ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

ছোট্ট বাবা আরাফাত, ছাড়িনি তোমার আসামিকে!

ইফতেখায়রুল ইসলাম | প্রকাশিত: ০৩:০০ পিএম, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭

গত ১৮ ডিসেম্বর দয়াগঞ্জে ঘটে যায় একটি মর্মান্তিক ঘটনা। ভোরে সদরঘাট থেকে যাত্রাবাড়ীর উদ্দেশে আসতে থাকে শাহ আলম ও আকলিমা নামে এক দম্পতি। বড় ছেলের অসুখ তাই ডাক্তারের কাছে চেকআপ করাতে ঢাকায় আসা! কে জানতো তাদের এ আগমন মর্মস্পর্শী স্মৃতি হয়ে রবে জীবনে!

তাদের বহনকারী রিকশা দয়াগঞ্জ রেললাইন এলাকা অতিক্রম করার সময়, হঠাৎ কিছু বুঝে উঠার আগেই এক ছিনতাইকারী আকলিমা'র ব্যাগ ধরে হ্যাচকা টান মারে আর এতেই ভারসাম্য হারিয়ে আকলিমা তার নিজের আদরের ধন ০৫ মাসের আরাফাতসহ রিকশা থেকে পড়ে যান। গুরুতর আহত হয় আদরের সন্তান আরাফাত...! মুহূর্তেই তারা চলে যান ঢাকা মেডিকেলের উদ্দেশে!

কর্তব্যরত ডাক্তার আরাফাতকে মৃত ঘোষণা করেন। সংবাদ প্রাপ্তির পরপরই ওয়ারী বিভাগের ডিসি স্যার, এডিসি স্যার, এসিসহ সবাই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।

মা আকলিমা'র চোখের পানি আমাদের প্রত্যেক পুলিশ হৃদয়কে বিগলিত করে ফেলে মুহূর্তেই। কোনোভাবে মেনে নিতে পারছিলাম না এ ঘটনা। ঘটনার পর থেকে শুরু হয় আমাদের ঝটিকা অভিযান।

এ ঘটনায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল প্রমাণ সংগ্রহ করা। এত সকালে চাক্ষুষ সাক্ষী পাওয়া যাচ্ছিল না। ভিকটিমের বাবা মাও খুব বেশি তথ্য দিতে পারছিলেন না।

ভিকটিমের বাবা শুধু বলেছেন, তার সমান উচ্চতার, শ্যামবর্ণের, চিকন একটি ছেলে ঘটনা ঘটিয়েছে।

অন্যদিকে আকলিমা বলেছেন, আমি শুধু দেখেছি ০২টি কালো হাত! এ তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আমরা আমাদের অভিযান চালাতে থাকি। দয়াগঞ্জের নিকটেই নামাপাড়া বস্তি তাই বস্তির আশপাশ ঘিরে আমাদের তৎপরতা চলতে থাকে। সময়ে সময়ে এলাকা পরিদর্শন ও লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে বলতে আমাদের কাছে কিছু তথ্য চলে আসে, তদন্তের প্রয়োজনে সেটি খোলাসা করছি না।

প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আমরা গত রাত ১টায় এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত পাষণ্ড রাজীবকে ওয়ারী বিভাগের দয়াগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই! রাজীব একজন মাদকসেবী। আশপাশের বস্তিতেই তার বসবাস। শুধুমাত্র একটি ব্যাগের জন্য ৫ মাস বয়সী আরাফাতের জীবন নিয়ে নেয় এ পাষণ্ড।

আসামি রাজীব প্রাথমিক জবানবন্দিতে পুলিশের কাছে তার অপরাধের কথা স্বীকার করে নেয় এবং আজ ২৪ ডিসেম্বর বিজ্ঞ আদালতের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

শিশু আরাফাতকে মা আকলিমা'র কাছে ফিরিয়ে দিতে পারবো না, কিন্তু তার চোখের পানি আমাদেরও কাঁদিয়েছে। কয়েক রাত আমরা ঘুমাইনি শুধু এ পাষণ্ডকে আইনের আওতায় আনতে। ভিকটিমের বাবার ছোট্ট বর্ণনা, সিসিটিভি ফুটেজ থেকে প্রাপ্ত অংশ এবং সর্বোপরি একজন চাক্ষুষ সাক্ষী আমাদের এ অর্জনকে বেগবান করতে সহায়তা করে...কোথায় যাইনি আমরা শৌচাগার, ময়লার ড্রেন থেকে ধরে বিভিন্ন এলাকা ঘেঁষে আমরা ঘুরেছি, হেঁটেছি। এটা আমাদের দায় হলেও আমরা এ কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম ছোট্ট ফেরেশতা আরাফাতের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদনে!!

ডিসি ওয়ারী স্যারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে, এডিসি স্যারের সহায়তায়, সিনিয়র এসি ডেমরা'র নেতৃত্বে এসআই রেদোয়ান ও এসআই জনিসহ সর্বোপরি একটি পুরো টিম দিনরাত কাজ করে ওই অভিযান পরিচালনা করেন।

আরাফাত ছোট্ট বাবা আমার স্বর্গীয় পরিবেশে নিশ্চয়ই অনেক ভালো আছো!? তোমাকে হারিয়ে খুব ভালো আমরা ছিলাম না বাবা, তোমার আসামিকে ছাড়িনি বাবা। ওই পাষণ্ডের সর্বোচ্চ শাস্তি সুনিশ্চিত করেই আমরা থামবো বাবা।

এসএইচএস/আরআইপি

আরও পড়ুন