‘পুলিশ আঙ্কেল আমাকে যেতে দিন প্লিজ’
বার বার হাতঘড়ির দিকে তাকাচ্ছিল স্কুল ইউনিফর্ম পরিহিত ছেলেটি। বয়স আনুমানিক বার বা তের বছর হবে। আজিমপুর চায়না বিল্ডিংয়ের গলির মুখে রিকশায় বসে মেইন রোডে যাওয়ার অপেক্ষা করছিল। প্রধান সড়কে তখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে লাঠি-সোটা নিয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছিল।
পূর্ব দিকে আজিমপুর বাস ষ্ট্যান্ডের সামনে থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাইদ খোকনের ও পশ্চিম পাশে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করছিলেন।
রিকশায় বসে থাকা ছেলেটি পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে বলছিল, ‘পুলিশ আঙ্কেল, এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে। স্কুল গেট ১২টার আগেই বন্ধ হয়ে যাবে। আমাকে যেতে দিন প্লিজ।’
কিন্তু পুলিশ তাকে কিছুতেই যেতে দেবে না। বরং তাকে পিছু হটার পরামর্শ দিয়ে বলছিল, টিয়ার শেল নিক্ষেপ করা হচ্ছে। সরে না গেলে বিপদে পড়বে। এক সময় ছেলেটি রিকশা নিয়ে স্কুলের বদলে বাসায় রওয়ানা হয়ে যায়।
আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের সমাবেশকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিবাদ, ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার কারণে রাস্তা বন্ধ করে দেয়ায় শুধুমাত্র স্কুলের এই শিক্ষার্থী একাই নয় আজিমপুর থেকে হাজারিবাগমুখী বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার শত শত সাধারণ মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।
এলাকার সকল হোটেল, রেস্তোরাঁ ও মুদি দোকান বন্ধ হয়ে যায়। ভাসমান সবজি ও মাছ বিক্রেতাকে প্রাণ বাঁচাতে অন্যত্র ছুটতে দেখা যায়।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আজিমপুর ভিকারুননিসা নূন স্কুল সংলগ্ন পার্ল হারবার কমিউনিটি সেন্টারের দোতলায় মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সমাবেশ চলাকালে হঠাৎ দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। লোকজন ভয়ে ছোটাছুটি শুরু করেন। অনেককে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা যায়।
সকাল থেকেই পার্ল হারবার কমিউনিটি সেন্টারের সামনে এক ট্রাক ময়লা ফেলে রাখাকে কেন্দ্র করে শাহে আলম মুরাদ গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ময়লা কে ফেলেছে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মী বলেন, ‘যাদের চরিত্র ও মানসিকতা মেথরদের মতো তারাই এ কাজ করেছে।’
মেয়রের প্রতি ঈঙ্গিত করে তিনি বলেন, উনার অনুমতি না থাকলে এক ট্রাক ময়লা কেউ প্রধান সড়কে কি ফেলতে পারে? মহানগর আওয়ালী লীগের নেতারা বলেন, যারা এভাবে ময়লা ফেলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে তারা বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ ও জননেত্রী শেখ হাসিনাকে কতটুকু ভালোবাসে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
মেয়র সাঈদ খোকনের সমর্থক নেতাকর্মীদের সঙ্গে মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মনোমালিন্য অনেক দিন ধরে নীরবে চললেও গত কয়েকদিন যাবৎ তা প্রকাশ্যে এসেছে। এলাকাবাসী বলছে, যেকোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ শুরু হতে পারে।
এমইউ/এনএফ/পিআর