সময়টা আমার সাইক্লোনের মতো গেছে : মুবাশ্বার
নিখোঁজের দেড় মাস পর বাসায় ফিরেছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সহকারী অধ্যাপক ড. মুবাশ্বার হাসান সিজার। বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে সুস্থ দেহে রাজধানীর বনশ্রীর বাসায় ফিরেছেন তিনি। শুক্রবার সকাল ১০টায় গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এ সময় তার বাবা-মা ও বোন সঙ্গে ছিলেন।
রাজধানীর দক্ষিণ বনশ্রীর জে ব্লকের ১২/৩ সড়কের নিজ বাসায় তিনি বলেন, মিটিং শেষে ইউএনডিপি থেকে বাসায় আসার জন্য উবারের গাড়িতে উঠেছিলাম। আমার যতটুকু মনে আছে, রোকেয়া সরণিতে কয়েকজন গাড়িটা থামায়। বলে, এটা চোরাই গাড়ি আপনি নামেন। কী আর করব, নামলাম। নেমে ভাবলাম অন্য কোনো গাড়ি পাই কি না। সামনে একটা মাইক্রোবাস দাঁড়ানো ছিল। পেছন থেকে আমার চোখে মলম লাগিয়ে দেয়া হয়। পরে ধাক্কা দিয়ে গাড়িতে ওঠানো হয়।
তিনি বলেন, চোখে জ্বালা শুরু হয়। প্রথমবারের মতো আমি সেন্সলেস হলাম। এরপর আমার আর কিছু মনে নেই। পরদিন আমার ঘুম ভাঙে। মনে হলো আমি অনেক্ষণ ঘুমিয়েছি। ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি একটা কক্ষে বন্দি। পেছনে আমার হাত বাঁধা। একটা ময়লা তোশক। জানালা আছে, তবে বাইরে থেকে সিল করা। পাশে আরেকটা রুম আছে। সেখানে ৪-৫ জন কথা বলছিল। তারপর থেকে সেখানেই ছিলাম।
মুবাশ্বার বলেন, অনেক দিন পর আমি ফেরত এসেছি। তাদের মধ্যে বিভিন্ন রকম ডিসকাশন হয়েছে, শুনেছি। কোনো একটা কিছু তো ছিল।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাতে আমাকে একটি গাড়ির মধ্যে বসানো হয়। তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়েছে। এক থেকে দেড় ঘণ্টাও হতে পারে, গাড়িতে বসা একজনের কোলের মধ্যে আমাকে শুইয়ে রাখা হয়েছিল। বিমানবন্দর এলাকায় আমাকে নামিয়ে দিয়ে বলে, তুই যাগা। পেছনে ফিরে তাকালে মাইরা ফালামু।
নামার পর বিমানবন্দর এলাকা থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে বাসায় আসি। সিএনজিওয়ালার (ড্রাইভার) মোবাইল থেকে আব্বাকে ফোন দিছি। পাঁচশ’ টাকা নিয়ে আব্বাকে বাসার নিচে আসতে বলি। পরে টাকা দিয়ে বাসায় ঢুকেছি -বলেন তিনি।
অপহরণকারীরা কী ধরনের কথাবার্তা বলেছে? -জানতে চাইলে মুবাশ্বার বলেন, ‘কথা হইছে না, হইছে। আসলে উদ্দেশ্য টাকা। মূল বিষয়টি হচ্ছে ওরা বুঝি আমার প্রোফাইলটা বুঝতে পারে নাই। আমরা তো নরমাল ফ্যামিলি। আমি অপহরণ হওয়ার পর আসলে কী হয়েছিল তা জানি না। আমাকে মিডিয়া অনেক সাপোর্ট করেছে জেনেছি। অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই মিডিয়াকে।’
‘ওরা আমাকে বলেছিল, তুই তো অনেক জায়গায় কাজ করিস। তুই টাকা দে। আমার কাছে নগদ ২৭ হাজার টাকা ছিল, নিয়ে নিছে। ওইদিন আমি কোনো ক্রেডিট কার্ডও নিয়ে যাই নাই। উবারে আমার অটোমেটিক বিল পরিশোধের লিঙ্ক ছিল।’
‘এদের মধ্যে একটা বাগবিতণ্ডা ছিল, একটা বিষয় নিয়ে। আমাকে কী ছাড়বে, নাকি মারবে? কোনো একটা ব্যাপারে আমার ধারণা ওদের কোনো একজন কোনোভাবে মিসিং হইছে। আই ডোন্ট নো, বাট হ্যাপেন। দ্য হ্যাভ ভেরি স্কেয়ার্ড। মাঝখানে তারা বলেছিল, টাকা পয়সার বিষয়টা তোর পরিবার ও কোনো বন্ধু-বান্ধবীকে জানা। বা তোর কোনো টাকা পয়সাওয়ালা বন্ধু-বান্ধবী আছে কি না তারে ফোন দে। কিডন্যাপ না হলে আসলে রিয়েলাইজ করা যাবে না। আসলে বিষয়টি কতটুকু আনরিয়েল।’
এতদিন আপনাকে কোথায় কীভাবে রাখা হয়েছিল? মনে আছে আপনার? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাকে একটা ঘরে আটকে রাখা হয়। হোটেলের ঠাণ্ডা খাবার দেয়া হয়।’
কেন অপহরণ করা হয়েছিল? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওরা আসলে মুক্তিপণ চায়। একদিন পরিবারকে ফোনও করেছিল। আমার বন্ধু-বান্ধব শিক্ষক সংবাদকর্মীরা আমার জন্য অনেক কিছু করেছেন। মানববন্ধন করেছেন। এ সময়টা আমার সাইক্লোনের মতো গেছে। আমার জন্য দোয়া করবেন। আমার ফ্যামিলি নরমাল। যেন সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারি।’
একমাত্র ছেলেকে ফিরে পাওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেন মুবাশ্বারের বাবা মোতাহার হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি অনেক হ্যাপি। আমি নতুন জীবন ফেরত পেয়েছি। আমাদের একমাত্র ছেলে। বংশের একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে আমাদের বংশ নির্বংশের মতো হয়ে গিয়েছিল। আমরা সবার কাছে কৃতজ্ঞ। মিডিয়া, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সবার কাছে কৃতজ্ঞ। এটা আমাদের প্রাপ্তি। পুলিশকে জানিয়েছি আমার ছেলে ফেরত এসেছে।’
মুবাশ্বার হাসানের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বোন তামান্না বলেন, ‘তার (মুবাশ্বার) স্বাস্থ্যগত তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। যেই পোশাকে তিনি নিখোঁজ হয়েছিলেন সেই পোশাকেই ফিরে এসেছেন।’
জেইউ/আরএস/আইআই