সামরিক শক্তিতে মিয়ানমারের চেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ
নিজ দেশ মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশের আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়াও দু’দেশের সীমান্তে জিরো লাইনের ওপর কয়েক হাজার রোহিঙ্গা অনেকদিন ধরে আটকে আছেন। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ সীমান্তে কিছুদিন আগে মিয়ানমার সেনা সমাবেশ করার পর পতাকা বৈঠক করে দুই দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী।
বৈঠকে বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে সেনা সরিয়ে নিতে বলে মিয়ানমারকে। সেখানে গত বৃহস্পতিবার থেকে মিয়ানমারের সেনা তৎপরতা বৃদ্ধি পায় বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। আতঙ্কগ্রস্ত বলেও জানান তারা। তবে প্রতিবেশী দেশ দুটি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার কোনো আশঙ্কা নেই বলে বলছেন বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
এ অবস্থায় দু’দেশের সামরিক শক্তি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সামরিক শক্তির পূর্ণাঙ্গ চিত্র আগে পাওয়া যায়নি। তবে গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার সম্প্রতি বিশ্বের ১৩৩টি দেশের সামরিক শক্তির যে তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে দেশ দুটির শক্তির একটি ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, মিয়ানমারের তুলনায় জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ বেশ এগিয়ে থাকলেও সামরিক দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে। বিশ্বে সামরিক শক্তিতে মিয়ানমারের অবস্থান ৩১তম, বাংলাদেশের অবস্থান সেখানে ৫৭।
তবে তাদের এই তালিকায় শুধুমাত্র সামরিক লোকসংখ্যা, অস্ত্র, যানবাহনের মতো বিষয়ই বিবেচনায় আসেনি - এর সঙ্গে যোগ হয়েছে জনসংখ্যা, ভৌগলিক অবস্থান, শিল্প, কর্মক্ষমতার মতো নানা বিষয়।
দুই দেশের মধ্যে সামরিক শক্তির প্রধান পার্থক্যগুলো কোথায়?
সৈন্য সংখ্যা:
এই ইনডেক্স অনুযায়ী, বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীতে নিয়মিত মোট কর্মীর সংখ্যা এক লাখ ৬০ হাজার, অন্যদিকে মিয়ানমারের বাহিনীতে রয়েছে চার লাখ ছয় হাজার। বাংলাদেশের সংরক্ষিত বাহিনীতে রয়েছে ৬৫ হাজার কর্মী, মিয়ানমারের রয়েছে এক লাখ ১০ হাজার।
প্রতিরক্ষা বাজেট:
বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাজেট যেখানে ১৫৯ কোটি মার্কিন ডলার, সেখানে মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা বাজেট ২৪০ কোটি ডলার।
এয়ারক্রাফট:
বাংলাদেশের মোট এয়ারক্রাফট রয়েছে ১৬৬টি আর মিয়ানমারের রয়েছে ২৪৯টি। বাংলাদেশের যুদ্ধবিমান ৪৫টি আর মিয়ানমারের রয়েছে ৫৬টি। অ্যাটাক এয়ারক্রাফট রয়েছে বাংলাদেশের ৪৫টি আর মিয়ানমারের ৭৭টি। এছাড়া বাংলাদেশের হেলিকপ্টার রয়েছে ৬১টি আর মিয়ানমারের রয়েছে ৮৬টি। বাংলাদেশের কোন অ্যাটাক হেলিকপ্টার না থাকলেও মিয়ানমারের রয়েছে ৯টি।
সামরিক যান:
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর মোট ট্যাংক রয়েছে ৫৩৪টি। অন্যদিকে মিয়ানমারের রয়েছে ৫৯২টি। সাঁজোয়া যান বাংলাদেশের রয়েছে ৯৪২টি আর মিয়ানমারের রয়েছে ১৩৫৮টি।
আর্টিলারি:
বাংলাদেশের রয়েছে ১৮টি স্বয়ংক্রিয় আর্টিলারি গান এবং ৩২টি রকেট প্রজেক্টর। মিয়ানমারের রয়েছে ১০৮টি স্বয়ংক্রিয় আর্টিলারি আর একই পরিমাণ রকেট প্রজেক্টর।
নৌযান:
যেখানে মিয়ানমারের ন্যাভাল অ্যাসেট রয়েছে ১৫৫টি, সেখানে বাংলাদেশের এমন সরঞ্জামের সংখ্যা ৮৯।
দুই দেশের কারোই বিমানবাহী রণতরী কিংবা ডেস্ট্রয়ার নেই। প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশের সাবমেরিন নেই বলা হলেও কিছুদিন আগে অবশ্য বাংলাদেশ দুটি সাবমেরিন কিনেছে।
ফ্রিগেটের সংখ্যায় বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে। মিয়ানমারের পাঁচটি থাকলেও বাংলাদেশের রয়েছে ৬টি ফ্রিগেট। এছাড়া মাইন ওয়রফেয়ার ক্রাফট এবং বাণিজ্যিক নৌযানের দিক থেকে মিয়ানমারের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী, সামরিক দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। এরপরেই রয়েছে রাশিয়া, চীন ও ভারত। শীর্ষ ১০দেশের মধ্যে আরও রয়েছে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, জাপান, তুরস্ক, জার্মানি আর মিশর।
আরএস/আরআইপি