ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

ভিন্ন এক কমলাপুর

আবু সালেহ সায়াদাত | প্রকাশিত: ০৯:৫০ এএম, ২৯ জানুয়ারি ২০১৮

নেই টিকিট কাউন্টারে মানুষের ভিড়, প্ল্যাটফর্মগুলোও ফাঁকা। ব্যাগ, লাগেজ নিয়ে ট্রেন ধরতে মানুষের ছোটাছুটি নেই। ভিড় নেই ট্রেনযোগে রাজধানীতে পৌঁছানো মানুষের। অনকটাই স্তব্ধ, নিরব কমলাপুর। এ যেন ভিন্ন এক কমলাপুর।

ভোর থেকে শুরু করে রাত অবধি কর্মব্যস্ত মানুষের ছুটে চলা, টিকিটের জন্য দীর্ঘ লাইন, পুরো প্ল্যাটর্ফম জুড়ে মানুষে গিজিগিজি কমলাপুর স্টেশনে এমন দৃশ্যেই সচারচর চোখে পড়ে সবার। কিন্তু রাত যত গভীর হতে থাকে ততই পাল্টাতে থাকে কমলাপুর রেলস্টেশনের চিত্র।

komlapur

তখন মধ্যরাত। সব ট্রেন চলে গেছে, কমলাপুরে পৌঁছানোও শেষ সব ট্রেনের। টিকিট কাউন্টার ও স্টেশনের দোকানগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে বেশ আগেই। মানুষের লাইন আছে কিন্তু সে লাইনে কোনো ট্রেনের টিকিটের জন্য লাইন নয়। এ লাইন মানুষের ঘুমের লাইন। শুয়ে থাকা সারি। টিকিট কাউন্টারের সামনে ফাঁকা জায়গায় মানুষের আরামের ঘুম।

টিকেট কাউন্টারের সামনে থেকে শুরু হয়েছে ঘুমানো মানুষের লাইন। স্টেশন ছাপিয়ে পার্কিং এলাকায় গিয়ে ঠেকেছে ঘুমন্ত মানুষের এই লাইন। যাদের বেশির ভাগই ফুটপাতের বাসিন্দা, ছিন্নমূল ভবঘুরে মানুষ। তবে তাদের সঙ্গে আবার অল্প সংখ্যক যাত্রীও সামিল হয়েছেন। তারাও ঘুমাচ্ছেন নিজের ব্যাগে মাথা দিয়ে। এদের মধ্যে কেউ কেউ ট্রেন ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন। আবার কেউ ভোররাতে ট্রেন ধরে ঢাকা ছাড়তে আগেভাগেই হাজির হয়েছেন স্টেশনে।

komlapur

সিডিউল অনুযায়ী কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছানো শেষ ট্রেন উত্তরবঙ্গ থেকে আসা লালমনি এক্সপ্রেস আসে রাত ১২টায়। আর যদি সিডিউল বিপর্যয় ঘটে তাহলে মাঝে মাঝে সেটি পৌঁছাতে রাত ১টা, দেড়টা বেজে যায়। এরপরই ফাঁকা হতে থাকে কমলাপুর স্টেশন। বন্ধ হয়ে যায় প্ল্যাটফর্মে ঢোকার কেঁচি গেট। তখন টিকিট কাউন্টারের সামনে থাকে ছিন্নমূল, ভবঘুরে মানুষের ঘুমের লাইন। এর সঙ্গে যুক্ত হয় কিছু যাত্রীও যারা ভোর ৫টায় দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার ট্রেন ধরবেন। কারণ এর মাঝখানে কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া বা আসার আর কোনো ট্রেন নেই। সেই ট্রেন ধরতেই স্টেশনে অলস সময় কাটাতে কেউবা দলবেধে খোসগল্পে ব্যস্ত, কেউবা কার্ড (তাস) খেলে রাত পার করছেন, ভোরের ট্রেনে তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাবেন। কেউবা ইতোমধ্যেই নিজের ব্যাগে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেছেন। স্টেশনে এসব রাতজাগা মানুষের সঙ্গী হয়েছেন ফেরি করে চানাচুর, পান-সিগারেট, চা, ঝালমুড়ি বিক্রেতারাও।

আব্দুল আজিজ একজন চানাচুর বিক্রেতা। ১৫ বছর ধরে এখানে চানাচুর বিক্রি করেন তিনি। তার পরিবারের সদস্যরা থাকেন গ্রামে।

komlapur

রাত থেকে ভোর পর্যন্ত স্টেশনে চানাচুর বিক্রি করেন তিনি। আলাপকালে আব্দুল আজিজ বলেন, স্টেশনে অনেক মানুষ রাত কাটায়, দিনের কমলাপুর আর রাতের কমলাপুরের মধ্যে অনেক পার্থক্য, বলতে গেলে পুরোটাই ভিন্ন চিত্র দেখা যায় রাতে। কোনো কোলাহল বা গ্যাঞ্জাম নেই। অনেকে ঘুমায় আবার অনেকে জেগে থেকেই রাত কাটিয়ে দেয়। আর স্টেশনে থাকা এসব মানুষের কাছে চানাচুর বিক্রি করেই সংসার চলে আমার। দিনের তুলনায় রাতেই ব্যবসা ভালো হয়, তাই সারা রাত স্টেশনেই কাটাই।

komlapur

ভোর ৫টায় দেওয়ানগঞ্জের টেন ধরতে মধ্য রাতেই স্টেশনে পৌঁছেছেন পাঁচজন শ্রমিক। দিনমজুরের কাজ শেষে স্টেশনে তারা। তাদের একজন ওয়াহাব আলী। আলাপকালে তিনি বলেন, দিনমজুরের কাজ করতে ঢাকার বাহিরে গেছিলাম, সন্ধ্যার পর ঢাকায় পৌঁছাইছি। আমরা সবাই দেওয়ানগঞ্জ যাবো ভোর ৫টার ট্রেনে। তাই স্টেশনেই চলে এসেছি। এখানেই ঘুমাবো, আর ভোরের প্রথম ট্রেনে চলে যাবো।

তিনি আরও বলেন, আগে কখনও স্টেশনে রাত কাটাইনি আজই প্রথম। রাতে স্টেশনের যেমন চিত্র তা দিনের তুলনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন। কোনো কোলাহল নেই, নেই মানুষের ভিড়। রাতের কমলাপুর স্টেশন যদি কেউ না দেখে তাহলে কারও ধারণাই আসবে না যে কমলাপুর স্টেশন এত শান্ত-নীরব থাকতে পারে।

এএস/এমবিআর/জেআইএম

আরও পড়ুন