ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

ব্রাজিলের গম আমদানিতে নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়ে আপিল

প্রকাশিত: ০৭:৩০ এএম, ১৪ জুলাই ২০১৫

ব্রাজিল থেকে গম আমদানি ও বিতরণে কোন ধরনের গাফিলতি ছিল কি না তা জানতে চেয়ে এবং গম খাওয়ার উপযোগী কি না তা নিরপেক্ষ সংস্থার অধীনে তদন্ত চেয়ে আপিল আবেদন করেছেন রিটকারী আইনজীবী।

আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হাসানের চেম্বার জজ আদালতে এই আবেদনের শুনানির জন্য আগামী ২১ জুলাই নির্ধারণ করেছেন বলে জানিয়েছেন রিটকারী আইনজীবী।

এর আগে গত ১২ জুলাই হাইকোর্টের দেয়া আদেশ স্থগিত করেছেন সুপ্রিমকোর্টের চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর আদালত। আগামী ২৬ জুলাই সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এই আপিল শুনানির জন্য রয়েছে।

১২ জুলাই আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। অপরদিকে রিটের পক্ষে ছিলন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।

৯ জুলাই আদালতে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে সংশ্লিষ্ট শাখায় রাষ্ট্রপক্ষ এই আবেদন করেন। পরে চেম্বার জজ আদালত আগামী ২৬ জুলাই এই আবেদনের ওপর শুনানির জন্য নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে আদেশ দেন। এর আগে বুধবার হাইকোর্ট একটি নির্দেশনা দেন।  এতে বলা হয়, ব্রাজিল থেকে আমদানি করা গম কাউকে নিতে বাধ্য করা যাবে না এবং কেউ ফেরত দিতে চাইলে সরকারকে তা ফেরত নিতে হবে।  

এ সংক্রান্ত রিট আবেদনের জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে এই পর্যবেক্ষণ দিয়ে বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রায় দিয়েছেন।

আমদানি করা গম খাওয়ার উপযোগী বলে খাদ্য অধিদফতরের ডিজির প্রতিবেদন দেয়ার পরে আদালত ওই আদেশ দিয়েছিল।

বুধবার আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২২ টি (টেস্ট) পরীক্ষায় পোকা-মাকড় রয়েছে বলা হয়। অপর ২৩ টি প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষায় বলা হয় টেন্ডারের নমুনা অনুযায়ী গম ব্রাজিল থেকেই আমদানি করা হয়নি। আমদানি করা দুই লাখ পাঁচ হাজার ১২৮ মেট্রিক টন গমের মধ্যে এক লাখ ৭৪ হাজার ৯২৬ মেট্রিক টন ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়।

ইতোমধ্যে পুলিশ, বিজিবি, আনসার, জেলখানা, বিভিন্ন ডিলার ও আটা কল ছাড়াও টিআর (টেস্ট রিলিফ) ও কাবিখাসহ (কাজের বিনিময়ে খাদ্য) বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিতরণ করা ওই গম কেউ ফেরত দিতে চাইলে তা ফেরত নিতেও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।  

আদেশের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস বলেন, খাদ্য অধিদফতরের জমা দেওয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আদালত বলেছেন, গম খাওয়ার উপযোগী নয়, এই কথা কোথাও বলা হয়নি। অর্থাৎ ওই গম খাওয়ার উপযোগী।

ব্রাজিল থেকে আমদানি করা ওই গম ‘নষ্ট ও পচা’ বলে পুলিশের পক্ষ থেকে আপত্তি তোলার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে আলোচনা শুরু হয়।

এর আগে গত ২৮ জুন গম আমদানির বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে গম নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে হাইকোর্টে রিট করেন অ্যাডভোকেট পাবেল মিয়া।

রিটে দুদকের মাধ্যমে তদন্ত এবং বাংলাদেশ স্টান্ডার্ড এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই) ও বাংলাদেশ এগ্রিকালচার রিসার্চ ইনস্টিটিউট’র (বারি)  মাধ্যমে গম পরীক্ষার নির্দেশনা চাওয়া হয়।

এছাড়া মানহীন গম আমদানি এবং সরবরাহ কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, বিএসটিআই ও বারির ল্যাবেরটরীতে পরীক্ষার কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না, অনিয়মের অভিযোগ কেন তদন্তের নির্দেশনা দেওয়া হবে না মর্মে রুল চাওয়া হয়।

এ বিষয়ে প্রাথমিক শুনানি করে ৩০ জুন হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেয়। ওই গম মানুষের খাওয়ার উপযোগী কি-না, সে বিষয়ে খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

আদেশ অনুযায়ী, খাদ্য অধিদপ্তরের মহা পরিচালকের পাঠানো প্রতিবেদন গত ৫ জুলাই আদালতে দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।

বাংলাদেশ শিল্প বিজ্ঞান গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর), কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার কথা উল্লেখ করে মহাপরিচালকের প্রতিবেদনে বলা হয়, আমদানি করা গমের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠায় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বিভিন্ন জেলার খাদ্য গুদাম মজুদ ওই গমের ৫৭টি নমুনা নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেটের মাধ্যমে সংগ্রহ করে খাদ্য অধিদফতরের পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হয়।

’ব্রাজিল থেকে আমদানি করা গম চুক্তিপত্রের নির্দেশ অনুসারে গ্রহণীয় সীমার মধ্যে থাকায় মানুষের খাওয়ার উপযুক্ত বলে খাদ্য অধিদফতর হতে প্রত্যায়ন করা হয়েছে।’

পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ব্রাজিল থেকে আমদানি করা গমের মান নিয়ে খাদ্য অধিদফতর থেকে আপত্তি তোলা হয়েছিল। ব্রাজিলের কৃষি মন্ত্রণালয় বা অন্য কোনো বিভাগ এর মান নিয়ে কোনো সনদ দেয়নি। বন্দরে অবস্থানকারী খাদ্য অধিদফতরের রসায়নবিদেরা এই গমের বেশ কয়েকটি চালানকে ‘বি’ ক্যাটাগরির বা মাঝারি থেকে নিম্নমানের হিসেবে চিহ্নিত করেছিল।’

‘এসব জেনেও খাদ্য অধিদফতরের তৎকালীন মহাপরিচালক সারোয়ার খান চট্টগ্রাম বন্দরে আসা ওই গমের ছাড়পত্র দেওয়ার নির্দেশ দেন। অধিদফতরের আমদানি-সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতামত, চিঠি ও পর্যালোচনা থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।’

‘এই গম আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর রেশন হিসেবে সরবরাহের পর এর মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পুলিশের সব বিভাগীয় কার্যালয় এই গমকে নিম্নমানের এবং খাওয়ার অযোগ্য হিসেবে বর্ণনা করে একাধিকবার চিঠি দেয়া হয়। তার পরও খাদ্য মন্ত্রণালয় শুরু থেকেই বারবার বলছে, এই গম অখাদ্য নয়। খাদ্যমন্ত্রী জাতীয় সংসদে দেওয়া বক্তব্যেও তা-ই বলেছেন। গত বুধবার খাদ্য মন্ত্রণালয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একই কথা বলেছে।’

এফএইচ/এসআইএস/পিআর