আরএফএল’র সুরে কিসিঞ্জারকে তথ্যমন্ত্রীর আহ্বান
বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ আখ্যা দেয়া সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারকে বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান আরএফএল। এবার সেই সুরে হেনরি কিসিঞ্জাকে আহ্বান জানালেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আরএফএল’র ‘তলাবিহীন ঝুড়ি না, আমরা নতুন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্যাভিলিয়ন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ অহ্বান জানান। প্যাভিলিয়নটিতে বাংলাদেশের ৪৬ বছরের বিভিন্ন উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যের শুরুতেই ইনু বলেন, বাংলাদেশ কোথায় দাঁড়িয়েছে, তার একটি প্রদর্শনী উদ্বোধন করার জন্য আরএফএলকে ধন্যবাদ। এ দিনে এ মাঠে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ও তার দোসর রাজাকার, আলবদররা আত্মসমর্পণ করে। বাংলাদেশ হানাদারমুক্ত হয়।
তিনি বলেন, আজকে এত বছর পরে আমরা যখন পেছন ফিরে তাকাই, তখন দেখি বাংলাদেশ আরও অনেক দূর এগোতে পারত। যত দূর আগানো উচিত ছিল, তার থেকে একটু কম এগিয়েছে। এর কারণ হচ্ছে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে সামরিক শাসকরা বাংলাদেশে রাজাকার, জামায়াত যুদ্ধাপরাধীদের আমদানি এবং পুনর্বাসন।
‘যদি বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষ রোপণ না করত। তাহলে বাংলাদেশ আরও অনেক দূর এগোতে পারত। যদি সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষ বিএনপি এবং জামায়াতের নেতৃত্বে বাংলাদেশকে পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের রক্তাক্ত পথে নিয়ে যাওয়ার চক্রান্ত না হত, তাহলে বাংলাদেশ অনেক দূর এগোতে পারত। যদি বাংলাদেশে অবৈধ দখল, সমরিক অভ্যুত্থানের পর অভ্যুত্থান এবং হত্যা খুনের ঘটনা না ঘটত, তাহলে বাংলাদেশ অনেক দূর এগোতে পারত’-বলেন ইনু।
তিনি বলেন, তারপরেও সাম্প্রতিক ৮ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে সেই সাম্প্রদায়িকতার, সামরিক শাসন, হত্যা-খুনের অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে যাওয়ার যে চেষ্টা চলছে, সেই উদ্যোগে আমরা বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিতে চাই বাংলাদেশ আর তলাবিহীন ঝুড়ি না।
‘যে আমেরিকা যুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, যে হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছিল, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে স্বীকার করেনি, স্বধীনতার পরে যারা ঠাট্টা করে বলেছিল বাংলাদেশ কোনো দিনই দাঁড়াতে পারবে না, বাংলাদেশ চিরদিন তলাবিহীন ঝুড়ি থাকবে, আজ এ বিজয়ের দিনে রেসকোর্স ময়দানে দাঁড়িয়ে হেনরি কিসিঞ্জারকে আহ্বান জানাই- আসুন দেখে যান বাংলাদেশ আর তলাবিহীন ঝুড়ি না’- যোগ করেন তথ্যমন্ত্রী।
ইনু বলেন, এ বাংলাদেশে ১৬ কোটি মানুষ পেট ভরে খেতে পারে। খাদ্য উৎপাদান দ্বিগুণ হয়েছে। এই বাংলাদেশের প্রত্যেক মানুষের হাতে মোবাইল আছে। এই বাংলাদেশের ছয় কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এই বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে সমুদ্র বিজয় করেছে। এই বাংলাদেশ এই শীতেই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উপগ্রহ মহাশূন্যে নিক্ষেপ করতে যাচ্ছে।
‘এই বাংলাদেশ পদ্মা সেতু নিজের শক্তিতে এবং পয়সায় তৈরি করছে। এই বাংলাদেশে মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার কমেছে। এই বাংলাদেশে ২৫ কোটি বই বছরের শুরুতে বাচ্চাদের হাতে বিনা পয়সায় দেয়া হয়। এই বাংলাদেশে ২২ হাজারের বেশি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ডিজিটাল ল্যাবরেটরি বিনা পয়সায় তৈরি করে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ আর তলাবিহীন ঝুড়ি না। এই বাংলাদেশর মানুষ মোবাইল হাতে, কোলে ল্যাপটপ নিয়ে ঘুরে। বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রফতানিকারক দেশ,’- বলেন তথ্যমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, ‘আজকের এই বিজয়ের দিনে বলব- যদি অবৈধ ক্ষমতা দখল না হত, যদি সামরিক হস্তক্ষেপ না হত, যদি সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষ বিএনপি, খালেদা জিয়ার জন্ম না হত, যদি রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী, জঙ্গি, খুনিরা বাংলাদেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ না করত, বাংলাদেশ আরও অনেক অনেক এগিয়ে পৃথিবীর মুখ উজ্জ্বল করত।’
বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের প্রশংসা করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এত বাধার মুখেও মাশরাফি, মুশফিক, তামিমদের নেতৃত্বে পৃথিবীর খেলার চত্বরে ক্রিকেট দল দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এবং বিজয় ছিনিয়ে আনছে। সব জাগায় বাংলাদেশের বিজয় নিশান উড়ছে। আমরা আশা করি ২০২১ সালে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হবে এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হবে। ২০৩০ সালে আমরা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারব।
তিনি আরও বলেন, ‘১৯৭১ সালে আমরা রাজকারদের পরাজিত করেছিলাম, বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলাম। আসুন এবার বাংলাদেশকে শান্তির পথে নিতে রাজাকারের সঙ্গী বিএনপি এবং খালেদা জিয়াকে রাজনীতির ময়দান থেকে বিদায় জানিয়ে বাংলাদেশের বিষবৃক্ষ চিরদিনের জন্য উপড়ে ফেলি। বাংলাদেশকে শান্তির পথে, উন্নয়নের পথে, সুশাসনের পথে নিয়ে যাই।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আরএফএল প্লাস্টিকস লিমিটেডের হেড অব মার্কেটিং এস এম আরাফাতুর রহমানসহ প্রতিষ্ঠানটির অন্যান্য কর্মকর্তা।
এমএএস/জেএ/জেডএ/আরআইপি