মনে হচ্ছিল আমি যেন একেবারে চলে যাচ্ছি
সানজিদা হক, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)- এর কেন্দ্রীয় সহকারী সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করেন প্রায় এক যুগ ধরে। গত সপ্তাহের ১১ তারিখে ছুটি নিয়েছিলেন। ছুটিতে যাওয়ার আগে খুব উদ্বিগ্ন ছিলেন তার অনুপস্থিতিতে কে চালাবে কাজকর্ম? ছুটির আগের দিন মোহাম্মদপুর অফিস থেকে প্রতিদিনের মতোই বের হচ্ছিলেন। অফিসের সহকর্মীদের আচরণ কেমন যেন মনে হচ্ছিল তাঁর কাছে।
রাতে যখন টেলিফোনে কথা হচ্ছিল সহকর্মী সুজনের কেন্দ্রীয় প্রধান সমন্বয়ক দিলীপ কুমার সরকারের সঙ্গে। তখন সানজিদা তাকে বলেছিলেন, ‘আমি যখন অফিস থেকে বের হই, তখন সবাই আমার সঙ্গে কেমন যেন করছিল দাদা। মনে হচ্ছিল, আমি যেন একেবারে চলে যাচ্ছি।’ ২০০৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে বিগত বছরগুলোতে অন্য কোনো চাকরি খোঁজেননি সানজিদা হক। স্বামী রফিকুজ্জামান এক সময় বিডি নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমে কর্মরত ছিলেন। পরে প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি এনজিও করেছিলেন। একমাত্র ছেলে অনিরুদ্ধ পড়ালেখা করত রাজধানীর ধানমন্ডি বয়েজ স্কুলে। অনিরুদ্ধের কাছ থেকেই নেপালের গল্প শুনতে চেয়েছিলেন দিলীপ কুমার সরকার। সে গল্প আর শোনা হয়ে ওঠেনি।
বুধবার মোহাম্মদপুরে সুজনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছিল শোকাচ্ছন্ন। সানজিদাকে হারানোর বেদনা ৭২ ঘণ্টায়ও কাটিয়ে উঠতে পারেনি সহকর্মীরা। কথা বলার আগেই অশ্রু স্বজল হয়ে ওঠে দৃষ্টি। অফিসের প্রাণবন্ত ও কর্মচঞ্চল এ সহকর্মীর আকস্মিক বিদায় যেন মেনে নিতে পারছেন না সহকর্মীরা।
সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, কোনোদিন তার উচ্চকণ্ঠ শুনিনি। অত্যন্ত প্রাণবন্ত ও কর্মচঞ্চল ছিল। সানজিদা আমাদের দ্বিতীয় প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধের কাঙ্ক্ষিত সেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমৃত্যু কাজ করেছে। তিন ভাই-বোনের মধ্যে বড় সানজিদা হকের পেছনে যেন ছাড়তেই চাইছিল না শোক। দুই বছর আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মা মারা যান। দুই মাস ধরে বাবাও শয্যাশায়ী ছিলেন।
যশোরে জন্ম নেয়া সানজিদা শিক্ষাগ্রহণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আবৃত্তি সংগঠনের সঙ্গে কাজ করেছেন। কাজ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম সোসাইটির সঙ্গে। স্লোগান-৭১ এর সঙ্গে কাজ করেছেন পরিবার নিয়ে।
দীর্ঘদিন অফিস থেকে ছুটি না নিয়ে এবারের ভাবনা ছিল একটু দেশের বাইরে থেকে ঘুরে আসার। দুই সহকর্মীর নেপাল ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শুনে সেখানেই যাওয়ার মন স্থির করেন। তারপর ভুটান, থাইল্যান্ড যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল সানজিদার। বাংলাদেশ বিমানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত থাকলেও ইউ-এস বাংলার টিকেট সংগ্রহ করেছিলেন স্ব-পরিবারে নেপালে ঘুরে আসার জন্য।
সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার বলেন, যতক্ষণ অফিসে থাকত, পুরো অফিসকে সে প্রাণবন্ত করে রাখত। আমাদের পক্ষ থেকে গণমাধ্যম, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের অতিথি ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত সানজিদা।
এইউএ/ওআর/এমএস