তাবলীগের দু-পক্ষের সংঘর্ষের নেপথ্যে মাওলানা সাদ!
তাবলীগ-জামাতের বিশ্ব-মারকাজ হলো দিল্লির ‘নিজামুদ্দিন মারকাজ’। আর এ বিশ্ব-তাবলীগের আমিরের গুরু দায়িত্ব পালন করছেন মাওলানা সা’দ কান্ধলভী। তবে সম্প্রতি তার কিছু বয়ানের কথা ইসলামের সম্পর্কে সাংঘর্ষিক বলে ফতোয়া জারি করা হয়। মাওলানা সা’দকে সেসব সাংঘর্ষিক বয়ান থেকে ফিরে আসার আহ্বান জানান উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ দীনি বিদ্যাপীঠ ‘দারুল উলুম দেওবন্দ’-এর ঊর্ধ্বতন শিক্ষক ও মাওলানারা। বাংলাদেশে তাবলীগ-জামাতের ইজতেমায় যেন সা’দ আসতে না পারেন সে ব্যাপারে মতনৈক্য দেখা দেয়। এরই জেরে মঙ্গলবার রাজধানীর কাকরাইল মসজিদের সামনে তাবলীগ-জামাতের দু’পক্ষের মধ্যে বাগবিতণ্ডা, পরে হাতাহাতি থেকে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
তাবলীগ-জামাতের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সা’দের পক্ষে ও বিপক্ষে তাবলীগ-জামাতের দুটি পক্ষ। তাবলীগ-জামাতের শুরা সদস্য মাওলানা হাফেজ জুবায়ের সা’দকে বাংলাদেশে আর না আনার পক্ষে। মাওলানা সা’দ যেন বাংলাদেশের কোনো ইজতেমায় অংশ নিতে না পারেন সে ব্যাপারে মত দেন তিনি। অন্যদিকে অপর শুরা সদস্য সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম সা’দের পক্ষে। তিনি সা’দকে বাংলাদেশে আনতে চান।
সূত্র জানায়, তাবলীগ-জায়াতের দ্বিধাবিভক্তির পেছনে ছিল একে অন্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ। প্রায় চার বছর ধরে এ বিরোধে নতুন মাত্রা পেল মাওলানা সা’দকে ঘিরে, যা শেষ পর্যন্ত মুরব্বিদের উপস্থিতিতে বাগবিতণ্ডা থেকে হাতাহাতি পরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার রূপ নেয়।
তাবলীগ-জামাতের সাথী মো. শরফুল ইসলাম খান জাগো নিউজকে বলেন, তাবলীগ-জামাতের দিল্লির মারকাজের মুরব্বি মাওলানা সা’দ। কিন্তু তার কিছু কথার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে ওলামায়ে দেওবন্দ। ‘দারুল উলুম দেওবন্দ’ নামে প্রতিষ্ঠানটির ওলামায়ে-কেরাম ফতোয়া জারি করেছেন সা’দের কিছু কথা ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ মর্মে তারা মাওলানা সা’দকে চিঠি দিয়েছেন। তার মতামত থেকে সরে এসে মূল আকিদা অনুযায়ী ইসলাম প্রচারের আহ্বান জানিয়েছেন তারা। তার পক্ষ থেকে একদল অনুসারী ওলামায়ে দেওবন্দের সঙ্গে দেখা করতে আসলেও সন্তুষ্ট ছিলেন না তারা।
যে কারণে পত্রিকায় খবর প্রচারিত হয়। কী কারণ ফতোয়া দেয়া হয়েছে তাও উল্লেখ করা হয়। বিশ্লেষণে সত্যিকার অর্থে তার সেসব কথা ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এরপরেও তাবলীগ-জামাতের শুরা সদস্য সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম সা’দের পক্ষে। আজকের ঘটনার মূল কারণ এটাই।
তিনি আরও জানান, গত সপ্তাহে পাকিস্তানে তাবলীগ-জামাতের এক আয়োজনে বাংলাদেশের তাবলীগ-জামাতের মজলিশে শুরা সদস্য ও ফায়সাল (আমির) সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম ও হাফেজ মাওলানা জুবায়েরের যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে জুবায়ের সেখানে যান। দেশে ফেরার পর অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে বললেও জুবায়ের কিছু জানাননি। এ নিয়েও ঝামেলা হয় দু’পক্ষের মধ্যে।
‘তিন-চার বছর ধরেই এ দলাদলি চলছে। বাংলাদেশ তাবলীগ-জামাত পরিচালনা কমিটির শুরা সদস্য ১১ জন। এর মধ্যে সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম ও হাফেজ মাওলানা জুবায়েরের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব ও গ্রুপিং রয়েছে। তারা একে অপরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও তুলেছেন’-বলে তিনি
জানা যায়, মঙ্গলবার সকালে কাকরাইল মসজিদে শুরা সদস্যরা মাসোয়ারা বৈঠকে বসেন। বৈঠকে ওয়াসিফুল ও জুবায়ের গ্রুপ একে অন্যের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করতে থাকেন। এরপর হাতাহাতি যা পরে সংঘর্ষে রূপ নেয়। লাঠিসোটা নিয়ে ওয়াসিফুল পক্ষকে ধাওয়া করে একদল। ওই ঘটনায় পুরো এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মাসোয়ারা কক্ষসহ মসজিদের ভেতরের কয়েকটি কক্ষ ভাঙচুর করা হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মইনুল ইসলাম।
তিনি জানান, ‘মতবিরোধের জেরে দু’পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব। এ কারণেই হাতাহাতি হয়েছে। আমরা দু’পক্ষের সঙ্গে বসেছি। আশা করছি বিষয়টির শান্তিপূর্ণ সুরাহা হবে।
এর আগেও তাবলীগ-জামাতের বিরোধ নিয়ে এ দু’পক্ষের মধ্যে মামলা-পাল্টা মামলা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল তাদের নিয়ে কয়েক দফা বৈঠকও করেছেন।
একটি সূত্র জানায়, গত জানুয়ারিতে করা ওলামায়ে দেওবন্দের দেয়া ফতেয়ার প্রেক্ষিতে স্বরাষ্টমন্ত্রী জানান, বিতর্কিত লোককে না আনাই ভালো। মাওলানা সা’দের ব্যাপারে যেহেতু ফতোয়া এসেছে সুতরাং তাকে আনা যাবে না।
এরপর দিল্লির মারকাজের মুরব্বি মাওলানা সা’দকে ঘিরে তৈরি হওয়া সংকট নিরসনে উলামা মাশায়েখ পরামর্শ সভা হয়েছে একাধিকবার। গত ১৪ নভেম্বর উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর রোডের আয়েশা মসজিদে এ ইস্যুতে এক বৈঠক হয়। তবে মাওলানা সা’দের বাংলাদেশে ইজতেমায় আসা না আসার বিষয়টি এখনো সুরাহা হয়নি।
জেইউ/জেডএ/এমএস