পাটজাত পণ্যের বাহারি সমাহার
‘সোনালী আশেঁর সোনার দেশ, পাট পণ্যের বাংলাদেশ’ - এই প্রতিপাদ্যের প্রতিফলন ঘটেছে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রাঙ্গণে। এখানে চলছে পাটজাত পণ্যের মেলা। পরিবেশবান্ধব সব পাটজাত পণ্য নিয়ে উদ্যোক্তারা হাজির হয়েছেন। মেলায় ৭৫টি স্টলে ১১২টি প্রতিষ্ঠান তাদের তৈরি করা পাটজাত পণ্য প্রদর্শন করছেন চলছে বেচা-কেনাও।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রাঙ্গণে গতকাল (৬ মার্চ) শুরু হওয়া এই মেলা চলবে ৮ মার্চ পর্যন্ত। বাহারি সব রং আর ডিজাইনের তাক লাগানো পাটপণ্য দিয়ে সাজানো স্টলগুলোতে ছিল ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। স্টলে স্টলে ঘুরে পাটের তৈরি জিনিসপত্র দেখছেন দর্শনার্থীরা। সেইসঙ্গে পছন্দের পণ্যটি সংগ্রহে ব্যস্ত ছিলেন তারা।
এখানে এসে অনেকেই রীতিমতো অবাক হয়ে বলেছেন, পাট দিয়ে এতো সুন্দর, ফ্যাশানেবল জিনিস তৈরি সম্ভব? আবার অনেকে বলছেন, পাটের তৈরি পণ্য এতোটা নিখুঁত এবং সুন্দর হয় তা তাদের অজানা ছিল।
কী নেই সেখানে? শো-পিস, শপিং ব্যাগ, হ্যান্ড ব্যাগ, পর্দা, টেবিল ম্যাট, ফ্লোর ম্যাট, মেয়েদের গহনা, সেন্ডেল, বেড কভার, কুশন কভার, সোফা কভার, পর্দা, টেবিল ম্যাট, কার্পেট, ডোরম্যাট, শতরঞ্জি, পরিধেয় ব্লেজার, ফতুয়া, কটি, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহারযোগ্য বহুবিধ এমন পাটপণ্য সামগ্রী দেখতে স্টলগুলোতে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। বাহারি এসব পণ্য দেখে মুগদ্ধ হয়েছেন অনেকেই, আবার দেশীয় পণ্যের এমন সম্ভারকে স্বাগতও জানিয়েছেন তারা।
ভিন্ন ধারার এসব পণ্যে ক্রেতার আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে মেলার স্টলগুলোতে ঘুরে ঘুরে পণ্য দেখছিলেন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুবর্ণা আক্তার। পাটজাত এসব পণ্য বিষয় নিয়ে আলাপ হয় তার সঙ্গে।
তিনি বলেন, পাটজাত পণ্য বর্তমানে ফ্যাশনে রূপ নিয়েছে। আর পাটজাত পণ্যের এমন মেলার কথা শুনে বান্ধবীরা মিলে ঘুরতে এসেছি। কিন্তু এখানে এসে তো চোখ কপালে উঠেছে। আমাদের আগে ধারণাই ছিল না পাটজাত এত পণ্য হতে পারে আর এসব দেখতে অসম্ভব রকমের সুন্দর। তাই ঘুরে ঘুরে অনেকগুলো জিনিস কিনেছি। এর মধ্যে ব্যাগ, শো-পিস, স্লিপার, পর্দা, টেবিলম্যাট কিনেছি। এত্ত পণ্য আর দামও নাগালের মধ্যে থাকায় অনেকেই এসব কিনছে। আমরা আগামীকাল আবার আসবো আরও জিনিস কিনতে।
দ্যা সোর্স স্টলের পাটের ফ্যাশানেবল ব্যাগসহ নানা পণ্য বিক্রি করছেন সারাবান তহুরা। তিনি জানালেন, বাঙালি ফ্যাশনে বৈচিত্র্য আনতে দিনদিন বাড়ছে পাটজাত পণ্যের চাহিদা। পাট দিয়ে কত ধরনের পণ্য তৈরি হতে পারে সেটি তুলে ধরা হচ্ছে এই মেলায়। দৃষ্টিনন্দন নানা ধরনের পণ্য প্রদর্শনী হচ্ছে এখানে। আমাদের মেলায় আসার কারণ মূলত প্রচারণা। আমাদের এসব পণ্য বিদেশে যায় বেশি।
তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশেও এসব পণ্যের প্রচুর ক্রেতা তৈরি হচ্ছে। আর এই জিনিসগুলো ফ্যাশানেবল হওয়ার কারণে তরুণ প্রজন্মের ক্রেতার সংখ্যা বাড়ছে। এটার যদি সঠিক প্রচারণা হয় তাহলে পাটজাত পণ্য চাহিদা এবং সম্ভাবনা আরও সৃষ্টি হবে। মেলায় আসা দর্শনার্থীদের মধ্যে এসব পণ্য নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ আছে। তারা আসছেন, ঘুরে ঘুরে দেখছেন। পছন্দের পণ্যটি কিনেও নিচ্ছেন। তবে তুলনামূলক বিক্রি কম হলেও ক্রেতাদের আগ্রহ আগের তুলনায় বেড়েছে।
মেলায় স্বপ্ন কুঠি, শ্যামল বাংলা, কে ফ্যাশন, গোল্ডেন জুট, সোনালী, বেঙ্গল জুট, নারী, বাংলা মার্ট, রংপুর ক্রাফট, এ কে হ্যান্ডিক্রাফট স্টলগুলো ঘুরে দেখা গেছে, পাটের ব্যাগ ৩০০ থেকে ১০০০ টাকা, পার্স ১৫০-৬০০ টাকা, জুতা-স্লিপার ২৫০ থেকে ৮০০ টাকা, ডোর বেল ১০০থেকে ৪০০ টাকা, টেবিল-ফ্লোর ম্যাট, কার্পেট ২৫০ থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন দামে মেয়েদের বাহারি গহনা, শো-পিস,জুতা, হোম এক্সোসরিজ, দোলনা বিক্রি হচ্ছে।
এএস/এমবিআর/পিআর