ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

মাতৃমৃত্যু রোধে অভাবনীয় সাফল্যের পথে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০২:২৭ পিএম, ২৬ জুন ২০১৫

মাতৃমৃত্যু রোধে অভাবনীয় সাফল্য অর্জনের পথে রয়েছে বাংলাদেশ! ১৯৯০ সালে দেশে প্রতি লাখ জীবিত শিশু জন্ম দিতে গিয়ে ৫৭০ জন মায়ের করুণ মৃত্যু হলেও সর্বশেষ জাতিসংঘ প্রকাশিত মাতৃমৃত্যু জরিপে এ সংখ্যা ১৭০ জনে নেমে এসেছে।

চলতি বছরের মধ্যেই জাতিসংঘ ঘোষিত সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি)-২০১৫ অর্জনে মাতৃমৃত্যু হার ১৪৩ জনে নামিয়ে আনার টার্গেট পূরণে বাংলাদেশ সক্ষম হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর’বি) গবেষকরা।

চলতি সপ্তাহে তাদের প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন-২০১৪ তে মাতৃমৃত্যু রোধে এমডিজি-৫ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের এমন দৃঢ় আশাবাদ প্রকাশ করে সীমিত সম্পদ নিয়েও বাংলাদেশ কীভাবে এ সাফল্য অর্জনের চুড়ায় পৌঁছালো তা বিভিন্ন গবেষণার তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে ব্যাখ্যা করা হয়।

আইসিডিডিআর’বির একাধিক গবেষকের কাছে সাফল্যের নেপথ্যে কারণ জানতে চাইলে তারা জানান, আগের তুলনায় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মাতৃস্বাস্থ্য সেবার সুযোগ বৃদ্ধি, নারী শিক্ষার প্রসার, মোবাইল ফোনের ব্যবহারের সুযোগ ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কারণে মাতৃমৃত্যু হ্রাস পেয়েছে। আইসিডিডিআরবিসহ বিভিন্ন গবেষণায় মাতৃসেবা বৃদ্ধির আরো সুযোগ রয়েছে বলে তারা অভিমত ব্যক্ত করেন।

আইসিডিডিআরবির বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়. ২০০১সালে সন্তান জম্ম দিতে গিয়ে আনুমানিক ১২হাজার ১শ’১৪ মায়ের মৃত্যু ঘটে। ওই সময় যে হারে মাতৃমৃত্যু ঘটছিল সে হার অব্যাহত থাকলে ২০১০ সালে মাতৃমৃত্যুর সংখ্যা ১৪ হাজার ৩১০ জনে দাঁড়াতে পারতো। কিন্তু বাস্তবে ২০১০ সালে মাতৃমৃত্যু হার শতকরা ৫২ ভাগ হ্রাস পেয়ে মাত্র ৬ হাজার ৮শ’ ৪৮ জনে দাঁড়ায়।

দুই দফায় জাতীয়ভাবে (১৯৯৮ থেকে ২০০১ ও ২০০৭- ২০১০সালে) পরিচালিত বাংলাদেশ মাতৃমুত্যু জরিপ (বিএমএমএস), ছয়টি বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক হেলথ সার্ভেস (বিডিএইচএস) এবং আইসিডিডিআর’বির গবেষণায় মাতৃমুত্যু হ্রাসের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত পরিচালিত বিএমএমএস জরিপ অনুসারে প্রতি লাখ জীবিত সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে প্রতি বছর ৩২২ জন গর্ভবতীর মৃত্যু হতো। কিন্তু পরবর্তী (২০০৭-২০১০ সাল) বিএমএমএসে দেখা গেছে মাতৃমুত্যু হার প্রতিলাখে ১৯৪ এ নেমে এসেছে।

বর্তমানে যে হারে অর্থাৎ শতকরা ৫.৬ ভাগ হারে হ্রাস পাচ্ছে সে হার অব্যাহত থাকলে চলতি বছরের মধ্যে নির্ধারিত এমডিজি-৫ মাতৃমৃত্যু হার ৭৫ ভাগ হ্রাস করে ১৪৩ জনে নামিয়ে আনতে সক্ষম হবে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ মাতৃসেবাকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের সুযোগ উল্লেখ্যযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সার্ভিস (এমআইএস) প্রকাশিত স্বাস্থ্য বুলেটিন-২০১৪ এ বলা হয়, ২০১৩ সালে জাতিসংঘ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশে প্রতি লাখে জীবিত শিশু জন্মদান করতে গিয়ে মাতৃমৃত্যু হার ১৭০ জনে নেমে এসেছে। জানা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২০৩০ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যু হার ৬৩-তে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সম্প্রতি অবসরপ্রাপ্ত পরিচালক ( প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা) ডা. আবু জাফর মোহাম্মদ মুসা জাগো নিউজকে বলেন, ১৯৯০ সালে প্রতি লাখ জীবিত শিশু জন্মদানকালে মৃত্যুহার ছিল ৫৭০ জন। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের বিভিন্ন কার্যকর কর্মসূচির মাধ্যমে মাতৃ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার কারণে শতকরা ৭৫ ভাগ মাতৃমৃত্যু হার হ্রাসের টার্গেটের বিপরীতে বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই ৭০ ভাগ হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছে।

তিনি জানান, শুধু মাতৃমৃত্যুই নয়, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুরোধে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সাফল্য দেখিয়েছে। ১৯৯০ সালে প্রতি হাজার জাীবিত শিশুর মৃত্যুহার ১৪৪ থাকলেও ২০১৩ সালে তা ৪১ এ হ্রাস পেয়েছে। তবে দেশে নবজাতক মৃত্যুহার এখনো অনেক বেশি। পাঁচ বছরের যত শিশু মারা যায় তার শতকরা ৬০ ভাগই জন্মের ২৮ দিনের মধ্যে মারা যায়। তন্মধ্যে শতকরা ৩৭ ভাগের মৃত্যু হয় জন্মেম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে।

তিনি বলেন, এখনো আরো অনেক বেশি সংখ্যক মায়ের মৃত্যুরোধ করা সম্ভব। এ জন্য প্রশিক্ষিত ধাত্রী, কিশোরী বয়সে গর্ভধারণ রোধ, গর্ভবতী মায়ের প্রসবকালীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত ও পরিবার পরিকল্পনা সামগ্রীর চাহিদা সঠিকভাবে পূরণ করার ওপর গুরুত্ব প্রদান করতে হবে।  

স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন জাতীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশীদ ই মাহবুব বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে প্রতিটি ওয়ার্ডে ৬ হাজার জনসংখ্যার জন্য একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। তাই গর্ভবর্তী মায়ের প্রসবপূর্ব সময় থেকে প্রসব পরবর্তী প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা এই কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীদের মাধ্যমে করা অসম্ভব ব্যাপার নয়। বিগত দুই দশকে মাতৃমৃত্যু রোধে বাংলাদেশ ভাল সাফল্য দেখিয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প পরিচালক ড. মাখদুমা নার্গিস বলেন, মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীরা নিবেদিতভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। স্থানীয় কমিউনিটি গ্রুপ লিডারদের মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম তদারকি করা হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে মাতৃমৃত্যু হার আরো হ্রাস পাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এমইউ/বিএ/পিআর