ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

মশা নিধনে অর্ধেক মেশিনই নষ্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৭:৫৫ পিএম, ০৫ মার্চ ২০১৮

মশায় অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী। কিছুদিন ধরে রাজধানীর প্রায় সব এলাকাতেই বেড়েছে মশা। মশার উপদ্রব থেকে নগরবাসীদের রক্ষা করতে মশা নিধনের নানা পদক্ষেপ নিয়েছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু মশা নিধনে দুই সিটি কর্পোরেশনের নেই পর্যাপ্ত জনবল ও মেশিন। মশা নিধনে যে মেশিনগুলো রয়েছে এর অর্ধেকই আবার অচল। ফলে মশা নিধনে অনেকটাই হিমশিম খাচ্ছে দুই সিটি কর্পোরেশন।

লোকবল সংকটের কথা দুই সিটির কর্মকর্তারা স্বীকার করে বলছেন, দুই সিটিতেই মশক নিধনকর্মী বাড়ানো দরকার। সেইসঙ্গে মশা নিধনে ওষুধের মাত্রা বাড়াতে হবে।

অপরদিকে ঢাকার অনেক এলাকা আছে যেখানকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধনকর্মীদের দেখা তারা পান না। তাই মশক নিধনকর্মীদের ওপর যথাযথ মনিটরিং করতে হবে, যাতে তারা ঠিকমতো কাজ করছে কি-না তা জানতে পারে কর্তৃপক্ষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে (ডিএসসিসি) মশা নিধনের ওষুধ ছিটানোর ৯৪০টি মেশিন রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে হস্তচালিত ফগার, হুইল ব্যারো মেশিন। তবে অর্ধেক মেশিনই প্রায় অচল। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে (ডিএনসিসি) হস্তচালিত ফগার, হুইল ব্যারো, ভ্যাহিক্যাল মাউন্টেড ফগার মিলিয়ে মশা নিধনের মেশিন রয়েছে ৬৫৩টি। এর মধ্যেও প্রায় অর্ধেক নষ্ট। আর দুই সিটির প্রতিটি ওয়ার্ডে মশক নিধনকর্মী রয়েছেন পাঁচজন করে।

যদিও মশা নিধন কার্যক্রমের জন্য ডিএসসিসিতে এ অর্থবছরে ২৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে। আর ডিএনসিসিতে এ অর্থবছরে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসসিসির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, নগরীর দক্ষিণের প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রতিদিন মশার ওষুধ ছিটানোর জন্য পাঁচ থেকে ছয়জন করে কর্মী নিযুক্ত আছেন। তারা দিনে দু-বার ওষুধ ছিটানোর কাজ করেন। কিন্তু মশা মারার জন্য আমাদের অনেক মেশিনই নষ্ট হয়ে আছে। তাই পর্যাপ্ত মশক নিধনকর্মী, প্রয়োজনীয় মেশিন এবং ওষুধ বাড়ানো দরকার।

ডিএনসিসির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তাও নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মশক নিধনের জন্য ব্যাপক কার্যক্রম আমাদের চলছে। যে জনবল আছে তা দিয়েই আমরা চেষ্টা করছি। এত বড় এলাকায় যত সংখ্যক মশক নিধনকর্মী দরকার সেই পরিমাণ জনবল আমাদের নেই। তাই মশার উপদ্রব থেকে রাজধানীবাসীকে রক্ষা করতে আমাদের আরও মশক নিধনকর্মী দরকার।

মশক নিধনকর্মীদের দেখা পান না এলাকাবাসী

মিরপুরের কাজীপাড়ার বাসিন্দা মাসুম আহমেদ রনি বলেন, কিছুদিন ধরে মশায় অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। কয়েল, মশা মারার ব্যাট, অ্যারোসল কিছুতেই মশাকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই খবরে পড়ছি সিটি কর্পোরেশন মশা মারার জন্য এ পদক্ষেপ ওই পদক্ষেপ নিয়েছে, হটলাইন আছে, মশক নিধনে ক্রাশ প্রোগ্রাম চলছে। কিন্তু আমরা তো কোনো মশক নিধনকর্মীকে দেখি না। সচরাচর মশা মারার জন্য আমাদের এলাকায় স্প্রে করতেও দেখা যায় না। তাই স্প্রেম্যানদের ওপর যথাযথ মনিটরিং দরকার।

