‘নৌকার জয় হবে, উন্নয়নের ধারাও অব্যাহত থাকবে’
খুলনার উন্নয়নে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধশালী করতে চাই। যখনই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন, স্বাধীনতা পেয়েছেন, মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার পেয়েছেন। আপনারা দেশের উন্নয়ন পেয়েছেন।
খুলনাবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, গত নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিয়েছেন-উন্নয়ন হয়েছে। আপনারা কি উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে চান? যদি চান, তাহলে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে হবে। আপনারা বলেন, দুই হাত তুলে দেখান। ইনশাল্লাহ নৌকার জয় হবে, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে।
শনিবার বিকেলে খুলনা সার্কিট হাউস মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা তো উন্নয়নই করতে চাই। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত কি করে? আপনারা জানেন নির্বাচন ঠেকানোর নামে বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার লোভে কত মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে। তারা নিজের অফিসে বসে থেকে ঘোষণা দিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাত না করে তিনি (খালেদা জিয়া) না কী ঘরে ফিরবেন না।
তিনি বলেন, প্রায় তিন মাসের কাছাকাছি অফিসে বসে ছিলেন। উনি অফিসে বসে বিরিয়ানি খান আর মানুষ পোড়ানোর হুকুম দেন। প্রায় ৫০০ মানুষকে ওই খালেদা জিয়া আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মেরেছে। এতে আহত হয়েছে আরও প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ। তাদের জীবন-জীবিকার কোনো পথ নেই, সব পথ বন্ধ। তারা ধ্বংস করতে জানে, সৃষ্টি করতে জানে না। মানুষকে বাঁচাতে জানে না, হত্যা করতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা উন্নয়নে বিশ্বাস করি আর বিএনপি কি করে? বিএনপির কাজ ছিল সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ সৃষ্টি। মানুষ হত্যা করা, আগুনে পুড়িয়ে মারা। ওরা যখনই ক্ষমতায় ছিল, সেই জিয়ার আমল থেকে শুরু করে প্রতিবার মানুষ হত্যা ছাড়া আর কিছুই করেনি।
তিনি বলেন, বিএনপির সময় এ খুলনা ছিল সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের অভয়ারণ্য। প্রতিদিন খুন, প্রতি মুহূর্তে মায়ের কোল খালি হতো। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কঠোর হস্তে জঙ্গি দমন করা হয়েছে। খুলনা এখন শান্তির নগরী।
‘এখানে যেন আর কোনো ধরনের সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেজন্যে সবার সহযোগিতা কামনা করি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা শান্তি চাই, দেশের উন্নতি চাই। দেশের কল্যাণ চাই। আওয়ামী লীগ জনগণের সেবা করে, জনগণের কাজ করে। আমরা দেশকে নিয়ে যেতে চাই উন্নয়নের পথে। দেশের মানুষ ভিক্ষা করে চলবে না, নিজের পায়ে দাঁড়াবে। দেশের মানুষ সুন্দরভাবে জীবন-যাপন করবে। আমরা সেটাই দেখতে চাই, সেটাই করতে চাই। আমরা আরও উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। ২০৪১ সালের মধ্যে এ দেশ হবে উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করছি।
তিনি বলেন, অপরাধী যে-ই হোক তাকে শাস্তি পেতেই হবে। আজকে খালেদা জিয়া দুর্নীতি করেছে, আদালত রায় দিয়েছে। সেই রায়ে সে কারাগারে। এখানে আওয়ামী লীগের কিছু করার নেই। দুর্নীতি করলে শাস্তি পেতেই হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালে নির্বাচনের আগে এসেছিলাম, ওয়াদা করেছিলাম খুলনার সার্বিক উন্নয়নের দায়িত্ব নেয়ার। আজকে আপনারা দেখেছেন, আমি ১০০টি প্রকল্প যার মধ্যে ৪৮টি উদ্বোধন ও ৫২ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে দিয়েছি। যে সমস্ত বন্ধ কল-কারখানা ছিল, সেগুলো চালু করেছি। যাতে করে উৎপাদন বাড়ে। ওই জুট মিল থেকে শুরু করে বিভিন্ন কল-কারখানায় উৎপাদন শুরু হয়েছে। শুধু তাই না, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রাস্তা-ঘাট, পুল-ব্রিজ নির্মাণসহ বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যা ওয়াদা দিয়েছিলাম এর বাইরেও যে সমস্ত কাজ জনগণের জন্য কল্যাণকর সেগুলো করেছি। আমাদের লক্ষ্য উন্নয়ন। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, আপনারা জানেন ওই মংলাবন্দর বন্ধ করে দিয়েছিল। খালেদা জিয়া খুলনায় বক্তৃতা দিয়েছিল ক্ষমতায় গেলে সব কল-কারখানা চালু করবে। কিন্তু সব বন্ধ করেছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বন্ধ কল-কারখানা, মংলাবন্দর চালু, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করেছে। মংলাবন্দর পর্যন্ত যেন রেল লাইন যায়, পদ্মা সেতু থেকে শুরু করে যশোর-বাগেরহাট হয়ে মংলাবন্দর পর্যন্ত রেল লাইন যাবে সে প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছি।
খুলনাবাসীর উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, একটা সুখবর দিতে চাই। ভোলায় অনেক গ্যাস পাওয়া গেছে। আমরা পরিকল্পনা নিচ্ছি সেই গ্যাস পাইপলাইনে করে বরিশাল এবং খুলনায় যাতে আসে তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
