সংসদে বাদলকে তুলাধুনা করলেন নৌমন্ত্রী
চট্টগ্রাম বন্দরে লস্কর পদে নিয়োগ নিয়ে জাসদ একাংশের কার্যকরী সভাপতি মঈনুদ্দিন খান বাদলের অভিযোগে চটেছেন নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। তিনি বলেছেন, চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য যে অভিযোগ করেছেন তা সম্পূর্ণ অসত্য ও বিভ্রান্তিকর। তাই তার অসত্য বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি নিয়োগের বিষয়ে স্বজন পোষণ ও নিজ জেলাকে প্রাধান্য দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বাদলের ‘অসত্য তথ্যের’ তীব্র নিন্দা জানিয়ে তাকে তুলাধুনা করেন।
সোমবার রাতে সংসদ অধিবেশনে ৩০০ বিধিতে বিবৃতি প্রদানকালে মন্ত্রী একথা বলেন। এর আগে রোববার মঈনুদ্দিন খান বাদল চট্টগ্রামবন্দরে লস্কর পদে নিয়োগে দুইজন মাত্র চট্টগ্রামের এবং বাকিদের একটি মাত্র জেলা থেকে নিয়োগ দেয়া হলো কেন? এ প্রশ্ন রাখেন।
স্পিকারের উদ্দেশ্যে নৌমন্ত্রী বলেন, আমি গতকাল চট্টগ্রামে থাকায় কথার জবাব দিতে পারি নাই। গতকাল (১৯ নভেম্বর) চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য মঈনুদ্দিন খান বাদল সংসদে একটি বক্তব্য দিয়েছেন। তার বক্তব্যে একাংশে বলেছেন ‘এ বন্দরের সঙ্গে চট্টগ্রামবাসী নানাভাবে যুক্ত। অথচ সেই বন্দরে একটি ছোট চাকরি হবে লস্করের, সেখানে দেখা যায় লস্করের চাকরিতে ৯২ জন নির্বাচন করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ২ জন মাত্র চট্টগ্রামের, আরবাকি ৯০ জন অন্য একটি জেলার। এখানে একটি জেলার কথা বলা হয়েছে। তিনি এও উল্লেখ করেছেন এটাই কী সময় হলো? চট্টগ্রামের মাত্র ২ জনকে চাকরি দেয়া হবে, বাকিদের একটি জেলায় নয়, সারাদেশে ভাগ করে দেয়া হবে। নির্বাচন আসন্ন এ সময় এটা করা প্রয়োজন ছিল।
এর জবাবে মন্ত্রী বলেন, সংসদ সদস্য মঈনুদ্দিন খান বাদলের বক্তব্য সম্পূর্ণ অসত্য এবং বিভ্রান্তিকর। কারণ সেখানে ৯২ জন নয় চাকরি দেওয়া হয়েছে ৮৫ জনকে। চাকরির বিধান মোতাবেক তাদের চাকরি দেয়া হয়েছে।
এ সময় চাকরির বিধান তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, চতুর্থ শ্রেণি বাদে অন্যান্য পদে লিখিত পরীক্ষার পর মৌখিক পরীক্ষা নেয়ার পর যিনি সর্বোচ্চ নম্বর পান তাকেই নিয়োগ দেয়া হয়। শুধুমাত্র ৪ শ্রেণির বেলায় যারা মৌখিক পরীক্ষায় ভালো করে, যাদের স্বাস্থ্যগত দিক ভালো তাদের নিয়োগ দেয়া হয়। তাছাড়া আমরা প্রতিটি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা অনুসরণ করি।
কোটা তালিকা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায়-৩০, মহিলা কোটা-১০, উপজাতি-৫ আনসার ভিডিপি-৫ , প্রতিবন্ধী-৫ এবং জেলা কোটায় ৪৫ জন। চাকরি দিলাম ৮৫ জনের বলা হলো ৯২ জন। আর কোটায় দিলে চট্টগ্রামে আগামী ৩০ বছরেরও চাকরি দেয়ার কথা নয়। তবে যেহেতু বন্দরটি চট্টগ্রামে তাই তাদের ক্ষেত্রে জেলা কোটায় নিয়োগ দেয়া হয়নি। আমরা বৃহত্তর চট্টগ্রামের ২৯ জনকে চাকরি দিয়েছি। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ২৩ জন, কক্সবাজারে ৪ জন এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের ২ জন। অন্যান্য জেলার মধ্যে নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, চাঁদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, পাবনা, বগুড়া, খুলনা ও মাগুড়ার লোক রয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারে আমলে চট্টগ্রাম বন্দরের ৩ হাজার ১০০ জন লোকের চাকরি দেয়া হয়েছে। কখনো কোনো অভিযোগ উঠে নাই। এখন কেন এ অভিযোগ। অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য মঈনুদ্দিন খান বাদল। তিনি সুপারিশ করেছিলেন মনসুর আলী, পিতা সিরাজুর রহমান। যার রোল নং-জে ০১৪৩২। এ ছেলেটির চাকরি তার অনুরোধে দেয়া হয়েছে। এখানে যেহেতু শুধু মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হয় তাই অন্য মন্ত্রী, এমপিদের অনুরোধ করলে সেটাও বিবেচনা করি। এখানে কারা কারা সুপারিশ করেছেন তালিকা আছে। তিনি কী করে এ অভিযোগ করেন।
মন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামের আরেক সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু অভিযোগ করেছেন, চট্টগ্রামের নিয়োগ পরীক্ষা ঢাকায় কেন নেয়া হয়। আমাদের যে সংখ্যক চাকরি প্রার্থী থাকে তাদের চট্টগ্রামে পরীক্ষা নেয়ার মতো অবস্থা থাকে না। তাই ঢাকাতে পরীক্ষা নেয়া হয়। উনি কখনও সুপারিশ করেন নাই। তবে উনার পার্টির নেতা এইচএম এরশাদ
যার সুপারিশ করেছিলেন তাকেও চাকরি দেয়া হয়েছে। কাজেই মঈনুদ্দিন খান বাদল যে বক্তব্য দিয়েছেন তা অসত্য। এ অসত্য বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন না।
এইচএস/এসএইচএস/আইআই