ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

এক বছরে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে ২৬ শতাংশ

মাসুদ রানা | প্রকাশিত: ১২:২০ পিএম, ৩১ অক্টোবর ২০১৭

২০১৬-১৭ অর্থবছরে ইলিশ মাছের উৎপাদন আগের বছরের (২০১৫-১৬) চেয়ে এক লাখ এক হাজার ৪৬৬ মেট্রিক টন বেড়েছে। গত অর্থবছরে ইলিশের মোট উৎপাদন ছিল ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৪১৭ টন। এর আগের বছর ছিল ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৯৫১ টন।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে জাতীয় মাছ ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির হার ২৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ। যদিও এক যুগ ধরে সুস্বাদু মাছ ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির হার ১০ শতাংশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।

২০১৬-১৭ অর্থবছরের খসড়া মৎস্য উৎপাদনের পরিসংখ্যান থেকে ইলিশ আহরণের এ তথ্য জানা গেছে। খসড়া পরিসংখ্যান চূড়ান্ত করতে গত রোববার রাজধানীর মৎস্য অধিদফতরে সভা বসলেও কিছু তথ্যে ত্রুটি থাকায় তা ফের যাচাই করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাই মাছের উৎপাদনের পরিসংখ্যান চূড়ান্ত হয়নি। মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক সৈয়দ আরিফ আজাদ ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন।

ওয়ার্ল্ড ফিশের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের মোট ইলিশের ৬৫ শতাংশই উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে। বাংলাদেশে ২০০৩-০৪ অর্থবছরে এর আগের বছরের চেয়ে ইলিশের উৎপাদন সর্বোচ্চ প্রায় ২৯ শতাংশ বেড়েছিল।

মৎস্য অধিদফতরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত মহাপরিচালক শেখ মুস্তাফিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মৎস্য উৎপাদনের যে পরিসংখ্যান পেয়েছি সেটা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে খসড়া হিসাব অনুযায়ী ইলিশের উৎপাদনটা মোটামুটি ঠিক আছে। গত অর্থবছরে ইলিশের মোট উৎপাদন ৪ লাখ ৯৬ হাজার টন। তিনি বলেন, সরকারের নানামুখী উদ্যোগের ফলে ইলিশের উৎপাদন প্রতিবছর বেড়েই চলছে। আশা করছি চলতি অর্থবছরে সাড়ে ৫ লাখ থেকে ৬ লাখ টন ইলিশ উৎপাদিত হবে।

হঠাৎ করে ইলিশের উৎপাদন এতটা বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব ফিসারিজের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী আহসান হাবীব জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত বছর থেকেই বেশ বৃষ্টিপাত হচ্ছে, এতে উজান থেকে প্রচুর পানি নামে। ফলে ইলিশ সমুদ্র থেকে উপরের দিকে উঠে আসে। অনুকূল পরিবেশের সঙ্গে সরকারের কড়া মনিটরিংয়ের কারণে ইলিশের উৎপাদন এতটা বেড়েছে।’

খসড়া প্রতিবেদন থেকে দেখা গেছে, গত অর্থবছরে নদী থেকে ২ লাথ ১৭ হাজার ৩০০ টন, সুন্দরবনের আশপাশের নদী থেকে ১৬৯ টন, সমুদ্র থেকে ২ লাখ ৭৮ হাজার ৯৪৮ টন (বড় জাহাজের মাধ্যমে ৬৯৪৮ টন ও ট্রলারের মাধ্যমে ২,৭২,০০০ টন) ইলিশ আহরণ করা হয়েছে। মৎস্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত অর্থবছরে উৎপাদিত ইলিশের বাজারমূল্য প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা।

অধ্যাপক আহসান হাবীব বলেন, ‘আমার মনে হয় এখন ইলিশ রফতানি খুলে দেয়ার সময় এসেছে। ইলিশের চাপের কারণে অন্য মাছের দামটা একটু পড়ে যাচ্ছে। রফতানি খুলে দেয়া হলে আমাদের বৈদেশিক অর্থ আসবে অপরদিকে অ্যাকোয়া কালচারে ব্যালেন্স তৈরি হবে। এক সময় ইলিশ পাওয়া যেত না বলে রফতানি বন্ধ করে দেয়া হয়ে হয়েছে। এখন অলিগলিতেও ইলিশ বিক্রি হচ্ছে।’

মৎস্য অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, ইলিশ ধরার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে ৪ লাখের বেশি জেলে জড়িত। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মিলিয়ে ইলিশের উপর নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা প্রায় ২৫ লাখ।

দেশের মোট উৎপাদিত মাছের প্রায় ১১ শতাংশ আসে ইলিশ থেকে। মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ইলিশের অবদান ১ শতাংশ বলেও মৎস্য অধিদফতর থেকে জানা গেছে। চলতি বছরই বাংলাদেশের ইলিশ মাছ ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই (জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশন) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে নানা উদ্যোগ
ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে সরকারের নানামুখী উদ্যোগ রয়েছে। মৎস্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন এসব উদ্যোগের কারণেই মূলত ইলিশের উৎপাদন প্রতিবছর বেড়েই চলছে। ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে প্রতিবছর নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত আট মাস জাটকা ধরা নিষিদ্ধ থাকে।

