মোবাইলটা ছাড়া কিছুই নিতে পারিনি...
রাজধানীর মিরপুর ১২ নম্বরে ইলিয়াস আলী মোল্লা বস্তির আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও স্বপ্ন পুড়ে গেছে বস্তিবাসীর। সোমবার ভোরের অগ্নিকাণ্ডে মিরপুরের এ বস্তির প্রায় ৮ হাজার ঘর পুড়ে গেছে। শুধু বস্তির ঘর-বাড়িই পুড়ে যায়নি, পড়নের কাপড় ছাড়া বাকি সবকিছু হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে তারা এখন নিঃস্ব।
সোমবার ভোর ৪টার দিকে মিরপুর ১২ নম্বরে ইলিয়াস আলী মোল্লা বস্তিতে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের মোট ২১টি ইউনিটের চেষ্টায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পর সকাল সাড়ে সাতটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে এখনো কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
ছবি: বিপ্লব দিক্ষিৎ
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিফিল ডিফেন্স অধিদফতরের ডিউটি অফিসার মাহফুজুর রহমান জানান, ভোরে আগুনের খবর পেয়ে প্রথমে ১৩টি ইউনিট কাজ শুরু করে। পরে ইউনিট সংখ্যা আরও বাড়ানো হয়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সঙ্গে আগুন নেভানোর চেষ্টা চালিয়ে যান স্থানীয়রাও।
এদিকে প্রায় ৭০ বিঘা জমির ওপর এই বস্তি এখন পুরোটাই ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। চারদিকে শুধু আহাজারি আর দিশেহারা মানুষের আর্তনাদ। নিম্ন আয়ের মানুষগুলো এখন নিঃস্ব। পুড়ে যাওয়া টিন আর লোহা-লক্কর ছাড়া কিছুই খুঁজে পাচ্ছেন না তারা।
মাদারীপুরের বাসিন্দা মুক্তা। পোশাক কারখানায় চাকরির সুবাদে চার বছর যাবত এ বস্তিতেই বসবাস করেন। আগুনে কেড়ে নিয়েছে তার সবকিছু। জাগো নিউজের ফটো সাংবাদিক বিপ্লব দিক্ষিৎ-এর সঙ্গে কথা বলছিলেন কান্না জড়িত কণ্ঠে। বলেন, ‘আমরা দুইজন (ব্যাচেলর মেয়ে) একটি রুমে থাকতাম। সকালে বাথরুমে গেলে আগুনের খবর পাই। মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পরে। মোবাইল ফোন আর পড়নের কাপড় ছাড়া কিছুই নিতে পারিনি। সব শেষ।’
ছবি: বিপ্লব দিক্ষিৎ
তিনি জানান, রুমে টিভি, খাটসহ একটি সংসারের প্রায় সবই ছিল। এখন লোহা আর পুড়ে যাওয়া ছাই ছাড়া কিছুই নেই।
মাদারীপুরের আরও এক পরিবার থাকতেন তার পাশের বাড়িতেই। সেই পরিবারের বড় বউ হাসিনা বেগম বলেন, ‘শ্বশুর-শাশুরিসহ ৬ জন থাকতাম। আমার শ্বশুর এখানে ২০-২২ বছর ধরে থাকেন। কত দিনের সংসার। আমরা সবাই এক সাথে থাকতাম। এখন সব শেষ।’
আগুনের খবর পেলেন কিভাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শ্বশুর ফুটপাতে দোকান দেন। তিনিই প্রথম টের পান। এছাড়া চারদিকে চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায়। আমাদের সব শেষ হয়ে গেল। এখন কী করব জানি না।’
ছবি: বিপ্লব দিক্ষিৎ
আগুনে নিঃস্ব হয়ে গেছেন গোপালগঞ্জের বাসিন্দা আব্দুর রব ও মাফিয়াও। পাশাপাশি ঘরেই থাকতেন তারা। কথা বলার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন মাফিয়া। বলেন, ‘কিছু নাই, সব পুড়ে গেছে। কিছু কাপড় বের করতে পারলেও বাকি সব শেষ।’
পুড়ে যাওয়া ট্রাঙ্ক খুলে দেখছিলেন গোপালগঞ্জের ছাবিনা। সদ্য বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। বলেন, ‘কী আর বলবো, সব শেষ হয়ে গেল! কয়েকদিন আগেই স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় এসেছি। গতকালই এক বস্তা চাল কিনেছিলাম, সারা মাস খাব বলে। সব পুড়ে গেছে।’
শুধু মাফিয়া, আব্দুর রব বা মুক্তা নন। পুড়ে যাওয়া প্রায় ৮ হাজার ঘরের বস্তিবাসীই এখন প্রায় নিঃস্ব। পুড়ে যাওয়া ঘরের টিন আর লোহার আংটা ছাড়া কিছুই নেই। চারদিন তাকালে শুধু পুড়ে যাওয়া ধ্বংসাবশেষ।
আরএস/জেআইএম