‘শিক্ষক হয়েও আমাদের শ্রমিকের জীবন’
‘আমি ১৭ বছর ধরে শিক্ষকতা করছি। না সরকারের কাছ থেকে কোনো বেতন-ভাতা পাচ্ছি, না পাচ্ছি স্কুল থেকে। ঘরে দুটি সন্তান, স্ত্রী। কীভাবে সংসার চলে? জীবন বাঁচাতে বাধ্য হয়ে শ্রমিকের কাজ করি। শিক্ষক হয়েও আমাদের শ্রমিকের জীবন। বেতন-ভাতা না দিলে এবার ঘরে ফিরে যাব না।’
বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এমপিওভুক্তির দাবিতে নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেয়া ঠাঁকুরগায়ের পীরগঞ্জের সিন্দাঘর আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুস সামাদ জাগো নিউজকে এসব কথা বলেন।
নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের উদ্যোগে সারাদেশ থেকে শিক্ষক-কর্মচারীরা এসে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়েছে গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
শিক্ষক আব্দুস সামাদ আরও বলেন, আমার দুটি মেয়ে। একজনের বয়স ৫ বছর, আরেকজনের বয়স ২ বছর। বালিকা বিদ্যালয়ে এমনিতেই ছাত্রীদের কাছ থেকে কোনো বেতন নেয়া হয় না। তাই স্কুলের কোনো আয় উপার্জনই নেই। তাই স্কুল থেকে কোনো টাকা পাই না আমরা। আর কতদিন বিনা বেতনে বেগার খাটব।
তিনি বলেন, ‘আমি ২৫ তারিখে ঢাকা এসেছি। তখন থেকে প্রেস ক্লাবে আছি। দাবি পূরণ না হলে আমাদের ফিরে যাওয়ার উপায় নেই।’
পাশেই পত্রিকা বিছিয়ে বসেছিলেন রাজশাহীর বাঘার ইসলামিয়া একাডেমি উচ্চ বিদ্যালয় ও কারিগরি কলেজের প্রভাষক শহীনুর নাসিম। তিনি বলেন, ‘আমার তিন বছরের একটি ছেলে, স্ত্রী ও বাবা-মা রয়েছেন। মাসে কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা খরচ। কিন্তু স্কুল কিংবা সরকার থেকে কোনো বেতন-ভাতা পাই না। আমি ২০১২ সাল থেকে শিক্ষকতা করছি। সংসার চালাতে আমের সময় আম, পাটের সময় পাট বিক্রি করি।’
শহীনুর বলেন, ‘তিন হাজার টাকা ধার করে ঢাকা এসেছি। ভাবছি কীভাবে সেই টাকা পরিশোধ করব। দেয়ালে আমাদের পিঠ ঠেকে গেছে। দাবি পূরণ হওয়া ছাড়া ঘরে ফিরে যাওয়া কোনো সুযোগ আমাদের নেই।’
বছরের পর বছর বেতন-ভাতা না পাওয়ায় অনেক শিক্ষক মানবেতর জীবন-যাপন করছেন জানিয়ে এই শিক্ষক আরও বলেন, ‘কোনো কোনো শিক্ষক সবজি বিক্রি, সিএনজি চালিয়ে ও শ্রমিকের কাজ করে জীবন ধারণ করছেন।’
বৃহস্পতিবার প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, শিক্ষকরা স্লোগান দিচ্ছেন- ‘এমপিও না নিয়ে - ঘরে ফিরে যাব না’, ‘অবিলম্বে এমপিও - দিয়ে দাও, দিতে হবে’, ‘কেউ খাবে কেউ খাবে না - তা হবে না, তা হবে না’, কেউ পাবে কেউ পাবে না - তা হবে না তা হবে না’, ‘এক দফা এক দাবি - এমপিও দিতে হবে’, ‘নন-এমপিও শিক্ষক - এক হও লড়াই কর’, ‘বেতন নিয়ে গড়ব দেশ - শেখ হাসিনার বাংলাদেশ’।
শিক্ষকরা জানিয়েছেন, সারাদেশের ৭ হাজারের বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। ৭ হাজারের বেশি নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এক লাখের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে।
আরএমএম/এমবিআর/এনএফ/জেআইএম