মাদক ব্যবসায়ীদের অস্থিরতায় রাখার কৌশল অধিদফতরের
‘এই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের যে কাঠামো ও জনবল তা দিয়ে মাদক নির্মূল করা সম্ভব নয়। তবে মাদকের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর হুশিয়ারি দিয়েছেন। অভিযান পরিচালনার নির্দেশনাও দিয়েছেন। আমরা সাড়াশি অভিযান শুরু করেছি। আমাদের কৌশল হচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীদের আমরা দাঁড়াতে দেব না। তাদের অস্থিরতায় রাখতে চাই। এজন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।’
সাড়াশি অভিযানের প্রথম দিনে ১৭ মাদক ব্যবসায়ীসহ ৩৬ জনকে আটকের পর শুক্রবার দুপুরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মহাপরিচালক (ডিজি) মো. জামাল উদ্দীন আহমেদ।
জামাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় রাজধানীসহ সারাদেশে সাড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে। স্পটে গিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা ধরে ধরে অভিযান চালানো হচ্ছে। আমাদের বিশেষ অভিযান চলবে তিন দিন। বিশেষ অভিযানের প্রথম দিনে রাজধানী কমলাপুর রেলস্টেশন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, চানখারপুল, গেন্ডারিয়া, টিটিপাড়া, খিলগাঁও, দক্ষিণ বনশ্রী, পুরানা পল্টন, ভাটারা, মতিঝিলসহ ২০টি পৃথক স্থানে অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযানে ১৯৬৫ পিস ইয়াবা, গাঁজা ২.৬৬ কেজি, বিয়ার ও ফেনসিডিল ১০ বোতল, বিলাতি মদ ৭ বোতল, ৮ রাউন্ড গুলিসহ একটি পিস্তল ও নগদ সাড়ে ৩ হাজার টাকা জব্দসহ মোট ৩৬ জনকে আটক করা হয়। এদের মধ্যে ১৭ জন মাদক ব্যবসায়ী।
বাকিরা সবাই মাদকাসক্ত। এদের মধ্যে শিশু ১০ জনও বাকিরা প্রাপ্তবয়স্ক। তাদের সবাইকে কেন্দ্রীয় মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, নারায়ণগঞ্জেও আমাদের অভিযান পরিচালিত হয়। সেখানে ইয়াবা তৈরির কারখানা মিলেছে। এখান থেকে এক নারীকে আমরা আটক করেছি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে সোপর্দ করবো।
মাদকের ব্যাপারে সব সময় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে। মাদক নির্মুলে আপনাদের সক্ষমতা আসলে কেমন জানতে চাইলে ডিজি জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের যে কাঠামো, যে পরিমাণ জনবল তাতে আমাদের একার পক্ষে মাদক নির্মূল করা সম্ভব নয়। এটাই বাস্তবতা। তবে সমন্বিত চেষ্টায় আমরা মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছি। সবাই মিলে চেষ্টা করলে মাদক নির্মূল সম্ভব।’
জিডি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অবস্থা সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, সারাদেশে আমাদের জনবলের সংখ্যা ১৭০৬ জন। এদের মধ্যে ১১৯১ জন একটিং রয়েছে। আবার এই সংখ্যার মধ্যে অপারেশনাল কর্মকর্তা আরও কম। যানবাহন আরও কম। মাত্র ৫১টি। অস্ত্রধারী মাদকসেবী কিংবা মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চালানের মতো অবস্থা নেই। কারণ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অপারেশনাল কর্মকর্তার কারো অস্ত্র নেই। অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতিও নেই। এমতাবস্থায় অভিযান পরিচালনা করাটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সময় এসেছি বিষয়টি নিয়ে ভাবার। মাদকের বিরুদ্ধেশক্ত অবস্থান নিতে গেলে অভিযানে অংশ নেয়া কর্মকর্তাদের অস্ত্র থাকাটা জরুরি।
আমরা ৮ হাজার ৫০৫ জন জনবল চেয়েছি। যানবাহন চেয়েছি আরও ৫০টি। আশা করছি দ্রুত সময়ে মধ্যে এসব পেয়ে যাব। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় আন্তরিক। এসব পেলে মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার অবস্থান জানান দিতে পারবো। একটি মাদকদ্রব্য মাঠে থাকতেও আমরা অভিযান চালিয়ে যাব।
জেইউ/এমবিআর/এমএস