বিমানবন্দরে মশার উপদ্রব, ফ্লাইটেও অতিষ্ঠ যাত্রীরা
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মশার উপদ্রব কোনোভাবেই কমানো যাচ্ছে না। মশার তীব্র কামড় ও যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ শাহজালালের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ এ বন্দর ব্যবহারকারী যাত্রীরা। প্রতিদিন নিধন অভিযান চালিয়েও মশার উপদ্রব কমানো যাচ্ছে না।
বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবনে কিছুটা কম হলেও রানওয়ে, এপ্রোন এরিয়া পুরোদমে মশার দখলে। প্রতিদিন দু’বেলা করে ওষুধ ছিটিয়েও কমানো যাচ্ছে না মশার উপদ্রব। পরিস্থিতি যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। শাহজালাল বিমানবন্দর ঘিরে আন্তর্জাতিকমানের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হলেও মশার কাছে হার মানতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে! বিমানবন্দর সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সহযোগিতায় মশক নিধনে চলছে নিয়মিত অভিযান।
বেসরকারি বিমান সংস্থার এক বৈমানিক মশার উপদ্রব প্রসঙ্গে বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে অনেক কিছুই রফতানি হয়। এর মধ্যে মশাও একটা। প্লেন নিয়ে উড়াল দেই। এর সঙ্গে যায় অসংখ্য মশা। শাহজালাল বিমানবন্দরের মতো দুনিয়ার কোথাও এতো মশা আপনি পাবেন না। বিমানযাত্রায় এখন আর সেই আরাম নেই। মশার জ্বালায় অতিষ্ঠ বিমানযাত্রীরাও।’
বিমানবন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, শাহজালালের বিস্তীর্ণ এলাকা, জলাশয়ের নোংরা পানি ও ঝোপঝাড়ের কারণে মশার উপদ্রব কমছে না। এগুলো পরিষ্কার রাখার কোনো উদ্যোগও নেই বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের। প্রজননের উর্বর ক্ষেত্র হওয়ায় দিন দিন মশার উপদ্রব বাড়ছে।
মশার প্রজনন বন্ধে এসব স্থানের ওপর কর্তৃপক্ষের বিশেষ নজর দেয়া উচিত বলে মনে করেন তারা।
বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ-বেবিচক কর্মকর্তা ও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কাজী ইকবাল করিম এ প্রসঙ্গে জাগো নিউজকে বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধানের সঙ্গে কথা বলেছি, বৈঠক করেছি। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি বিমানবন্দরকে মশকমুক্ত করতে।
‘বিমানবন্দরের টার্মিনালগুলোতে কোনো মশা নেই। তবে টার্মিনাল ভবনের বাইরের বিস্তীর্ণ খোলা প্রান্তর, জলাশয় ও ঝোপঝাড় মশার উন্নতমানের আবাসস্থল। এসব স্থান থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে মশার আগমন ঘটছে। আমরা ওইসব স্থানগুলো চিহ্নিত করে কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছি।’
‘বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে বিমানবন্দরে এখন মশার উপদ্রব তুলনামূলক কম’- এমন দাবি করে ইকবাল করিম আরও বলেন, ‘মশা অনেক কমেছে, সামনে আরও কমবে। আশা করছি, আগামী পাঁচ-ছয়দিনের মধ্যে বিমানবন্দরকে মশকমুক্ত করা সম্ভব হবে।’
ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাকির হাসান বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণে দুভাবে কীটনাশক ছিটানো হয়। মশার লার্ভা মারতে সকালে তরল ওষুধ এবং উড়ন্ত মশা মারতে বিকেলে ফগার মেশিন দিয়ে ওষুধ ছিটানো হয়। পর্যাপ্তসংখ্যক মশকনিধনকর্মী কাজ করে যাচ্ছেন। আশা করছি শিগগিরই ভালো ফল আসবে।
বিমানকর্মীরা জানান, বিমানবন্দরে বোর্ডিংব্রিজ, এপ্রোন এরিয়া ও তৎসংলগ্ন এলাকায় এয়ারক্রাফ্টের দরজা খুলতে দেরি তো মশাদের ঢুকতে দেরি হয় না। ঝাঁকে ঝাঁকে মশা প্রবেশ করে। কয়েকদিন আগেও মশার অত্যাচারে প্রায় দেড় ঘণ্টা আটকে যায় মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট।
জানা গেছে, মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের ওই ফ্লাইট ঢাকা ত্যাগের উদ্দেশে শাহজালালের রানওয়েতে প্রস্তুত ছিল। ওড়ার জন্য রানওয়ে ধরে কয়েক ফিট এগিয়েও যায় বিমানটি। এ সময় বিমানের ভেতরে অসংখ্য মশা ঢুকে পড়ে উপদ্রব শুরু করে। মশার কামড়ে যাত্রীরা চেঁচামেচি ও হট্টগোল শুরু করেন। মশার কামড়ে নিস্তার মেলেনি পাইলটেরও। বাধ্য হয়ে পাইলট তৎক্ষণাৎ ফ্লাইটটি থামিয়ে দেন। পরবর্তী সময় বিমানের ভেতরে থাকা মশা তাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। দেড় ঘণ্টা পর ওই ফ্লাইট শাহজালাল বিমানবন্দর ত্যাগ করে।
আরএম/এমএআর/আরআইপি