তোয়ালের আড়ালে স্পেনে পাচার হচ্ছে নিষিদ্ধ কেটামিন
শুধুমাত্র অপারেশন থিয়েটারে অ্যানেস্থেসিয়ার জন্য ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে নিষিদ্ধ জি-কেটামিনের। স্পেনসহ ইউরোপে এখন কোকেনের বিকল্প হিসেবে ব্যাপক চাহিদা কেটামিনের। এরই সুযোগ নিয়ে বিদেশি চক্রের সঙ্গে যোগসাজশ করে দেশীয় একটি চক্র অভিনব কায়দায় কেটামিন পাচার করছে বিদেশে। বাংলাদেশে বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও সহজে সস্তা দামে মিলছে কেটামিন।
চক্রটি কেটামিন ওষুধটি গরমের পর নতুন তোয়ালেতে স্প্রে করে। এরপর তা শুকিয়ে স্পেনে পাঠাচ্ছে কুরিয়ারের মাধ্যমে। সেখানকার চক্রের সদস্যরা মাদক হিসেবে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে সেই তোয়ালে গরম করে সেখান থেকে বের করে আনে কেটামিন।
১০ মিলিলিটারের একটি জি-কেটামিনের ছোট বোতলে থাকে ৫০ মিলিগ্রাম নিষিদ্ধ কেটামিন। একেকটি তোয়ালেতে ১০০ মিলিগ্রাম কেটামিন পাচার হচ্ছে।
সোমবার রাতে রাজধানীর রূপনগর থানার পল্লবী দ্বিতীয় পর্বের ইস্টার্ন হাউজিংয়ের ব্লক সি এর ১৮৭ নং বাড়ি থেকে এমন একটি চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। গ্রেফতারকৃতরা হলেন মীর মঞ্জুর মোর্শেদ সানী, মো. মাহমুদুল হাসান চয়ন ও হাবিবুল্লাহ খান।
এ সময় তাদের কাছ থেকে ১৪৫টি জি কেটামিন লেভেলযুক্ত বোতলে রক্ষিত ১ লিটার ৪৫০ গ্রাম জি কেটামিন, ৩৪টি ১০০ গ্রাম জি-কেটামিনযুক্ত তোয়ালে, মোট ৩ দশমিক ৪ কেজি জি কেটামিন ও ১৮০টি জি-কেটামিনের খালি বোতল জব্দ করা হয়।
তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে একটি কুরিয়ার সার্ভিস থেকে কেটামিনযুক্ত ১৮টি তোয়ালে উদ্ধার করা হয়। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং প্রধান মুফতি মাহমুদ খান বলেন, জি-কেটামিনের বোতল একটি সেনসিটিভ ওষুধ যা অপারেশনাল ক্লিনিক কিংবা হাসপাতালে ছাড়া বিক্রি নিষিদ্ধ। কিন্তু চক্রটি কেটামিন ওষুধটি মাদক হিসেবে ব্যবহার ও বিক্রির জন্য দেশের বিভিন্ন ফার্মেসি থেকে সংগ্রহ করে। এরপর তারা ১০ মিলিলিটার একটি বোতলের মুখ খুলে বিষাক্ত গ্যাস বের করে দিত। পরবর্তীতে স্টিলের বোলে ৩০মিনিট রেখে কেটামিন তাপ দিয়ে গরম করে ঘনরুপ ধারণ করে সাদা নতুন তোয়ালেতে স্প্রে করে। এরপর তোয়ালে শুকিয়ে গেলে তা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে স্পেনে পাচার করে।
গ্রেফতার মীর মঞ্জুর মোর্শেদ সানি জানান, তারা ৪/৫ মাস যাবত এই অভিনব কায়দায় কেটামিন মাদক পাচার করে আসছেন। ইতোমধ্যে তারা ৪টি চালান পাঠাতে সক্ষম হয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে সানি আরও জানান, তার ভাই মাহাদী মঞ্জুর মান্না স্পেনে থাকেন ১৫ বছর। তার পরিচিতি স্প্যানিশ নাগরিক আরামডো গঞ্জালিও’র বুদ্ধি ও পরিকল্পনায় তারা কেটামিন পাচারের ব্যবসায় নামেন।
মঞ্জুর মান্না ও আরামডো গঞ্জালিও এজন্য গত ৪ মাস আগে বাংলাদেশে আসেন। কেটামিন পাচারের কৌশল শিখিয়ে দেন। পরবর্তীতে গত ২ মাসে পরিকল্পনা মাফিক ৪টি চালান পাঠাতে সক্ষম হন তারা।
মুফতি মাহমুদ খান বলেন, আমরা কুরিয়ার সার্ভিসে নজরদারি রাখছি। যে কুরিয়ার সার্ভিসের জড়িত থাকার বিষয়ে অভিযোগ আসছে তা তদন্ত চলছে। তিনি বলেন, জি-কেটামিন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যাল। বাংলাদেশে ৫০ মিলিগ্রাম ওজনের একেকটি জি-কেটামিন বিক্রি হয় ৮০ টাকায়। কিন্তু স্পেনে যাবার পর কেটামিনের মূল্য বেড়ে যায়। ১০০ মিলিগ্রাম কোকেনের বিকল্প মাদক কেটামিন বিক্রি হয় ২ লাখ টাকায়।
জেইউ/ওআর/আরআইপি