যাদের হৃদয়ে পাকিস্তান তাদের থেকে সাবধান
যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতাবিরোধী এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকদের বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, যাদের হৃদয় পাকিস্তানে পড়ে থাকে তাদের থেকে মানুষকে রক্ষা করতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের জন্য পাকিস্তানও কাঁদে। পাকিস্তানিদের থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করতেই হবে।
শনিবার বিকেলে রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তাদের কোনদিন ক্ষমা করবেন না। যারা মা-বোনকে ধর্ষণ করেছে, গণহত্যা চালিয়েছে, অগ্নিসংযোগ করেছে, লুটপাট করেছে; তারা যুদ্ধাপরাধী। যাদের বিচারের রায় আমরা কার্যকর করেছি। যারা এদের মন্ত্রী বানিয়েছিল, আমার লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত পতাকা তাদের হাতে যারা তুলে দিয়েছিল, তাদের ব্যাপারে জাতিকে সচেতন থাকতে হবে। জাতির কাছে আজকের দিনে এটাই আমার আবেদন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা সময় দেখেছি অনেকেই নিজে মুক্তিযোদ্ধা তা বলার সাহস পেতেন না। সরকারি চাকরি পাবার জন্য তিনি যে মুক্তিযোদ্ধা কথাটা লিখতে সাহস পেতেন না, কারণ তাহলে চাকরি পাবে না। কি দুর্ভাগ্য আমাদের, ’৭৫ এ জাতির পিতাকে হারাবার পর এই অবস্থা বাংলাদেশে সৃষ্টি হয়েছিল। তখন ছিল রাজাকারদের দাপট। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার পর অন্ততপক্ষে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে আজকে মানুষ গর্ববোধ করে।
তিনি বলেন, এই আত্মবিশ্বাসটা যেন হারিয়ে না যায়। আবার আমাদের সেই অন্ধকারের দিকে যেন যেতে না হয়। সেই পরিবেশ যেন ভবিষ্যতে আর কোনেদিন বাংলার মাটিতে না আসে। সে ব্যাপারে আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাতৃভাষার চর্চাটা থাকতে হবে। এটা অপরিহার্য বলে মনে করি। ভাষা শহীদরা রক্তের অক্ষরে মাতৃভাষার মর্যাদা দিয়ে গেছেন। আমরা সেটা শিখব না কেন? আমরা বলব না বা চর্চা করব না কেন?
উচ্চ আদালতে ইংরেজি ব্যবহার বিষয়ে তিনি বলেন, উচ্চ আদালতের রায় ইংরেজিতে লেখা হয়। আমাদের দেশের অনেক সাধারণ মানুষ আছে যারা ইংরেজি বোঝেন না। উকিল যা বোঝায় তাকে সেটাই বুঝতে হয়। রায়ে কি লেখা আছে সেটা বোঝার অধিকার সাধারণ মানুষের আছে। প্রয়োজনে রায় অনুবাদ করা যেতে পারে। এখন নিম্ন আদালতে বাংলা ভাষায় রায় লেখা শুরু হয়েছে। আশা করি, উচ্চ আদালতেও এটা হবে।
তিনি বলেন, অনেকেই বাংলা ভাষা ইংরেজি টোনে বলেন। সেটা কেন আমি জানি না। এই বিকৃতি থাকবে কেন? অন্য ভাষা শেখার বিপক্ষে কিন্তু আমরা না। ইংরেজি একটা আন্তর্জাতিক ভাষার মাধ্যম হয়ে গেছে। বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে গেলে আমাকে অন্য ভাষা শিখতেই হবে। তবে অন্য ভাষা না শিখলে আমরা উন্নত হতে পারব না; এটা আমি বিশ্বাস করি না।
শেখ হাসিনা বলেন, সাইনবোর্ডগুলোও ইংরেজিতে লেখা হয়। অন্য ভাষা দিতে চাইলে দিক। কিন্তু মাতৃভাষাটা তো বড় করে লিখবে। অন্য ভাষাটা ছোট করে লিখবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য পড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষার উন্নয়নে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। সেখানে বাংলা ভাষা শেখার ব্যবস্থা থাকবে না কেন? অবশ্যই থাকতে হবে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য পড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। তথ্য-প্রযুক্তির এ যুগে অন্য ভাষাও শিখতে হবে। তবে সবার আগে ভালোভাবে বাংলা ভাষা শেখাটা জরুরি।
এ সময় দাওয়াতপত্রে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, প্রত্যেকটা বিয়ের কার্ড হয় ইংরেজি ভাষায়। আমি ঠিক জানি না কেন হয়। বিয়ের দাওয়াতের কার্ড ইংরেজিতে লিখতে হবে কেন? এর সঙ্গে কোনো মর্যাদার বিষয় আছে কি-না, সেটাও আমি বুঝি না। এটা ব্যাপকভাবে একটা ব্যাধির মতো ছড়িয়ে গেছে। আমরা বাংলা ভাষায় কোনো দাওয়াতের কার্ড লিখতে পারি না কেন? এটা আমিও বুঝি না।
এইউএ/এমআরএম