আনন্দ শোভাযাত্রার ব্যাপক আয়োজন
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণকে ইউনেস্কো ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় শনিবার ঢাকাসহ দেশব্যাপী হবে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা।
এই শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে সরকারি ও বেসরকারিভাবে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, তথ্য মন্ত্রণালয়, তথ্য অধিদফতর, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এই কর্মসূচি সফল করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিট্রন পুলিশ ইতোমধ্যে আনন্দ শোভাযাত্রার রুট ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের পথ নির্ধারণ করে দিয়েছে। ঢাকাসহ সারাদেশেই জেলা, উপজেলা পর্যায়ে এই আনন্দ র্যালি অনুষ্ঠিত হবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশে এ আনন্দ শোভাযাত্রা সফল করার লক্ষে ইতোমধ্যেই ব্যাপক প্রস্তুতির পাশাপাশি সর্বস্তরের জনতার মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে এ কর্মসূচি শনিবার বেলা ১২টায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে থেকে জমায়েত ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্যে দিয়ে শুরু হবে। পরে বর্ণাঢ্য র্যালিটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যাত্রা করবে। এটি কলাবাগান-সায়েন্সল্যাব হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে শেষ হওয়ার পর সভা হবে।
আনন্দ শোভাযাত্রায় সকলকে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। আনন্দ শোভাযাত্রার সার্বিক দিক তুলে ধরতে শুক্রবার সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এই আহ্বান জানান।
ঢাকার বাইরে সব জেলা ও উপজেলায়ও আনন্দ শোভাযাত্রা ও সভা হবে বলেও জানান শফিউল আলম।
তিনি বলেন, শোভাযাত্রায় মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তি, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিশু-কিশোর, ক্রীড়া সংগঠক ও খ্যাতিমান ক্রীড়াবিদ, সাংস্কৃতিক কর্মী ও সংগঠক, শিল্পকলা একাডেমি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, এনজিও, স্কাউটস ও রোভারের সদস্যরা অংশ নেবেন। এছাড়া পুলিশের সুসজ্জিত ঘোড়া, পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও ভিডিপি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুসজ্জিত বাদকদল, সুসজ্জিত ঘোড়ার গাড়ি এবং সর্বস্তরের জনগণও আনন্দ শোভাযাত্রায় থাকবেন।
ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, সংগঠন নিজ নিজ উদ্যোগে সোহরাওয়ার্দীতে মিলিত হবেন জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আনন্দ শোভাযাত্রার মাধ্যমে ঢাকা শহরকে প্রাণচাঞ্চল্য মুখর করা হবে। সকলেই প্রায় একই সময়ে বিভিন্ন স্থান থেকে রওনা হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসবেন।
সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে জেলা-উপজেলায় এই কর্মসূচি শুরু হবে বলেও জানান তিনি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সভায় বিকেল ৩টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। স্বাগত বক্তব্যের পর ৭ মার্চের ভাষণের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে ভাষণটি বাজানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পর শুরু হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। লেজার শো’র মাধ্যমে শেষ হবে আনন্দ শোভাযাত্রা পরবর্তী সভা।
ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শোভাযাত্রা সহকারে উপজেলা পর্যায়ে সকলেই মিলিত হবেন। জেলা শহরে বিভিন্ন স্থান থেকে শোভাযাত্রা নিয়ে এক জায়গায় মিলিত হয়ে অনুষ্ঠান হবে বলেও জানান শফিউল আলম।
আনন্দ শোভাযাত্রা ও সভা আয়োজন নিয়ে সবাইকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, জেলা ও উপজেলাসহ ঢাকা মহানগরে কেন্দ্রীয়ভাবে যে প্রোগ্রাম হচ্ছে তাতে সবাইকে অংশগ্রহণ করার জন্য আমরা দাওয়াত দিচ্ছি, সবাই আসতে পারেন এখানে। অংশগ্রহণ করার জন্য সবাইকে বিনীতভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।
শোভাযাত্রার রুট নির্ধারণ ডিএমপির
ঢাকা মেট্রোপলিট্রন পুলিশ (ডিএমপি) শোভাযাত্রার যে রুট নির্ধারণ করে দিয়েছে তা হলো- ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু স্মৃতি যাদুঘর থেকে আরম্ভ করে মিরপুর রোডের রাসেল স্কয়ার ক্রসিং হয়ে কলাবাগান দিয়ে সাইন্সল্যাব বামে মোড় নিয়ে বাটা সিগন্যাল-কাঁটাবন ক্রসিং হয়ে শাহবাগ দিয়ে ‘ছবির হাট’ দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত। শোভাযাত্রা শুরুর সময় বেলা ১২টা।
সরকারি চাকরিজীবীদের অংশগ্রহণের নির্দেশনা
শনিবারের বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রায় দেশের সব সরকারি চাকরিজীবীকে অংশ নেয়ার নির্দেশ ইতোমধ্যেই দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এ ভাষণ ইউনেস্কোর ‘ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্ট্রারে’ অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যের’ স্বীকৃতি লাভ করায় শনিবার ঢাকা মহানগরীসহ সব জেলা ও উপজেলায় আনন্দ শোভাযাত্রা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপ-সচিব মো. সাজজাদুল হাসান স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় এ কর্মসূচি একযোগে সারাদেশে উদযাপনের জন্য ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
