ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

রাতের হাতিরঝিল : অপরাধীদের দৌরাত্ম্যে হার মানছে যাবতীয় সৌন্দর্য

প্রকাশিত: ০৮:২৯ পিএম, ২৩ জুন ২০১৫

গোধুলির আধো আলো আধো ছায়ার খেলায় হার মানে দিনের আলো। সন্ধ্যার উপলক্ষ্য বাহারি আলো সৌন্দর্য্য প্রিয় মানুষকে করে আপ্লুত। রাতের শহর মানেই হাজার বাতির ঝলকানি। হরেক রংয়ের গল্প মানে হাতিরঝিলের দৃশ্যপট। তবে রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হরেক বর্ণের আলোকচ্ছটা মিইয়ে যেতে থাকে। অন্ধকারকে পুঁজি করে অপরাধীদের নানামুখী দৌরাত্ম্যের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে দর্শনার্থীরা।

আলো গ্রাস করতে পারেনি এমন সব স্থানে দুর্বৃত্তপনার কাছে আটকে পড়ে যাবতীয় সৌন্দর্য। রাতের গভীরতার সাথে সাথে হাতিরঝিল চলে যায় ভবঘুরে, ছিনতাইকারী, মাদকসেবীসহ নানা অপরাধীর দখলে। চলে অনৈতিক কাজও।

উত্তর ও দক্ষিণ দিকে পুলিশের চেকপোস্ট থাকলেও তা কোনো কাজে আসছে না। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে দায় নিচ্ছেন না সংশ্লিষ্ট এলাকার ট্রাফিক কর্মকর্তারা। উত্তর-দক্ষিণ বিভাজনে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার কথা শোনা যায়। তারা বলছেন এ এলাকায় ট্রাফিকের কাজ মূলত: ট্রাফিক সংশ্লিষ্ট বিষয় দেখভাল করা। অপরাধ সংক্রান্ত বিষয় দেখার জন্য থানা পুলিশ রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় সর্বত্রই ভবঘুরে আর বখাটে মাদকসেবীদের দখলদারিত্ব। রমজানের পবিত্রতা নুইয়ে পড়েছে সেখানে। কোথাও দল বেঁধে চলছে নেশা। রাত যত বাড়তে থাকে ততই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে পরিবেশ। বাড়তে থাকে ছিনতাইকারী, মাদকসেবী আর ভাসমান দেহজীবীদের সংখ্যা।

প্রগতি স্মরনীর বেরসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউআইটিএস এর আইন অনুষদের শিক্ষার্থী আসিফ গত রোববার রাতে হাতিরঝিলে ঘুরতে এসে বখাটেদের খপ্পড়ে পড়ে নিজের মোবাইল ও টাকা খুইয়েছেন।

আসিফ জাগোনিউজকে বলেন, গ্রাম থেকে ঢাকায় পরীক্ষা দিতে আসা এক বড় আপু ও বন্ধু জাকিরকে নিয়ে নিয়ে ঘুরতে আসেন হাতিরঝিলে। সেখানে রাত সাড়ে ৯টার দিকে ৮/১০ জন বখাটেদের খপ্পড়ে পড়েন তারা। এরপর সম্মান আর হেনস্তা হওয়ার ভয়ে আসিফ নিজের একটি দামি মোবাইল ও মানিব্যাগে থাকা ১৫০০ টাকা দিয়ে রেহাই পান। এরকম আরও অনেকের অভিযোগ পাওয়া গেলেও দেখার যেন কেউ নেই।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রামপুরা পয়েন্টের অদূরে এবং এফডিসি মোড়সংলগ্ন তেজগাঁও পয়েন্টে দুটি ব্যারিকেড। এখানে চেকপোস্ট থাকলেও রাত সোমবার পৌনে ১১টা পর্যন্ত কোনো পুলিশ সদস্যের টিকিটিও মেলেনি।

