ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেছেন মুসল্লিরা
দেশ-বিদেশের লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণে এবারের ৫৩তম বিশ্ব ইজতেমা সফল করতে সব প্রস্তুতি শেষ। বৃহস্পতিবার ফজরের নামাজের পরপরই টঙ্গীর তুরাগ তীরে আসা শুরু করেছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। তীব্র শীত উপেক্ষা করে সওয়াব হাসিলের আশায় তাবলিগ জামাতের বড় এই আয়োজনে শুক্রবার দেশ-বিদেশের মুসল্লিরা এতে অংশ নিচ্ছেন। শুক্রবার বিশ্ব ইজতেমার ৫৩তম পর্ব শুরু হচ্ছে আম বয়ানের মধ্য দিয়ে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ট্রাক, মিনি ট্রাক, প্রাইভেটকার, বাস ও সিএনজিতে করে আসা মুসল্লিরা নামছেন তুরাগ তীরে। শীতের পোশাক, তাবু ও অতিরিক্ত খাবার নিয়ে আসছেন তারা। এ ছাড়া ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরব, মরক্কো, সুদান, মিসর, ইরাক ও ইরানসহ অন্তত ১৩৫টি দেশের মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেছেন। এসব দেশ থেকে এবার সহস্রাধিক মুসল্লি অংশ নেবেন বলে আশা আয়োজকদের।
র্যাব ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, যানজট এড়াতে এরই মধ্যে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে ট্রাফিক বিভাগ। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ইজতেমা ময়দানের সার্বিক প্রস্তুতি পরিদর্শন শেষে সন্তুষ্টি জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া প্রথম পর্বে ইজতেমায় অংশ নেবেন ১৪ জেলার মুসল্লিরা।
ইজতেমা শুরুর আগেই ভারতের তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বি দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের মাওলানা মোহাম্মদ সাদের আগমনকে কেন্দ্র করে বুধবার উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইন-শৃঙ্খ লাবাহিনী। তবে সাদ ইজতেমায় আসছেন না আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে দেয়া এমন খবরে স্বস্তি ফিরেছে মুসল্লিদের মধ্যে।
বিশ্ব ইজতেমার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান বলেন, ৫৩তম বিশ্ব ইজতেমায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত মুসল্লি এবং দেশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের নিরাপত্তায় ও সম্ভাব্য সব ধরনের হুমকি মোকাবেলায় র্যাবের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ঢাকার তুরাগ নদীর তীরে দু’দফায় এই ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। ইজতেমায় দেশ-বিদেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা যোগ দেবেন। বিশ্ব ইজতেমায় জল, স্থল ও আকাশ পথে ত্রিমাত্রিক নিরাপত্তা গ্রহণ করা হয়েছে।
একদিন আগেই ইজতেমা ময়দানে আসা আশরাফুল ইসলাম নামে এক মুসল্লি বলেন, ঈমান শক্ত করার জন্য তিনি এবারের ইজতেমায় অংশ নিচ্ছেন। দেশ বিদেশের বরেণ্য আলেম ওলামাদের বয়ান শুনবেন। আমল আকীদার শিক্ষা নেবেন।
কামারপাড়া রোডে কথা হয় মুসল্লি নেছারুল ইসলামে সাথে। তিনি বলেন, ইজতেমা ময়দানে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালের নাজাতের আশায় এসেছি। ইজতেমার মুরব্বিরা দ্বীন ও আখেরাতের নাজাতের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। ঈমান, আমল-আখলাকসহ ছয় উসুল নিয়ে আলোচনা হবে। দ্বীনের দাওয়াতের আলোচনা হবে।
বিশ্ব ইজতেমার মুরব্বি প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দিন জানান, ইতোমধ্যে ইজতেমা ময়দানের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনসহ সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপ সন্তোষজনক।
উল্লেখ্য, মুসল্লিদের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং ইজতেমা ময়দানে জায়গা কম থাকায় ২০১৬ সাল থেকে ৬৪ জেলার মুসল্লিদের ৩২ জেলা করে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। এই ৩২ জেলার মুসল্লিদের আবার ১৬ জেলা করে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রতি বছর ১৬ জেলা করে দুই ধাপে ৩২ জেলার মুসল্লিরা অংশ নেন এই বিশ্ব ইজতেমায়।
তাবলিগ জামাতের উদ্যোগে ১৪ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে প্রথম পর্ব। এবার প্রথম পর্বে অংশ নিচ্ছেন ঢাকা, পঞ্চগড়, নীলফামারী, শেরপুর, নারায়ণগঞ্জ, গাইবান্ধা, নাটোর, মাদারীপুর, লক্ষীপুর, ঝালকাঠি, ভোলা, মাগুরা ও নোয়াখালী জেলার মুসল্লিরা। এসব মুসল্লি ময়দানে তাদের জন্য নির্ধারিত ২৮টি খিত্তায় অবস্থান করবেন।
৪ দিন পর ১৯ জানুয়ারি শুরু হবে দ্বিতীয় পর্ব। ২১ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা। ১৯৬৭ সাল থেকে ১৬০ একর জমি নিয়ে ইজতেমা ময়দানে তাবলিগ জামাতের উদ্যোগে এ মহাধর্মীয় সমাবেশ হয়ে আসছে।
জেইউ/এআরএস/আরআইপি