ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

বেতন বাড়ছে আইসিডিডিআরবি`র কর্মকর্তা-কর্মচারীদের!

প্রকাশিত: ০২:০৬ পিএম, ০১ জুলাই ২০১৫

আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর`বি) এর সাড়ে চার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন ভাতা বাড়ছে! বিদেশি কর্মকর্তাদের মতো তারাও ইউএন (জাতিসংঘ) নির্ধারিত পে-স্কেলে বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পাবেন। কর্মী মঙ্গল সংঘের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বুধবারের পূর্বনির্ধারিত আলোচনাকালে আইসিডিডিআরবির ব্যবস্থাপনা কমিটি নীতিগতভাবে আন্দোলনকারীদের সব দাবি মেনে নিবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।

কর্মী মঙ্গল সংঘের মহাসচিব ড. ফিরোজ আহমেদ জাগো নিউজকে জানান, ব্যবস্থাপনা কমিটি তাদের নয় দফা দাবির মধ্যে শুধুমাত্র মুখ্য পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) অপসারণের দাবি ছাড়া বাকি আট দফা দাবি নীতিগতভাবে মেনে নিয়েছেন। রোববারের মধ্যে ব্যবস্থাপনা কমিটি এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সোয়া ২টা পর্যন্ত টানা প্রায় চার ঘণ্টা এ সভা অনুষ্ঠিতম হয়।

কর্মী মঙ্গল সংঘের সভাপতি ড. আজহারুল ইসলাম বলেন, রোববারের মধ্যে দাবি মেনে নেয়া না হলে কঠোর থেকে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

তিনি জানান, আন্দোলন ও আলোচনা পাশাপাশি চলবে। আন্দোলনের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির প্রবেশ পথে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে সংঘের সদস্যরা।

কর্মী মঙ্গল সংঘের সহ-সভাপতি ড. মাহবুব হোসেন বলেন, মুখ্য পরিচালন কর্মকর্তা ইনগ্রিড রিনাউডের (Ingrid Renaud) অপসারণ প্রধানতম দাবি। তার বিদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।



শাহ আলম, আইসিডিডিআরবিতে কর্মরত সিনিয়র ফিন্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট। দুপুর দেড়টা থেকেই গাড়ি পার্কিং এলাকার কাঁঠাল গাছের নিচে বসে কর্মী মঙ্গল সংঘের সভাপতি মহাসচিবসহ কর্মকর্তাদের মিটিং শেষে ফিরে আসার অপেক্ষা করছিলেন। একজন সহকর্মীকে এগিয়ে আসতে দেখে বললেন, সুখবর শোনার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিরে ভাই। নিশ্চয়ই নেতারা ভালো খবর নিয়ে আসবেন।

মঙ্গলবারের ঘোষণা অনুযায়ী দুপুর ২টায় প্রতিবাদ সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দুপুর পৌনে ২টা থেকে লোক সমাগম শুরু হয়। হ্যামিলনের বাঁশি শুনে যেমন শত শত ইদুর যাদুঘরের পিছনে ছুটে এসেছিল ঠিক তেমনি করে সমাবেশে যোগ দিতে ২টা বাজার আগেই শত শত সদস্য ক্যাম্পাসে চলে আসে। প্রখর রোদে এখানে-সেখানে অবস্থান নিয়ে নেতাদের পথ পানে চেয়ে অপেক্ষার প্রহর গুণতে থাকেন।

দুপুর সোয়া ২টায় সেই মাহেন্দ্রক্ষণ আসে। একে একে মঞ্চের টেবিলে এসে দাঁড়ান সংঘের সভাপতি, মহাসচিব ও সহ-সভাপতি। তারা জানান, ব্যবস্থাপনা কমিটি নীতিগতভাবে শতকরা ৯৯ ভাগ দাবি মেনে নিয়েছেন।



জাতিসংঘের পে-স্কেল অনুযায়ী সবার বেতন-ভাতা বৃদ্ধির ব্যাপারে ইতিমধ্যেই কাজ শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতো অবসর গ্রহণের বয়সসীমা ৬৫ বছর করা যায় কি-না সে ব্যাপারে কাজ চলছে।

এ সময় উপস্থিত সদস্যরা কোনটি মেনে নেয়নি তা জানতে চান। সিওও’র ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলতেই সকলেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। মাঝবয়সী একজন কর্মচারী চেচিয়ে উঠে বলেন, বেতন-ভাতা বৃদ্ধি চাই না, সিওওকে আগে বিদায় করতে হবে। এ সময় মহাসচিব ড. ফিরোজ আহমেদ মাইক হাতে নিয়ে বলেন, আমরা আপনাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি। আমাদের বিশ্বাস করে আন্দোলন করছেন। তার বিদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাবো না।

