দুই পর্বের ইজতেমা শেষ হচ্ছে আজ
৫৩তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাত আজ সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে শুরু হবে। আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানসংলগ্ন এলাকায় শনিবার মধ্যরাত থেকে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে গাজীপুর জেলা পুলিশ।
ইজতেমায় অংশ নেয়া মুসল্লিদের পাশাপাশি ঢাকা ও টঙ্গীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে মুসল্লিরা আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে ছুটে আসছেন। মুসল্লিদের সুবিধার্থে শনিবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে ইজতেমা মাঠসংলগ্ন ঢাকার আব্দুল্লাহপুর, কামাড়পাড়া, গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস ও মীরেরবাজ পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। মুসল্লিদের চলাচলের সুবিধার্থে ১৫টি শাটল বাস তাদের আনা-নেয়া করবে।
আজ সকাল সাড়ে ৭টা থেকে হেদায়েতি বয়ান শুরু হয়েছে। বয়ান করছেন বাংলাদেশের মাওলানা আব্দুল মতিন। প্রথম পর্বের ন্যায় এবারও আরবি এবং বাংলায় মোনাজাত পরিচালনা করবেন বাংলাদেশর কাকরাইল মসজিদের ইমাম তাবলিগের অন্যতম শুরা সদস্য হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ জুবায়ের।
বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে মুসল্লিদের টঙ্গীমুখী স্রোত অব্যাহত রয়েছে। শীত ও ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে বাস, ট্রাক, ট্রেন, নৌকা-লঞ্চসহ বিভিন্ন যানবাহনে চড়ে হাজার হাজার মুসল্লি টঙ্গীতে জমায়েত হচ্ছেন।
ইজতেমার ময়দানের বাইরে অবস্থানকারী মুসল্লি ও এলাকাবাসীকে মোনাজাতে শরিক হতে গাজীপুর ও ঢাকা জেলা তথ্য অফিসের উদ্যোগে শতাধিক মাইকের সংযোগ দেয়া হয়েছে।
গাজীপুর জেলা তথ্য কর্মকর্তা এসএম রাহাত হাসনাত জানান, ভিড়ের কারণে যারা মূল ময়দানে যেতে পারবেন না, আখেরি মোনাজাতে তাদের শরিক হতে টঙ্গীর মধুমিতা রোড, টঙ্গী বিসিক এলাকা, নোয়াগাঁও এবং চেরাগআলীর বিভিন্ন শাখা সড়কে মোনাজাতের মাইকের সঙ্গে পর্যাপ্ত মাইকের সংযোগ দেয়া হবে। একই সংখ্যক মাইক ঢাকা অংশেও সংযোগ দেয়া হবে।
বিশেষ বাস ও ট্রেন সার্ভিস
জেলা তথ্য কর্মকর্তা মো. রাহাত হাসনাত জানান, মুসল্লিদের পরিবহনের জন্য বিআরটিসির দুই শতাধিক বাস দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলাচল করবে। ইজতেমায় মুসল্লিদের জন্য জেলা পুলিশের উদ্যোগে রয়েছে ১৫টি শাটল বাস। এছাড়া মুসল্লিদের সুবিধার্থে ১৯টি বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে। সব আন্তঃনগর ট্রেন টঙ্গীতে যাত্রাবিরতি করবে।
বিদেশি মেহমান
এ পর্বেও শনিবার বিকেল পর্যন্ত নতুন করে ৯০টি দেশের প্রায় সাড়ে চার হাজার মেহমান এবং প্রথম পর্বের কিছু মেহমানসহ ইজতেমা মাঠে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার বিদেশি মেহমান অবস্থান করছেন বলে ইজতেমার আয়োজক ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়।
চিল্লাভুক্ত মুসল্লি
এ পর্বেও ইজতেমার প্যান্ডেলের উত্তর-পশ্চিমে তাশকিলের কামরা স্থাপন করা হয়েছে। বিভিন্ন খিত্তা থেকে বিভিন্ন মেয়াদে চিল্লায় অংশগ্রহণেচ্ছু মুসল্লিদের এ কামরায় আনা হচ্ছে এবং তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। পরে কাকরাইল মারকাজ মসজিদের তাবলিগ মুরুব্বিদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এলাকা ভাগ করে তাদের দেশের বিভিন্ন এলাকায় দাওয়াতি কাজে পাঠানো হবে।
জেলা প্রশাসকের বক্তব্য
গাজীপুর জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর বলেন, আজ আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে দু’পর্বের ৫৩তম বিশ্ব ইজতেমা। এরই মধ্যে দেশের নির্ধারিত ১৬ জেলার মুসল্লিরা ময়দানে অবস্থান নিয়ে ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল রয়েছেন। আগত মুসল্লিদের কাছ থেকে দোকানিরা যাতে অতিরিক্ত টাকা আদায় করতে না পারে সেজন্য নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। এছাড়াও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিদিন ১০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছে। তারা বিভিন্ন খাবারের দোকানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও খাবারের গুণগত মান যাচাই করে কোনো সমস্যা পেলে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ইজতেমা ময়দানের নিরাপত্তাসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য ৭৫টি সংস্থা কাজ করছে। যা সার্বিক মনিটরিং করছে গাজীপুর জেলা প্রশাসন।
আর হবে না যৌতুকবিহীন বিয়ে
টঙ্গী ইজতেমা ময়দানের জিম্মাদার শীর্ষ মুরুব্বি প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দিন জানান, প্রতিবছর যেভাবে আনুষ্ঠানিকতা পালন করে যৌতুকবিহীন বিয়ে হতো তা আর হচ্ছে না। যৌতুকবিহীন বিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার মসজিদে মসজিদে হবে বলেও জানান তিনি।
মো. আমিনুল ইসলাম/বিএ/এমএস