জাতিসংঘে বাংলা চাই
ভাষা দিয়ে সাম্রাজ্যবাদের বুকে যে আঘাত হানা যায়, তা প্রমাণ করেছে বাঙালি জাতি। একটি ভাষা পুঁজির আগ্রাসী নীতির মূলে যে শেল হয়ে বিঁধতে পারে, তাও বাঙালির সৃষ্টি। ভাষার প্রশ্নেই একটি জাতিসত্তার পত্তন হতে পারে, তা-ও বিশ্ব দেখেছে। মায়ের ভাষার অধিকার রক্ষার্থে বুকের রক্ত ঢেলে পৃথিবীর সব ভাষাকে মর্যাদা আর সম্মানে আসীন করেছে বাঙালিই।
বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস-সংগ্রামের মূলে ছিল ভাষা-সংস্কৃতিও, যার চূড়ান্ত রূপ মেলে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে, যে আন্দোলনে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের ভিত মজবুত হতে থাকে। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগানটিই রূপ নেয় 'জয় বাংলা' স্লোগান- এ। আর এ 'জয় বাংলা' স্লোগানই গুঁড়িয়ে দেয় পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের দ্বৈত নীতি।
ভাষার জন্য রক্ত, আর রক্তের বিনিময়ে একটি রাষ্ট্রের পত্তন! ভাষা দিয়ে আন্দোলন, আন্দোলনেই মিলেছে স্বাধীনতা। আর নজিরবিহীন এমন আন্দোলনের স্বীকৃতিও দিয়েছে বিশ্ব। বিশ্ব সংস্থা ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর বাংলা ভাষা আন্দোলনের মর্যাদা একুশে ফেব্রুয়ারিকে প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
সময়ের ব্যবধানে বাংলা ভাষা পুষ্ট হয়েছে। পূর্ণতা পেয়েছে বাংলা ভাষা-সংস্কৃতির ইতিহাসও।
সাহিত্যে নোবেল, চলচ্চিত্রে অস্কার, অনলাইনে-অফলাইনে সর্বত্র বাংলা এগিয়েছে অনেক। বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, আন্দামান দ্বীপপুঞ্জসহ সারা বিশ্বে ৩০ কোটিরও বেশি মানুষ বাংলায় কথা বলে। ভাষা ব্যবহারে জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলা বিশ্বে সপ্তম। আফ্রিকার দেশ সিয়েরালিওনে দ্বিতীয় দাফতরিক ভাষা বাংলা।
বাঙালি জাতির স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘের অধিবেশনে বাংলায় বক্তব্য দিয়ে বাংলাকে বিশ্ব পরিচয়ে অনন্য করেছেন। বাংলা ভাষার এমন গৌরবময় ইতিহাসের পথ ধরেই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিলেছে, মিলেছে প্রেরণাও। আর এ প্রেরণা থেকেই দাবি উঠেছে ‘জাতিসংঘে বাংলা চাই’।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা হিসেবে বাংলাকে স্বীকৃতি দেয়ার দাবিতে একাধিকবার প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদেও এ বিষয়ে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। এমনকি পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভায়ও এ বিষয়ে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।
জাতিসংঘের ছয়টি দাফতরিক ভাষা ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, স্প্যানিশ, মান্দারিন, রুশ ও আরবির সঙ্গে এবার বাংলাকে সপ্তম দাফতরিক ভাষা হিসেবে গ্রহণ করার দাবি এখন সর্বত্রই। এ দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে কর্মসূচি চালাবে দেশের শীর্ষ অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগো নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম।
বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের বাইরে থেকে যে কোনো ব্যক্তি তার নাম এবং ই-মেইল অথবা মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে আবেদন (দাবির প্রতি একাত্মতা) করতে পারবেন। কর্মসূচি শেষে জাতিসংঘের মহাসচিব বরারব আবেদন (পিটিশন) পৌঁছে দেয়া হবে। মাসব্যাপী এই কর্মসূচিতে সহায়তা করছে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ‘প্রাণ’।
এএসএস/ওআর/এসএইচএস/এমএস