উন্নয়ন প্রশ্নে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকেই ক্ষমতায় থাকতে হবে
দেশের উন্নয়ন প্রশ্নে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিকে-ই ক্ষমতায় থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘ওই দেশগুলোতে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় ছিল বলেই এত উন্নয়ন হয়েছে।’ শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২৮তম সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ক্ষমতায় আসে। স্বাধীনতাবিরোধীরা কেবল নিজেদের স্বার্থ-ই রক্ষা করেছে। এ কারণেই দেশ উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছে।’
ছাত্রলীগ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্রলীগ ভোটের মাধ্যমে তাদের নেতৃত্ব নির্বাচিত করবে। যে গণতান্ত্রিক ধারা ছাত্রলীগ সূচনা করেছে সেটাই অব্যহত থাকবে। ছাত্রলীগকে ইতিহাস-ঐতিহ্যকে মাথায় রেখে সঠিক নেতৃত্ব দিতে পারে এই ধরণের মেধাবী নেতৃত্ব নির্বাচিত হতে পারে, অবশ্যই এ বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে। শিক্ষার আলো জ্বেলে, শান্তি ও প্রগতির পথে ছাত্রলীগের সম্মেলন সফল হোক।
তিনি আরো বলেন, অশিক্ষিত নেতৃত্ব দেশ ও জাতিকে কিছু দিতে পারবে না। তারা নিজের স্বার্থ পূরণ করতে পারবে, দেশের কল্যাণে কিছু করতে পারবে না। আওয়ামী লীগ সরকারে আসলে জনগণের উন্নয়ন হয়। আওয়ামী লীগের ত্যাগের মনোভাব আছে বলেই আওয়ামী লীগ দেশের উন্নয়ন করতে পারছে। বাঙালির যতটুকু অর্জন, তা আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগের আন্দোলনের মাধ্যমেই। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্রলীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জিয়া ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের বহু নেতাকর্মীকে হত্যা করেছিল। ১৯৮১ সালে যখন দেশে ফিরে আসি, তখন আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগে বিপর্যয় অবস্থায় দেখতে পাই। অনেক ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে এই সংগঠনকে গতিশীল করতে হয়েছে।’
বঙ্গবন্ধু হত্যা এবং যুদ্ধাপরাধ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, জাতিকে অভিশাপমুক্ত করতে আমরা প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে। যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায়ও কার্যকর হচ্ছে। এই বিচারের মধ্য দিয়ে আমরা জাতিকে কলঙ্ক মুক্ত করব-ই।
সম্মেলনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের এবারের কমিটিতে পদপার্থীদের বয়সসীমা বাড়ানোর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বয়সসীমা ২৭ বছর থেকে বাড়িয়ে ২৯ বছর নির্ধারণ করেন। একই সঙ্গে তিনি কাউন্সিলরদের প্রদত্ত ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের ঘোষণাও দেন তিনি।
জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে বৃষ্টি উপেক্ষা করে সকাল থেকেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যোগ দিতে থাকেন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতা কর্মীরা মিছিল নিয়ে সম্মেলনে যোগ দেয়। সকাল ১০টার মধ্যেই সম্মেলনস্থল পূর্ণ হয়ে যায় ডেলিগেটস ও কাউন্সিলদের দিয়ে। পরে বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মীদের ব্যানার নিয়ে সোহরাওয়াদী উদ্যানের মধ্যে অবস্থান নিতে দেখা যায়।
বেলা ১১টা ১০ মিনিটে সম্মেলনস্থলে উপস্থিত হন প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় সংগঠনের সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম তাকে স্বাগত জানান। মূল মঞ্চের পাশেই ছোট মঞ্চে দাঁড়িয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন প্রধানমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে এ সময় বিভিন্ন সাংগঠনিক জেলা নেতারা দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। মঞ্চে শিল্পীরা জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন। পরে শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা এবং মূল মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন।
বদিউজ্জামান সোহাগের সভাপতিত্বে ও সিদ্দিকী নাজমুল আলমের সঞ্চালনায় প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এছাড়া সম্মেলনে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের বর্তমান এবং সাবেক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
দু’দিনব্যাপী সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন রোববার ইঞ্জিনিয়ার ইনিস্টিটিউশন মিলনায়তনে কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে পরবর্তী নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে।
এএসএস/আরএস/আরআইপি