এফডিসি মোড় হয়ে হাতিরঝিলের শুরুতেই অন্ধকার। রামপুরা পয়েন্টেও আলোর স্বল্পতার সুযোগে বেড়েছে ছিনতাইয়ের ঘটনাও। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারির অভাবে রাতের হাতিরঝিল অনিরাপদ হয়ে পড়ছে বলে মনে করেন দর্শনাথীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাতিরঝিলের সঙ্গে লাগোয়া ৩৫টির বেশি গলি পথ। বাসাবাড়ির গেট ভেদ করে সেখানে পৌঁছে না আলো। রাত ১০টার পর গুলশান পয়েন্ট দিয়ে ঢুকে পড়ে নানা বয়সি মানুষ। নিকেতন ঘেঁষা নাইট ক্লাবের ডিজে পার্টির সদস্যরাও আসে হরহামেশা। তাদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণে ও খোলামেলা পোশাকে রীতিমতো বিব্রত হচ্ছেন সাধারণ দর্শনাথীরা।

গুলশান দিকের মুখে রিক্সা চালান আফসার উদ্দিন। তিনি বলছেন, ‘নিয়ম ও লাজ লজ্জার বালাই নাই। প্রায় রাতেই তরুণ-তরুণীদের উচ্ছৃঙ্খলতা চলে এখানে। রমজানেও তা বন্ধ হয় নি।’

বাড্ডা, গুলশান, রামপুরা, রমনা ও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার সীমানায় এই হাতিরঝিল এলাকা। হাতিরঝিলের মাঝ বরাবর দুই পয়েন্টে পুলিশের অবস্থান দেখা গেলেও প্রায় এলাকাই অরক্ষিত। এই সুযোগে রাতে স্বল্প আলোর স্থানগুলোতে আপত্তিকর কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে দেখা যাচ্ছে কাউকে কাউকে।

হাতিরঝিল তেজগাঁওয়ের কুনিপাড়া ও বেগুনবাড়ী অংশের বস্তিঘরগুলোর সঙ্গেই লাগোয়া রয়েছে ঝিলের রাস্তা-ফুটপাত। সম্প্রতি সেখানে বহিরাগত কোনো দর্শনার্থী গেলেই নানাভাবে হেনস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

কারওয়ান বাজারের দিক থেকে প্রবেশপথের ডান দিকে আলোর ব্যবস্থা নেই। এরকম আরও কয়েকটি স্থানে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নেই। মগবাজার ও তেজগাঁও এলাকার আশপাশে রয়েছে কিছু বস্তি এলাকার সংযোগ। এসব এলাকাকে ঘিরে চলে চুরি, ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ।

এব্যাপারে হাতিরঝিল তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার ট্রাফিক পুলিশের সহকারি কমিশনার(এসি) আবু ইউছুফ জাগোনিউজকে বলেন, হাতিরঝিল এলাকায় যান চলাচলে কোনো সমস্যা যাতে না হয় সেই বিষয়টিই ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা দেখভাল করে থাকে। তবে সামনে কোনো অপরাধকর্ম হলে তা ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।

২/৩ মাস আগে এখানে কিছু অপরাধ কর্মের অভিযোগ পেলেও তা এখন কমে গেছে বলে দাবি করেন তিনি।

এব্যাপারে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মশিউর রহমান বলেন, আমাদের টহল টিম নিজ থানা এলাকায় টহল দেয়ে নিয়মিত। রমনা থানা সংশ্লিষ্ট এরিয়ায় আপত্তিকর কর্মকান্ড কিংবা অপরাধ কর্মকান্ড হয় না বলে দাবি তার।

তবে রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মাহবুবুর রহমান বলেন, হঠাৎ কিছু বখাটে ও ছিনকারীর উপদ্রব বাড়ে। সম্প্রতি কিছু অভিযোগ পেয়েছন বলেও স্বীকার করেন তিনি। তবে রমজানে পুলিশের টহল টিম আরও বেশি নজরদারি অব্যাহত রেখেছে বলে জানান তিনি।

জেইউ/টিআই