কোথাও সংকট কোথাও যানজট, চরম ভোগান্তিতে নগরবাসী
সকাল থেকেই যানবাহনের জন্য যাত্রী সাধারণের হাহাকার। বেলা গড়াতেই রাজধানীতের অনেক স্থানে বদলেছে সে চিত্র। মিছিল, শোডাউন আর রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ঢলে তৈরি করেছে প্রচণ্ড যানজট। কার্যত অচল হয়ে পড়েছে রাজধানী।
কোথাও কোথাও পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সড়কের সংযোগ সড়কগুলো বেরিকেট দিয়ে বন্ধ রাখতে দেখা গেছে। যে কারণে সড়কের স্থবিরতা গিয়ে ঠেকেছে অলিগলিতেও।
আজ (বুধবার) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে আওয়ামী লীগের জনসভা। সমাবেশ ঘিরে বেলা ১১টার পর থেকে শোডাউন আর মিছিল নিয়ে নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সমাবেশে যেতে দেখা যায় আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের।
রাজধানীর রমনা, তেজগাঁও, হাতিরঝিল, মগবাজার ও ফার্মগেইট এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সামনে মিছিলের কারণে সড়কে আটকে থাকতে দেখায় যানবাহন। যে কারণে সড়কে সৃষ্টি হয়েছে যানজট। বিপাকে পড়েছে বিভিন্ন গন্তব্যের মানুষ।
এদিকে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট দুর্ভোগ মেনে নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
অন্যদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক-উত্তর) মোসলেহ উদ্দিন আহমদ জানান, সমাবেশের কারণে রাস্তায় মানুষের সংখ্যা বেশি। একের পর এক মিছিল আসছে। বড় সড়কগুলোতে বেশি সমস্যা হচ্ছে। যান চলাচল নির্বিঘ্ন করতে আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।
বুধবার দুপুর ১২টার দিকে রমনা এলাকায় এলাকায় দেখা যায়, যানজটে আটকে আছে গাড়ি। হাতিরঝিল থেকে মগবাজার পেরিয়ে তা ঠেকেছে কাকরাইল মোড় অবধি। দলীয় নেতাকর্মীদের ছোট-বড় মিছিল, কোথাও কোথাও ট্রাকে করে মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পথে যেতে দেখা যায়।
কারওয়ান বাজার, পান্থপথের সড়কে গণপরিবহন তুলনামূলক কম থাকলেও মিছিলের কারণে আটকে সড়কে নামা যানবাহনগুলো। কোথাও ধীর গতি।
অন্যদিকে রাজধানীর কল্যাণপুর, গাবতলী, শ্যামলী ও কলেজগেইট এলাকায় দেখা যায়, গণপরিবহন কম থাকায় অপেক্ষায় সাধারণ যাত্রীরা। অনককে বাধ্য হয়ে সিএনজি, উবার কিংবা পাঠাওয়ের মতো রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের সহযোগিতায় গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। ভুক্তভোগী যাত্রীরা বলছেন, পরিবহন ও শ্রমিক-চালকদের সমাবেশে নিয়ে যাওয়ায় সংকট আরও বেড়েছে।
মাসুম নামে এক গণমাধ্যমকর্মী জাগো নিউজকে বলেন, অফিসিয়াল কাজে ৩ বার তাকে কারওয়ানবাজার থেকে মিরপুর ও গাবতলীতে যেতে হয়েছে। দ্রুতচলাচলের সুবিধা নেই। রাস্তায় নেই গণপরিবহন। যাও বা আছে তাতে প্রতিযোগিতা করে উঠতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে পাঠাও সার্ভিসের মাধ্যমে সকাল থেকে এ পর্যন্ত ৮শ’ টাকা খরচা করে চলাচল করতে হয়েছে।
সাইফুল ইসলাম নামে অপর যাত্রী বলেন, আজ আমার হাইকোর্টে মামলার হাজিরা। গাজীপুর থেকে এসেছি। মহাখালী থেকে গাড়ীর গতি যায় কমে। সকাল ১১টায় পৌঁছার কথা থাকলেও সম্ভব হয়নি। ২ ঘণ্টা দেরিতে সর্বোচ্চ আদালত চত্বরে পৌঁছান তিনি।
কলেজগেট থেকে ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালে যাবেন ইদ্রিস আলী। কিন্তু যানবাহন না পেয়ে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে রওয়ানা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘ঐতিহাসিক দিনে ঐতিহাসিক ভোগান্তিতে পড়েছি। যানবাহন নেই। মিছিরের পর মিছিল। বাসে মিছিল, ট্রাকেও মিছিল। বাধ্য হয়ে হেঁটেই যাচ্ছি।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের স্মৃতি-বিজড়িত ৭ মার্চ উপলক্ষে দেশব্যাপী ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে রয়েছে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা।
জনসভায় যোগ দিতে সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা দলটির নেতাকর্মীরা উদ্যানে জড়ো হতে থাকে। উদ্যানের প্রায় সব গেটেই দেখা যায় দীর্ঘ লাইন। এছাড়া ঢাকার আশেপাশের জেলাগুলো থেকেও ট্রাকে-বাসে করে জনসভায় লোকজন আসতে দেখা যায়।
এতে করে কোথাও যানবাহন সংকট আবার কোথাও যানজটের ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী।
জেইউ/এমবিআর/জেআইএম