সাতদিন পর প্রিয়জনের সান্নিধ্য
নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নিহত ২৩ বাংলাদেশির মরদেহ আর্মি স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দুর্ঘটনার সাতদিন পর হতভাগা প্রিয়জনের সান্নিধ্য পেল স্বজনরা।
সোমবার বিকেল ৫টা ২৩ মিনিটে আর্মি স্টেডিয়ামে নিহতদের জানাজা সম্পন্ন হয়। এরপর রাষ্ট্রপতির পক্ষে রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী শ্রদ্ধা জানান। পরে মরদেহগুলো স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা শুরু হয়।
প্রথমে নিহত ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতানের মরদেহ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর বৈমানিক পৃথুলা রশীদের মরদেহ পরিবারের কাছে দেয়া হয়। এভাবে পর্যায়ক্রমে ২৩টি মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এ সময় মৃত্যুর সনদপত্র এবং পুলিশের ক্লিয়ারেন্সও দেয়া হয়। স্বজনরা তাদের পছন্দ মতো স্থানে নিহতদের দাফন করবেন বলে জানা গেছে।
টানা সাতদিন পর নিথর মরদেহগুলো বুঝে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে। এ সাতদিন নির্ঘুম রাত কেটেছে তাদের। কখন প্রিয় মানুষটি ফিরবে, কখন তার একটু সান্নিধ্য পাবে- এ আশায় নরকময় সময় পার করেছেন স্বজনরা।
এর আগে বিকেল ৫টা ২৩ মিনিটে আর্মি স্টেডিয়ামে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিহতদের জানাজা শেষ হয়। জানাজা পরিচালনা করেন সেনা বাহিনীর কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম মাওলানা মো. মাহমুদুল হক।
সোমবার বিকেল ৩টা ৫৫ মিনিটে নিহত ২৩ বাংলাদেশির মরদেহ নিয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি কার্গো বিমান। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ১ নম্বর ভিভিআইপি টারমাক-১ এ অবতরণ করে লাশবাহী ৬১-২৬৪০ নম্বর বিমানটি।
আনুষ্ঠানিকভাবে নেপাল থেকে আসা মরদেহ গ্রহণ করেন সড়ক, পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তার সঙ্গে ছিলেন বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী শাহজাহান কামাল।
নিহত ২৩ জন হলেন- আঁখি মনি, বেগম নুরুন্নাহার, শারমিন আক্তার, নাজিয়া আফরিন, এফএইচ প্রিয়ক, উম্মে সালমা, বিলকিস আরা, আখতারা বেগম, মো. রকিবুল হাসান, মো. হাসান ইমাম, মিনহাজ বিন নাসির, তামারা প্রিয়ন্ময়ী, মো. মতিউর রহমান, এস এম মাহমুদুর রহমান, তাহারা তানভীন শশী রেজা, অনিরুদ্ধ জামান, রফিক উজ জামান, পাইলট আবিদ সুলতান, কো-পাইলট পৃথুলা রশিদ, খাজা সাইফুল্লাহ, ফয়সাল, সানজিদা ও নুরুজ্জামান।
এছাড়া তিন বাংলাদেশির মরদেহ এখনও শনাক্ত হয়নি। তারা হলেন- নজরুল ইসলাম, পিয়াস রয় ও আলিফুজ্জামান। ডিএনএ পরীক্ষার পর তাদের মরদেহ শনাক্ত করা হবে বলে জানা গেছে।
গত ১২ মার্চ (সোমবার) ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বিএস-২১১ নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। ৬৭ যাত্রী ও চার ক্রুসহ দুপুর ২টা ২০ মিনিটে বিমানটি বিমানবন্দরের পাশের একটি ফুটবল মাঠে বিধ্বস্ত হয়। এতে ৫১ যাত্রীর প্রাণহানি ঘটে। এর মধ্যে ২৬ বাংলাদেশি নিহত ও ১০ বাংলাদেশি আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে নেপালের বিভিন্ন হাসপাতলে ভর্তি করা হয়। এরপর আহত ছয় বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত আনা হয়। রোববার বিকেলে আহত শাহিন বেপারীকে দেশে ফিরেয়ে আনা হয়। এর আগে শেহরিন আহমেদ, কামরুন্নাহার স্বর্ণা, মেহেদী হাসান, আলমুন্নাহার অ্যানি ও রাশেদ রুবায়েত দেশে ফেরেন। তারা সবাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন।
বিমানটিতে মোট ৬৭ যাত্রীর মধ্যে বাংলাদেশি ৩২ জন, নেপালি ৩৩ জন, একজন মালদ্বীপের ও একজন চীনের নাগরিক ছিলেন। তাদের মধ্যে পুরুষ যাত্রীর সংখ্যা ছিল ৩৭, নারী ২৮ ও দুজন শিশু ছিল।
এসআই/এমএইচএম/এমএএস/এমএআর/আরআইপি
আরও পড়ুন
সর্বশেষ - জাতীয়
- ১ নিউ এইজ সম্পাদককে হয়রানি, ঘটনা তদন্তের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
- ২ লেখাপড়ায় মনোযোগ দেন, প্রয়োজনে আবারও রাস্তায় নামবো
- ৩ ৩৭ বছর পর চট্টগ্রাম কমার্স কলেজে প্রকাশ্যে শিবির
- ৪ ৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি এ সপ্তাহে, ক্যাডার-ননক্যাডারে পদ ৩৭০১
- ৫ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ, ওষুধে ব্যয় ২০ শতাংশ