কর্মসূচিটি যথাযথভাবে উদযাপনের জন্য মন্ত্রণালয় বা বিভাগ ও এর আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের ঢাকায় অবস্থানরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কর্মসূচিতে এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আয়োজিত কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
দুই সিটি কর্পোরেশনের প্রস্তুতি
সরকারি এ কর্মসূচি সফল করতে উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনও ইতোমধ্যে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে মেয়র সাঈদ খোকন ইতোমধ্যে কর্পোরেশনের সব ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর ও কর্মকতা-কর্মচারীদের নিয়ে প্রস্তুতি বৈঠক করেছেন। বৈঠকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিবও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে কর্পোরেশনের সব কাউন্সিলরকে শনিবারের আনন্দ র্যালিতে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিতের নির্দেশনা দেয়া হয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন শাহবাগসহ ঢাকা শহরের তিন-চারটি জনবহুল এলাকায় ডিজিটাল ডিসপ্লের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ডকুমেন্টারি প্রচারের ব্যবস্থা করেছে।
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের আয়োজন
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহে আলম মুরাদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়ায় শনিবারের কর্মসূচিটি সরকারি। আমরা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এ কর্মসূচিতে উৎসাহ ও আনন্দের সঙ্গে অংশগ্রহণ করব। মূল কর্মসূচি হবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। কেন্দ্র যেভাবে নির্দেশ দেবে, আমরা সেভাবে এ আনন্দ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করব।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মসূচি
শনিবারের বর্ণাঢ্য আনন্দ র্যালি উপলক্ষে তথ্য মন্ত্রণালয় ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সরকারি এক তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, শনিবার ধানমন্ডির ৩২ নম্বর থেকে বেরা ১২টায় গণযোগাযোগ অধিদফতরের নিজস্ব শিল্পীদের পরিবেশনায় উদ্বুদ্ধকরণ সংগীত প্রচার করা হবে। গণযোগাযোগ অধিদফতরের আওতায় জেলা তথ্য অফিসের মাধ্যমে নারী সমাবেশ, কর্মশালা, মতবিনিময় এবং উঠান বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ প্রচার করা হবে। ২৫ নভেম্বর ঢাকাসহ দেশব্যাপী একযোগে সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ এবং ‘ওরা ১১ জন’ চলচ্চিত্র প্রচার করা হবে।
বিবরণীতে বলা হয়, ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ জনবহুল ২০টি স্থানে গণযোগাযোগ অধিদফতরের সংগীত দলের মাধ্যমে ২৫ নভেম্বরের আনন্দ শোভাযাত্রার প্রচার-প্রচারণা চালানো হবে। ঢাকাসহ সব জেলাশহরে বড় পর্দায় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ প্রদর্শন করা হবে। ২৫ থেকে ২৭ নভেম্বর চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতর প্রাঙ্গণে ডিজিটাল ডিসপ্লের আয়োজন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ২৫ নভেম্বরের আনন্দ শোভাযাত্রা সরাসরি সম্প্রচার করবে। বাংলাদেশ বেতারের ঢাকা কেন্দ্রসহ সব আঞ্চলিক কেন্দ্র থেকে ২৫ নভেম্বর সকাল ৮টায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের বজ্রকণ্ঠ অনুষ্ঠান একযোগে প্রচার করা হবে। ২৫ নভেম্বর সিনেমা হলগুলোতে বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণ প্রচারের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তথ্য অধিদফতরের ফিচার শাখা থেকে সাংবাদিক মোতাহার হোসেনের লেখা ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্বের মুক্তিকামী ও শোষিত মানুষের আলোকবর্তিকা’ শীর্ষক নিবন্ধ পত্রিকায় প্রকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর স্বীকৃতিতে শনিবার সারাদেশে শিক্ষার্থী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ‘ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দ্যা ওয়ার্ল্ড রেজিস্ট্রার’ শিরোনামে কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। একইসঙ্গে দেশের সব জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আনন্দ র্যালি ও পথ সমাবেশ করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রিপরিষদের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সমাবেশের সূচনা বক্তব্য দেবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী সমাবেশের গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরবেন। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদসহ একাধিক মন্ত্রীকে সমাবেশে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তারা বঙ্গবন্ধুর ভাষণের উপর বক্তব্য দেবেন। পাশাপাশি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবদের এ সমাবেশে উপস্থিত হতে চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
এফএইচএস/জেডএ/এমএস