তিনি বলেন, মঙ্গলবার বিকেলে মাত্র ২ ঘণ্টা ঘুমিয়েছি। রাতে ২ ঘণ্টা ঘুমিয়েছি। সামনে শুভ দিন। আমাদের আন্দোলনে চূড়ান্ত বিজয় হবেই হবে।



উপস্থিত সকলে ব্রাকের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের বিষয়ে জানতে চাইলে সহ-সভাপতি ড. মাহবুব হোসেন জানান, কী প্রক্রিয়ায় কোনো চুক্তিতে ব্র্যাককে ভবন দেয়া হলো তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রোববারে তা জানা যাবে। এ সময় সকলেই ব্র্যাককে তাদের ভবন থেকে অবশ্যই বের করার ব্যবস্থা করতে হবে বলে দাবি জানাতে থাকেন।

কর্মী মঙ্গল সংঘের সভাপতি ড. আজহারুল ইসলাম বক্তৃতাকালে বলেন, নতুন পরিচালক (অর্থ) বৈঠককালে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উৎসব ভাতা কর্তন করার কথা জানতে পেরে হতবাক হয়েছেন। তিনি বিষয়টি সুরাহার জন্য কাজ করছেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, আন্দোলন ও আলোচনা পাশাপাশি চলবে। বিএনপি-আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত না করে যে ভুল করেছে তারা সেই ভুল করবেন না। নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন সফল হতে পারে আমরা তা প্রমাণ করবো।

সহ-সভাপতি ড. মাহবুব হোসেন বলেন, আন্দোলনকে নস্যাত করতে অপচেষ্টা চলছে। তাই চোখ, নাক ও কান খোলা রাখতে হবে। চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না করার পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। এরই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার সকালেও এক ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি চলবে বলে তিনি ঘোষণা দেন।

উল্লেখ্য, নয় দফা দাবিতে গত ২৬ জুন থেকে আন্দোলনে নেমেছেন কর্মী মঙ্গল সংঘের সাড়ে চার হাজার কর্মকতা-কর্মচারী। নয় দফা দাবির মধ্যে রয়েছে সিওও’র অপসারণ, আইসিডিডিআরবির অর্ডিন্যান্স ১৯৭৮ মোতাবেক বেতন-ভাতা জাতিসংঘ বেতন কাঠামো অনুসারে প্রদান, বাতিলকৃত সুযোগ-সুবিধা পুনর্বহাল, মুখ্য পরিচালন কর্মকর্তার পদ বিলুপ্তি করে প্রতিষ্ঠানটির মুখ্য নির্বাহী পরিচালক, উপ-নির্বাহী পরিচালকের মাধ্যমে সকল প্রকার প্রশাসনিক ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত কার্যক্রম পরিচালনা, সকল প্রকার অবৈজ্ঞানিক আন্তর্জাতিক পদ বিলুপ্ত করে সেই সকল পদে জাতীয় পে স্কেল অনুসারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ‘নতুন পদ’ সৃষ্টি, ১৯৭৮ সালের অর্ডিন্যান্স সংশোধন, অবসরের বয়সসীমা ৬৫ বছরে উন্নীত করা, শর্তহীনভাবে ব্র্যাকের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা, ট্রাস্টি বোর্ডের মেম্বার অধ্যাপক ডা. মো. সোহরাব আলীর অবমাননার সুবিচার ও আইসিডিডিআরবির ঐতিহ্যবাহী জার্নাল অব হেলথ, পপুলেশন অ্যান্ড নিউট্রেশন (জেএইচপিএন) চালু করা।



জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে একাধিক কর্মকর্তা কর্মচারী জানান, বিভিন্ন দাতা সংস্থা আইসিডিডিআরবির ফান্ড বন্ধ করে দেবে অজুহাত দেখিয়ে এক বছর আগে মুখ্য পরিচালন কর্মকর্তাকে নিয়োগ প্রদান করে।

প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা হ্রাস করা হলেও ইউএন ডি-টু, ধাপ-৬ এর এই কর্মকর্তা প্রতি বছর প্রায় দুই লাখ মার্কিন ডলার বেতন নিচ্ছেন। এছাড়া গুলশানে প্রতি মাসে দুই লাখ টাকা বাড়ি ভাড়া, সার্বক্ষণিক গাড়ি ও ড্রাইভার এবং প্রতি বছর চারবার বিমানের বিজনেস ক্লাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসা-যাওয়ার জন্য বিপুল অংকের টাকা নিচ্ছেন। অথচ আইসিডিডিআরবির অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী এ পদটির কোনো অস্তিত্ব নেই।

এ ছাড়া আইসিডিডিআরবির ম্যানেজমেন্ট বোর্ড অবৈধভাবে ৪০ হাজার ৫শ’ স্কোয়ার ফিটের একটি ভবন ব্র্যাককে বছরে এক টাকা ভাড়ায় ৪৯ বছরের জন্য লিজ দেয়।

## বিক্ষোভে উত্তাল আইসিডিডিআরবি

এমইউ/বিএ/আরএস/আরআই