ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

এক ঘণ্টায় নিঃস্ব তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৫:১৩ পিএম, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

‘কিচ্ছু নাই, সব পুড়ে শেষ, একটা ভাত খাওয়ার প্লেটও বের করতে পারিনি। ১০ বছর ধরে একটু একটু করে গোছানো সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কী খামু, কই থাকমু সবই এখন অনিশ্চিত।’ বিলাপ করে কথাগুলো বলছিলেন আরজু বেগম। ছেলে-মেয়েকে মানুষ করার স্বপ্ন নিয়ে রাজধানীর মিরপুরের ভাষাণটেক বস্তিতে ১০ বছর ধরে বসবাস করছিলেন তিনি।

একটি বিভীষিকা রাত, এক ঘণ্টার আগুন, তার সব স্বপ্ন পুড়ে ছাই করে দিয়েছে। এখন তিনি নিঃস্ব। খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। আরজু বেগমের মতো এমন নিঃস্ব হয়েছেন অসংখ্য মানুষ।

মঙ্গলবার দুপুরে সেই বস্তিতে গিয়ে দেখা গেছে, পরিবার নিয়ে জীবন নির্বাহের শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে কেঁদে বিলাপ করছেন সব হারানো মানুষেরা। কেউ কেউ বস্তি সংলগ্ন দোকানগুলোর পুড়ে যাওয়া কাঠ বের করছেন। যাদের ঘর পুড়েছে তারা খোলা আকাশের নিচে বসে আছেন। কেউবা তাদের ঘরে অবশিষ্ট কিছু আছে কি-না তা খুঁজে দেখছেন। পুড়ে যাওয়া সবকিছু পরিষ্কার করার চেষ্টা করছেন।

fire

রাজধানীর মিরপুরের ভাষাণটেক বস্তিতে রোববার রাত সোয়া ১২টার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ অগ্নিকাণ্ডে বস্তি সংলগ্ন ১৫টির বেশি কাঠের দোকান, বস্তিতে সাতটি থাকার ঘর ও একটি এতিমখানা পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়ে গেছে।

আগুন লাগার সময় লুঙ্গি-গামছা পরে জান নিয়ে বের হয়ছি আর কিছুই বের করতে পারিনি জানিয়ে বস্তির আরেক বাসিন্দা মোহম্মাদ সবুজ বলেন, বাচ্চারা ঘরে ঘুমাচ্ছিল, শুধু তাদের কোলে নিয়ে লুঙ্গি গামছা নিয়ে বের হয়ছি, ঘরের কোনো মালামাল বের করতে পারিনি। সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সম্বল বলতে আমার আর কিছুই নেই।

বস্তি সংলগ্ন কাঠের দোকানি দ্বীন ইসলামের হাত-পা আর মুখের কিছু অংশ পুড়ে গেছে। তিনি বলেন, দোকানের পেছনেই বস্তিতে ঘর আমার। আগুনে পুড়ে যাওয়ার সময় আমার দোকানে ব্যবসার দুই লাখ টাকা ছিল কিন্তু এক টাকাও বের করতে পারিনি। টাকার সঙ্গে আমার স্বপ্নগুলোও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ঘরে বউ-বাচ্চা ঘুমাচ্ছিল। আগুনের সময় ছুটে গিয়ে তাদের বের করেছি। তাই দোকানের মালামাল, টাকা, ঘরের জিনিসপত্র কিছুই বের করতে পারিনি।

fire

শুধু দ্বীন ইসলামই নন এমন ব্যবসায়ী বস্তির বাসিন্দা আবুল কালাম, আব্দুর রাজ্জাক, মনোয়ারা বেগম, সোহাগ, শুক্কুর আলীরা বিলাপ করে তাদের সবকিছু হারানোর গল্প শোনাচ্ছিলেন। তারা বলছেন, তাদের আর কিছুই নেই। এখন তারা কী করবে, কী খাবে, কোথায় থাকবে? কিছুই তারা জানেন না। সব হারিয়ে আজ নিঃস্ব তারা।

শুধু তাদের ঘর, দোকানই নয় পুড়ে ছাই হয়ে গেছে সেখানের টিন-কাঠের তৈরি একটি এতিমখানাও। বস্তিবাসীদের ধারণা, বৈদ্যুতিক ত্রুটি থেকে আগুন লাগতে পারে।

ক্ষতিগ্রস্ত বস্তিবাসী ও দোকানিদের খোঁজ-খবর নিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্যানেল মেয়র ওসমান গণি। আগুনে পুড়া বস্তি মঙ্গলবার পরিদর্শনে গিয়ে তিনি বলেন, আপনারা ধৈর্য ধরেন। আপনাদের সব পুড়ে গেছে জেনেই খোঁজ-খবর নিতে এসেছি। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের মাধ্যেমে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হয়েছে। ডিএনসিসির মাধ্যেমে যেভাবে হোক আপনাদের কিছুটা ক্ষতিপূরণ দেয়ার চেষ্টা করা হবে।

এএস/জেডএ/আইআই

আরও পড়ুন