার পেট, কোমর ও নিচের কিছু অংশ পুড়ে গেছে। এজন্য তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন।
চিকিৎসকদের নির্দেশনা মোতাবেক ফজলু মিয়াকে নিয়ে আসা হয় ঢামেকে।
আছিয়া ক্ষোভের স্বরে বলেন, বহুবার নিষেধ করেছি যে আপনি নামাজ-কালাম পড়েন, সিগারেট খাওয়া বন্ধ করে দেন। কিন্তু আমার কথা শুনতো না। বলতো কাল ছেড়ে দেব। তার সেই কাল আর আসতো না তার কাছে। প্রতিদিন খেতো।
ফজলু মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ছেলেবেলায় বন্ধুদের সঙ্গে শখ করে একটা দু’টা টান দিতাম। তারপর অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। ছাড়ার অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু পারিনি। এখন বুঝছি বউয়ের কথা না শোনার পরিণতি।
এনএফ/আরআইপি