বায়ু দূষণে ১ শতাংশ জিডিপি কমছে
উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হতে হলে বাংলাদেশকে অবশ্যই পরিবেশ দূষণ থামাতে হবে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশের পরিবেশ দূষণ নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বিশ্ব ব্যাংক বলেছে, শুধু বায়ু দূষণের নেতিবাচক প্রভাবে মোট দেশজ উৎপাদন-জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশ কমে যাচ্ছে। ‘কান্ট্রি এনভায়রনমেন্ট অ্যাসেসসমেন্ট ফর বাংলাদেশে’ শীর্ষক গবেষণার প্রাথমিক প্রতিবেদনে বিশ্ব ব্যাংকের গবেষক দল এসব তথ্য জানান।
রোববার প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে বলা হয়, অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে ঢাকা ও অন্যান্য বড় শহরগুলো বায়ু ও পানি দূষণে ধুকছে। বাংলাদেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীতের লক্ষ্য অর্জনে অবশ্যই পরিবেশের এই দূষণ থামাতে হবে।
শিল্পকারখানা পরিবেশবান্ধব না হওয়ায় এবং অপর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণে নগরীর বাতাস ও বিভিন্ন স্তরে পানি দূষিত হচ্ছে। এর উদাহরণ দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানীর আশপাশের এলাকাগুলোতে এক টন কাপড় (ফেব্রিক) প্রস্তুত করতে গিয়ে ডায়িং ও ফিনিশিং কারখানাগুলো থেকে দুইশ মেট্রিকটন বর্জ্যপানি নদীতে ফেলা হচ্ছে।
অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও অব্যাহত দূষণের কারণে বাংলাদেশের বড়-ছোট সব শহরই আক্রান্ত হচ্ছে বলে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
বায়ু দূষণ নিয়ে সতর্ক করে এতে বলা হয়, ঢাকার প্রায় ছয় লাখ বাসিন্দা, বিশেষ করে শিশুরা সীসা দূষণের (লেড কন্টামিনেশন) ঝুঁকিতে রয়েছে। এতে আইকিউ কমার পাশাপাশি স্নায়ুবিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
বাংলাদেশে বিশ্ব ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর জাহিদ হোসেন বলেন, পরিবেশের ক্ষতি করে যে প্রবৃদ্ধি হয়, তা বেশি দিন স্থায়ী হয় না। উৎপাদন না কমিয়েও সবুজায়ন ও দূষণমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়।
ওই খসড়া প্রতিবেদনে শিল্প ও অর্থনীতির চারটি বিষয়ে আলোকপাত করা হয়। পরিবেশ দূষণের ক্ষতি, শহরের জলাভূমি, পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তি এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি। আগামী বছরের শুরুর দিকে এই প্রতিবেদনের বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
বেশ কয়েকটি সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এগুলো হল-পরিবেশগত সুরক্ষা নিশ্চিত করেই দেশের নগরায়ন ও শিল্পায়ন প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া, পরিবেশ সুরক্ষার নীতিগুলো বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও নীতিগত কাঠামো জোরদার করা এবং শিল্প-কারখানাগুলোতে পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা নিশ্চিতে সরকারের প্রণোদনা দেওয়া।
ভারী বৃষ্টি হলেই শহরগুলোতে জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়ার জন্য জলাভূমি দখল ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা দুর্বলতার কথাও উঠে এসেছে প্রতিবেদনে।
এর উদাহরণ হিসেবে উত্তরের জেলা পাবনার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, ১৯৯০ সালের পর থেকে এই শহরের জলাভূমির অর্ধেকটাই হারিয়ে গেছে। এখন সেখানে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে।
নগরের সক্ষমতা ফেরাতে শহর থেকে পানি সরে যাওয়ার পথগুলোকে সক্রিয় করা এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আরও বিনিয়োগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অনেক এলাকায় কৃষি উৎপাদন কমে যাওয়ার পাশাপাশি অপুষ্টি বৃদ্ধি এবং সুপেয় পানির সহজলভ্যতা কমে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন গবেষকরা।
এমএ/এআরএস/এমএস