গ্রাহক হয়রানি : অভিযোগের শীর্ষে গ্রামীণফোন
গ্রাহক সেবার নামে নানাভাবে প্রতারণা ও হয়রানি করছে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো। ভোক্তাকে না জানিয়ে অ্যাকাউন্ট থেকে ব্যালেন্স কেটে রাখা, ইন্টারনেট সেবার কারচুপি, কাস্টমার কেয়ারে সেবা না পাওয়াসহ বিভিন্ন অফার নিয়ে প্রতারণার শিকার হয়ে প্রতিদিন প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন গ্রাহকরা।
গত সাত মাসে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর বিরুদ্ধে করা গ্রাহক অভিযোগের শীর্ষে রয়েছে গ্রামীণফোন। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অধিদফতর জানায়, ২০১৭ সালের ১ জুন থেকে চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অধিদফতরে বেসরকারি মোবাইল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ, রবি, বাংলালিংক, এয়ারটেল ছাড়াও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান টেলিটকের বিরুদ্ধে মোট ৭৫৯টি লিখিত অভিযোগ করেন গ্রাহকরা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে। বিভিন্নভাবে সেবার নামে প্রতারিত হয়ে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ২১৩টি অভিযোগ করেন গ্রাহকরা।
অভিযোগ আনা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রবি অজিয়াটা লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ পড়েছে ২০১টি। সম্প্রতি তাদের সঙ্গে একীভূত হওয়া অপারেটর এয়ারটেলের বিরুদ্ধে রয়েছে ১৫৯টি অভিযোগ। এছাড়া বাংলালিংকের বিরুদ্ধে জমা পড়েছে ১৪৮টি এবং টেলিটকের বিরুদ্ধে ৩৮টি অভিযোগ।
গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে অধিদফতরে প্রতারণার অভিযোগ করেন স্বপ্নীল চক্রবর্তী নামে এক গ্রাহক। লিখিত অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, ১৭১ টাকা দিয়ে চার জিবি ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনেছিলেন তিনি। যার মেয়াদ ছিল সাতদিন। গত ২৪ জুলাই প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হয়। মেয়াদ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল ব্যালেন্স থেকে ৬১ টাকা কেটে নেয়া হয়। তাকে নতুনভাবে ইন্টারনেট প্যাকেজ কেনার জন্য মেসেজ দেয়া হয়নি।
প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর জানানো হয়, ইন্টারনেট কেনার জন্য এ চার্জ কাটা হয়েছে। অথচ তিনি কোনো প্যাকেজ কেনাকাটা করেননি। এ রকম শত শত অভিযোগ রয়েছে গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম লস্কর বলেন, ‘দেশের সব মোবাইল ফোন অপারেটরের বিরুদ্ধে ভোক্তারা প্রতারিত কিংবা হয়রানির শিকার হয়ে অধিদফতরে অভিযোগ করছেন। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে অভিযোগ সবচেয়ে বেশি। কিন্তু একটি মোবাইল সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠান উচ্চ আদালতে রিট করায় গত বছরের ২৮ মে’র পর থেকে অধিদফতর এ সংক্রান্ত অভিযোগের নিষ্পত্তি করতে পারছে না।’
‘রিটের কারণে অপারেটরগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছি না। আইনি জটিলতা দূর হলে গ্রাহকের অভিযোগের ভিত্তিতে অপারেটরগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাবে’- যোগ করেন তিনি।
তবে মোবাইল সেবা ছাড়া অন্য সব ভোক্তাপর্যায়ে অভিযোগের বিষয়ে অধিদফতরের কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন শফিকুল ইসলাম।
এ বিষয়ে গ্রামীণফোনের এক্সটার্নাল কমিউনিকেশন্সের প্রধান সৈয়দ তালাত কামাল বলেন, গ্রাহকদের বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ থাকতে পারে এবং তারা এর সমাধানের জন্য বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করতে পারেন। গ্রামীণফোন গ্রাহকের অভিযোগ সবসময় গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে থাকে। এর মাধ্যমে সেবার মানোন্নয়ন অব্যাহত রাখা যায়।
‘গ্রামীণফোন ক্রমাগতভাবে গ্রাহকদের মানসম্পন্ন সেবা প্রদানে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে ২০১৭ সালে গ্রাহক অভিযোগ ৭৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে’- যোগ করেন তিনি।
এসআই/জেএইচ/এমএআর/পিআর