ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

সিপিএ সদস্যরাও বললেন মিয়ানমারে গণহত্যা হয়েছে

সিরাজুজ্জামান | প্রকাশিত: ০৩:২৯ পিএম, ০৫ নভেম্বর ২০১৭

মিয়ানমার সেনাবাহিনী কর্তৃক রোহিঙ্গাদের হত্যাকে গণহত্যা হিসেবে অভিহিত করেছেন কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) সদস্যরাও। তারা রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন ও হত্যার কঠোর নিন্দা করেছেন। সেইসঙ্গে অবিলম্বে তাদের স্বদেশে ফিরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন।

এর আগে জাতিসংঘ, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিনে এরদোয়ান মিয়ানমারের হত্যাকাণ্ডকে গণহত্যা বলে অভিহিত করেছিলেন।

রোববার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে তাদের ব্রিফ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। মন্ত্রীর বিফ্রিং শেষে আগত এমপিরা তাদের মতামত ও প্রশ্নোত্তর পর্বে রোহিঙ্গা হত্যাকে গণহত্যা বলে অভিহিত করে নিন্দা ও প্রস্তাব পেশ করেন। প্রাণ ভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও খাদ্য দেয়ায় বাংলাদেশ ও প্রধানমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করেন তারা।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিপিএ প্রতিনিধিদলকে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের উৎপত্তি ও ইতিহাস বিষয়ে বিস্তারিত জানান। মন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার সরকার তাদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। এজন্য তারা আশ্রয় নিতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। মিয়ানমারের এ গণহত্যা বন্ধ এবং মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়ানোর জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দ সিপিএ-তে একটি রেজ্যুলেশন গ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছেন।

অসহায় রোহিঙ্গাদের দুর্দশার বর্ণনা দিয়ে প্রতিনিধিরা বলেন, রোহিঙ্গা নির্যাতন অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত। এ গণহত্যার ফলে নারী ও শিশুরা সবচেয়ে খারাপ অবস্থার সম্মুখীন হয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গা সংকট শেষ করতে আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্যও প্রতিনিধিদল তাদের মতামত তুলে ধরেন।

cpa

মালদ্বীপের স্পিকার আবদুল্লাহ মাসেহ মোহাম্মদ বলেন, ‘গত এক দশকে রোহিঙ্গা জনগণের ওপর অত্যাচার হচ্ছে। এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘন। এটি একটি গণহত্যা। আমরা রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি।’

তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখার জন্য আমরা একটি রেজ্যুলেশন আনতে পারি।’

সাউথ ওয়েলসের প্রাক্তন জাতীয় পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ আসগর বলেন, ‘আমি রোহিঙ্গাদের কষ্ট বুঝতে পারছি। সেইসঙ্গে অনুমান করতে পারছি রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য বিরাট বোঝা। মিয়ানমার সরকারকে নিন্দা জানাতে ও তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে আমাদের ঐকমত্যে পৌঁছতে হবে। আমি মিয়ানমারকে অবিলম্বে তাদের জনগণকে ফিরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নফিসা শাহ বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে পাকিস্তানের সংসদ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আমরা বাংলাদেশকে আমাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করছি। আমরা এ কঠিন সময়ে বাংলাদেশের প্রতি সহানুভূতিশীল। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে ও তাদের নাগরিকত্ব দেবে এবং অন্যান্য নাগরিকদের মতো সমান অধিকার দিয়ে তাদের স্থান দেবে এটাই আমাদের দাবি।’

কানাডার সিনেটর সালমা আতাউল্লাজান বলেন, ‘মিয়ানমারের ঘটনা এটি গণহত্যা। আমরা শরণার্থীদের পুনর্বাসন দেখতে চাই। আমরা কৃতজ্ঞ যে বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। এবছর বাংলাদেশে বড় বন্যা হয়েছে। এছাড়া রয়েছে প্রাকৃতিক সমস্যা। তাই মিয়ানমারকেই এ সমস্যার সমাধান করতে হবে।’

যুক্তরাজ্যের হাউস অফ লর্ডসের লর্ড ফাউলস বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের প্রতি সমর্থন প্রদানের জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করি আমরা। এটা স্পষ্টভাবে একটি গণহত্যা। এতে সন্দেহ নেই।’ রোহিঙ্গা শরণার্থী যারা এখন ভয়াবহ অবস্থানে রয়েছে তাদের দেখার জন্য সিপিএ প্রতিনিধিদের যেন কক্সবাজার নিয়ে যাওয়া হয় এজন্য প্রস্তাব করেন তিনি।

cpa

তিনি বলেন, ‘আমি ২৩ নভেম্বর হাউস অব লর্ডসে রোহিঙ্গা সমস্যা উত্থাপন করব। রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান না করেই যদি আমরা বাংলাদেশ ছেড়ে যাই তবে এটা অন্যায় হবে। আমরা বাংলাদেশকে সমর্থন করি।’

দক্ষিণ আফ্রিকার ডেপুটি স্পিকার লেইচে তাসনিলি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করি। আর রোহিঙ্গা নির্যাতনের কঠোর নিন্দা করছি। রোহিঙ্গাদের প্রতি আমাদের সংহতি পাঠানো উচিত। আমরা রোহিঙ্গা ইস্যুতে একটি রেজল্যুশন গ্রহণ করতে পারি।

ক্যামেরুনের সংসদ সদস্য নাওম টিবোহ জন বলেন, ‘রোহিঙ্গা জনগণকে সহায়তার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানাই। ব্যাপারটি সমাধান করা সহজ বিষয় নয়।’

অস্ট্রেলিয়ার লেবার পার্টির সংসদ সদস্য মার্গারেট কুইক প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, বাংলাদেশের জন্য প্রতিবেশী দেশ ভারত ও চীন থেকে সমর্থন দেয়া হয়েছে কি-না।

জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, ‘ভারত আমাদের সঙ্গে আছে। চীন সহায়তা পাঠিয়েছে।’

এইচএস/জেডএ/জেআইএম

আরও পড়ুন