তবে ডিএনসিসির মশক নিধনকর্মী আলতাব হোসেন বলছেন, আমরা নিয়মিতই মশা নিধনে ওষুধ স্প্রে করি। মশা নির্মূলে স্প্রেম্যানরা ওষুধ ছিটানোর পর মশা পড়ে যায় কিন্তু কিছুক্ষণ পর আবার উড়ে যায়। হঠাৎ করেই মশা বেড়ে গেছে। মশা নিধনের জন্য যে পরিমাণ লোক প্রয়োজন দুই সিটি কর্পোরেশনে অতটা লোক নেই। সেজন্য লোকও বাড়ানো দরকার।

আরেক মশক নিধনকর্মী মোবারক মিয়া বলেন, আমরা আমাদের দায়িত্ব অনুযায়ী সব জায়গাতেই মশার ওষুধ ছিটাই। অনেকসময় মশা মরে আবার অনেক সময় উড়ে যায়। বাসাবাড়ির আঙিনা, ফুলের টব, ছাদবাগান, ভবনের চৌবাচ্চা, এসি-ফ্রিজ থেকে জমা পানিতে মশার বংশ বিস্তার বেশি ঘটে। এসব স্থানে মশক নিধনকর্মীরা যেতে পারেন না, যে কারণে মশা বাড়ছে।

মশা নিধনে দুই সিটির কার্যক্রম

ঢাকার দুই সিটির কর্মকর্তারা বলছেন, মশক নিধনের জন্য অনেক কাজ চলছে, ক্র্যাশ প্রোগ্রাম শুরু করেছে। আশা করা যায়, মশার উৎপাত খুব শিগগিরই নিয়ন্ত্রণে আসবে।

ডিএসসিসির সূত্র জানায়, ঢাকা দক্ষিণের মশা নিধনে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে দুই সপ্তাহব্যাপী বিশেষ ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চালু করেছে সিটি কর্পোরেশন। ডিএসসিসির পাঁচটি অঞ্চলের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে স্থানীয় কাউন্সিলরের নেতৃত্বে ভোর থেকে দিনভর এ ক্রাশ প্রোগ্রাম চলছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ২৭৮ জন মশক নিধনকর্মী কাজ করছেন। এতে ৩১৮টি ফগার মেশিন ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রতিদিন ১৮শ’ লিটার মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। এছাড়া এ বছর থেকে নতুন টেলিফোস নামক লার্বি সাইডিং ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা এ এস এম মামুন জানিয়েছেন, গত ১২ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া মশক নিধন ক্রাশ প্রোগ্রামের মেয়াদ ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে বাড়িয়ে ১৫ মার্চ পর্যন্ত করা হয়েছে। তবে প্রয়োজনবোধে ক্রাশ প্রোগ্রামের মেয়াদ আরও বাড়ানো হবে বলে ডিএনসিসির এক সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সাধারণত প্রতিদিন যে পরিমাণ মশার ওষুধ ছিটানো হয় ক্রাশ প্রোগ্রাম চলাকালে এর দ্বিগুণ ওষুধ ছিটানো হয়। ওষুধ ঠিকমতো ছিটানো হচ্ছে কি-না তা মনিটরিংয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে ওই সভায়।

ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাকির হাসান বলেন, আমরা মশক নিধনের জন্য আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছি। এছাড়া কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। মশক নিধনের ওষুধ-মেশিন সরবরাহ করে কার্যকর পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি। একই সঙ্গে মশক নিধনবিষয়ক পদক্ষেপ নিয়ে বিভিন্ন সোসাইটির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। আশা করি মশা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।

এএস/জেডএ/এমএস

আরও পড়ুন