মৎস্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা দেখছি সারা বছরই ইলিশ ডিম দিচ্ছে। কারণ জুনের পর জাটকা ধরা পড়ার কথা না থাকলেও জটকা পাওয়া যায়। তাই ১৯৫০ সালের মাছ রক্ষা ও সংরক্ষণ আইন (প্রটেকশন এ্যান্ড কনজারভেশন ফিস অ্যাক্ট, ১৯৫০) সংশোধন করে সারা বছর জাটকা ধরা নিষিদ্ধের চিন্তাভাবনা করছি।’

ইলিশ রক্ষায় কারেন্ট জাল প্রায় বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, মার্চ-এপ্রিল মাসের দিকে জাটকা ধরা প্রতিরোধে নদীগুলোতে কম্বিং অপারেশন চালানো হয়। এছাড়া ওই সময় জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহও পালন করা হয়।

মৎস্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ১০ ইঞ্চি বা ২৫ সেন্টিমিটারের (ঠোঁট থেকে লেজের প্রান্ত পর্যন্ত) চেয়ে ছোট ইলিশ মাছকে জাটকা বলা হয়। চান্দ্র মাসের ভিত্তিতে প্রধান প্রজনন মৌসুম ধরে প্রতিবছর আশ্বিন মাসে প্রথম চাঁদের পূর্ণিমার আগে পরে মিলিয়ে মোট ২২ দিন ইলিশ ধরা, মজুদ, পরিবহন, সংরক্ষণ নিষিদ্ধ থাকে।

সামুদ্রিক মাছের প্রজনন ও সংরক্ষণে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সীমানায় প্রতিবছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন বাণিজ্যিক ট্রলারের মাধ্যমে সব ধরনের মাছ ও চিংড়ি আহরণ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। মৎস্য অধিদফতরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, সমুদ্রে ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ করার বিষয়টি বাংলদেশের মতো যাতে ভারত ও মিয়ানমারের সীমানায়ও বলবৎ থাকে সেজন্য আমরা কাজ করছি। দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের মিটিংয়ে বিষয়টি আমরা আলোচনা করব।

১৯৮৭ সাল থেকে ইলিশ উৎপাদনের চিত্র
১৯৮৭-৮৮ অর্থবছরে এক লাখ ৮৩ হাজার ৫০১ টন, ১৯৮৮-৮৯ অর্থবছরে এক লাখ ৯১ হাজার ৯৫২ টন ইলিশ মাছ আহরণ করা হয়। ১৯৮৯-৯০ অর্থবছরে উৎপাদন ১৯ দশমিক ৫২ শতাংশ কমে হয় এক লাখ ৮২ হাজার ১৬৭ টন। ১৯৯১-৯২ অর্থবছরে এক লাখ ৮৮ হাজার ৪৬২ টন, ১৯৯২-৯৩ অর্থবছরে এক লাখ ৯৭ হাজার ৮৩০ টন ইলিশ উৎপাদিত হয়।

এরপর ১৯৯৩-৯৪ অর্থবছরে আবার উৎপাদন কমে হয় এক লাখ ৯২ হাজার ৫৩১ টন। যদিও এর পরের বছর উৎপাদন বেড়ে হয় ২ লাখ ১৩ হাজার ৫৩৫ টন। কিন্তু ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরে উৎপাদন কিছুটা কমে হয় ২ লাখ ৭ হাজার ২৮৫ টন। ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন হয় ২ লাখ ১৪ হাজার ৪৩৪ টন। ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে আবার কমে যায় উৎপাদন, ওই বছর ২ লাখ ৫ হাজার ৭৩৯ টন ইলিশ উৎপাদিত হয়।

ইলিশ উৎপাদনের তথ্যে দেখা গেছে, ১৯৯৮-৯৯ সালে ২ লাখ ১৪ হাজার ৫১৯ টন, ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে ২ লাখ ১৯ হাজার ৫৩২ টন, ২০০০-০১ অর্থবছরে ২ লাখ ২৯ হাজার ৭১৪ টন, ২০০১-০২ অর্থবছরে ২ লাখ ২০ হাজার ৫৯৩ টন উৎপাদিত হয়েছে। ২০০২-২০০৩ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন ফের কমে ২ লাখ টনের নিচে নেমে যায়। ওই বছরে ইলিশের মোট উৎপাদন হয় এক লাখ ৯৯ হাজার ৩২ টন।

২০০৩-০৪ অর্থবছরে ইলিশ আহরণের পরিমাণ ছিল সর্বোচ্চ, ওই বছর এর আগের বছরের চেয়ে উৎপাদন বৃদ্ধির হার ছিল ২৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ। ২০০৩-০৪ অর্থবছরে ২ লাখ ৫৫ হাজার ৮৩৯ টন ইলিশ উৎপাদিত হয়েছে।

ইলিশের উৎপাদন হয়েছে ২০০৪-০৫ অর্থবছরে ২ লাখ ৭৫ হাজার ৮৬২ টন, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ২ লাখ ৭৭ হাজার ১২৩ টন, ২০০৬-০৭ অর্থবছরে ২ লাখ ৭৯ হাজার ১৮৯ টন, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ২ লাখ ৯০ হাজার টন।

এছাড়া ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ২ লাখ ৯৮ হাজার ৯২১ টন, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৩ লাখ ১৩ হাজার ৩৪২ টন, ২০১০-১১ অর্থবছরে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৮৪৫ টন, ২০১১-১২ অর্থবছরে ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৫১২ টন, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৩ লাখ ৫১ হাজার ২২৩ টন, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৩ লাখ ৮৫ হাজার ১৪০ টন ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ২১১ টন ইলিশ উৎপাদিত হয়েছে।

আরএমএম/ওআর/পিআর

আরও পড়ুন