কেউ কুঁড়েঘরে থাকবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা মানুষও গৃহহারা থাকবে না। প্রত্যেকটা মানুষের ঘর-বাড়ি তৈরি করে দেয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি। আশ্রায়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় দেড় লাখ মানুষকে ঘর করে দিয়েছি। জাতির পিতা গুচ্ছগ্রাম শুরু করেছিলেন। আমরা বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে এ ঘরবাড়ি করে দিয়েছি। এ দেশে কেউ কুঁড়েঘরে থাকবে না, নিদেন পক্ষে একটা টিনের ঘর হলেও করে দেয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি।
তিনি বলেন, আমাদের যুব সমাজকে লেখাপড়া শেখাতে ভোকেশনাল ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা, বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। কর্মসংস্থান ব্যাংক করেছি। বিনা জামানতে দুই লাখ টাকা যে কোনো যুবক নিতে পারবে। সেটা দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে, সঙ্গে আরও লোকদের কাজ দিতে পারবে সে ব্যবস্থা করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা বিদেশে যাবে ঘরবাড়ি, ভিটেমাটি আর বিক্রি করতে হবে না। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বিদেশে যেতে পারবে সে ব্যবস্থা করেছি।
তিনি বলেন, দেশের কৃষক যেন ফসলের ন্যায্যমূল্য পায় তার ব্যবস্থা করেছি। সারের দাম বার বার কমিয়েছি। কৃষকদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে সার, বীজের পাশাপাশি কৃষক ১০ টাকায় যেন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি। সে সঙ্গে দুই কোটি কৃষককে কৃষি উপকরণ কার্ড দিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক ঘরে ঘরে আমরা আলো জ্বালতে চাই। ইনশাল্লাহ ২০২১ সালের মধ্যে আমরা সব ঘরে আলো জ্বালবো। প্রায় ১৪২টা সামাজিক উন্নয়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের ছেলে মেয়েরা পড়াশোনা করে। তাদের বই কিনতে হয় না। বই কেনার দায়িত্ব আমি নিয়েছি। প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত বই কিনে দিচ্ছি। ১ জানুয়ারি বই উৎসব হয়। আমরা ৩৫ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ১৬২ খানা বই বিনা পয়সায় শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিয়েছি। এ জন্য অভিভাবকদের একটা টাকাও খরচ করতে হয় না। সে ব্যবস্থা করে দিয়েছি।
পূর্বে রূপসা আর উত্তরে ভৈরব নদীর উপকণ্ঠের শহর খুলনা। পাট, কাগজ, হার্ডবোর্ড শিল্প পেরিয়ে মৎস্য উৎপাদনের খ্যাতি অর্জন করেছে এ নগরী। রূপসা-ভৈরবের উচ্ছ্বসিত জলের স্রোতের মতো মানুষের স্রোতের মোহনায় পরিণত হয়েছে খুলনা সার্কিট হাউস মাঠ।
শহরের পিচঢালা পথ প্লাবিত হয়েছে জনস্রোতে। এ জনস্রোত আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে বরণ করে নিতে। জলের নৌকা উঠে এসেছে পথের তোরণে। ঢাক ঢোলের বাদ্যে নৃত্য করছে রূপালী এ শহর।
খুলনা সার্কিট হাউস মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় শনিবার বিকেলে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে খুলনাবাসীকে একঝাঁক উন্নয়ন প্রকল্প উপহার হিসেবে তুলে দেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।
শেখ হাসিনার এ আগমনকে ঘিরে মিছিলের নগরীতে পরিণত হয় বিভাগীয় শহর খুলনা। শনিবার সকাল ১০টা থেকে ‘শেখ হাসিনার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’ স্লোগানে প্রকম্পিত হতে থাকে সুন্দরবনের এ প্রবেশ মুখ।
পথের মোড়ে মোড়ে লাগানো হয়েছে এলইডি পর্দা। প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সরাসরি প্রচার করা হয় সে পর্দায়।
খুলনা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি হারুনুর রশীদের সভাপতিত্বে বেলা ১টায় শুরু হওয়া জনসভা পরিচালনা করেন দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এস এম কামাল হোসেন।
নারীর ক্ষমতায়ন ও আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সামনে রেখে জনসভাস্থল কানায় কানায় পূর্ণ করে তোলেন নদী ঘেরা এ শহরের নারীরা। ফাগুনের খরতাপ উপেক্ষা করেও পায়ে হেঁটে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে জনসভায় আসেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, দীপু মণি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য বেগম মুন্নিজান সুফিয়ান, রিয়াজুল কবির কাওসার। এছাড়া মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম কৃক, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আকতার প্রমুখও বক্তব্য দেন।
উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, অর্থ উপদেষ্টা মশিউর রহমান, বেসরকারি উন্নয়ন খাতবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এস এম কামাল হোসেন ও খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমানের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন মৎস্য ও পানিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, বিজিএমইএ'র সাবেক সভাপতি সালাম মুর্শিদী।
এইউএ/এএইচ/আরআইপি