নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তাদের উপর নির্ভর সংসদ
আইন অনুযায়ী সার্বভৌম প্রতিষ্ঠান হিসেবে নয়, সংসদ সচিবালয় নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তাদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। লোভনীয় পদ হওয়ায় আইন ভঙ্গ করে প্রেষণ নির্ভর হয়ে পড়ছে সংসদ সচিবালয়। প্রেষণে নিয়োগ পাওয়া এসব কর্তাব্যক্তি সংসদ সংশ্লিষ্ট নয়।
অন্যদিকে এসব কর্মকর্তা সংসদকে কার্যকরের চেয়ে সরকারের নির্বাহী বিভাগের ইচ্ছার বাস্তবায়নে ব্যস্ত। ফলে সংসদের ইন্সষ্টিটিউশনাল মেমোরি দিন দিন কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে সংসদের স্থায়ী কর্মকর্তারা হচ্ছেন পদোন্নতি বঞ্চিত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদের প্রধান হুইপ আসম ফিরোজ রোববার টেলিফোনে জাগো নিউজকে বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ার জটিলতা এড়াতে প্রেষণে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে সংসদকে কার্যকর করতে নিজস্ব জনবল দরকার। যা এতদিন হয়ে আসেনি। কিন্তু বর্তমানে লোক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সচিবালয়ের প্রথম শ্রেণির মঞ্জুরীকৃত পদের সংখ্যা ২০৮টি। এর মধ্যে সচিবালয়ের বিভিন্ন শাখা অধিশাখায় ১৪৭ টি, ভিআইপিদের একান্ত সচিব ও সহকারী একান্ত সচিবের পদ ২৪টি এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিদের একান্ত সচিবের পদ ৩৭টি। তবে সচিবালয়ের বিভিন্ন শাখা ও অধিশাখার এবং সংসদীয় কমিটির সভাপতিদের একান্ত সচিবসহ ১৪৭ টি পদের মধ্যে মাত্র ৯৪ টি পদে লোকবল আছে। ওই ৯৪ পদের মধ্যে প্রেষণে ৪৫ জন এবং অস্বীকৃত ১১ জন আর মাত্র স্থায়ী পদে ৩৮ জন কর্মরত রয়েছেন।
গত দশ বছরে সংসদ থেকে প্রথম শ্রেণির ৩৫ জন কর্মকর্তা অবসরে গেলেও শূন্য পদে পিএসপির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বরং বিভিন্ন সময় একটি মহল প্রভাব প্রতিপত্তি খাটিয়ে প্রেষণে লোক নিয়োগ দিচ্ছে।
জানা গেছে, ১৯৯৪ সালের আইনে সংসদ সচিবালয়ে সরকারি কর্মকমিশন বা পিএসসির মাধ্যমে কর্মকর্তাদের নিয়োগ দানের বাধ্যবাধকতা করা হয়। সরকার কিংবা মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণের বাইরে স্বাধীনভাবে লোকবল নিয়োগের লক্ষ্যে এ আইন করা হলেও তা মানা হচ্ছে না। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সাবেক স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী পিএসপির মাধ্যমে লোকবল নিয়োগ বন্ধ করে দেন।
পরে রাজনৈতিক বিবেচনায় ভিআইপিদের ২২ জন প্রিভিলেইজ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আত্তীকরণের মাধ্যমে নিয়োগ দেন তিনি। ওই সময় থেকেই সংসদে পদোন্নতি বঞ্চিতদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এর ফলে সংসদ সচিবালয়ে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পদোন্নতি বঞ্চিত হন। এরপর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের স্পিকার ব্যারিষ্টার জমির উদ্দিন সরকার পিএসপির মাধ্যমে লোক নিয়োগ না দিয়ে প্রেষণে নিয়োগ অব্যাহত রাখেন। বর্তমান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীও তাই করছেন।
সংসদের একজন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, সংসদ সচিবালয়ের প্রথম শ্রেণির পদগুলো খুবই লোভনীয়। এখানে প্রেষণে আসা কর্মকর্তারা মূল বেতনের ২০ শতাংশ প্রেষণ ভাতা পান। এই নিয়ম শুধু সংসদ সচিবালয়ের প্রেষণে আসা কর্মকর্তাদের জন্য।
অন্যদিকে দলীয় পরিচয়ে প্রেষণে আসা কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময় বিদেশ ভ্রমনের সুযোগ নিয়ে থাকেন। এসব কর্মকর্তারা স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, প্রধান হুইপ, হুইপসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির একান্ত সচিব হিসেবে কাজ করায় ঘন ঘন বিদেশ সফরের যান।
এদিকে দীর্ঘদিন কাজ করার পরও স্থায়ী কর্মকর্তারা পদোন্নতি পান না। কারণ প্রেষণে থাকায় পদগুলো শূণ্য হয় না। কখনও কখনও ইচ্ছকৃতভাবে বছরের পর বছর প্রথম শ্রেণির পদগুলো শূন্য রাখা হয়।
এইচএস/এসকেডি/এমএস