বর্ষণে পথে পথে ভোগান্তি, দায় কার?
বঙ্গোপসাগরের সৃষ্ট নিম্নচাপের নিম্নচাপের প্রভাবে ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছে। হেমন্তের এমন টানা বৃষ্টিপাতে জলাবদ্ধতায় কবলে পড়েছে নগরবাসী। বৃষ্টির পানিতে রাজধানীর অধিকাংশ সড়ক তলিয়ে গেছে। ডুবে যাওয়ায় সড়কে ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল। সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। তিনদিন ধরে টানা বর্ষণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
জলাবদ্ধতা
টানা বর্ষণে রাজধানীর কোথাও হাঁটু সমান, কোথাও তার চেয়েও বেশি। এক দিকে জলাবদ্ধতায় পরিবহনের ধীর গতি, অন্যদিকে যানজট। চারিদিকে থৈ-থৈ পানি। এর মধ্যে দিয়ে ধীরগতিতে চলা যানবাহনগুলো দেখে মনে হচ্ছে কোনো নদীর উপর দিয়ে বিভিন্ন যানবাহন পার হচ্ছে।
টানা বৃষ্টিতে রাজধানীর মালিবাগ, শান্তিনগর, রাজারবাগ, মৌচাক, ফকিরাপুল, কমলাপুর, টিটিপাড়া, বনশ্রী, রামপুরা, খিলগাঁও, বাসাবো, পুরান ঢাকা, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, মিরপুর ১১, কাজীপাড়া, সেনপাড়াসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সড়কে তলিয়ে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন রাজধানীবাসী।'
যানবাহনের অপেক্ষা
রাজধানীর প্রায় সব রাস্তায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় বাসের ধীরগতিতে দেখা দিয়েছে দীর্ঘ যানজটের। এ ছাড়া বিভিন্ন রাস্তায় যানবাহন কমে গেছে। ফলে বৃষ্টি উপেক্ষা করে কর্মক্ষেত্রে বের হওয়া মানুষ পড়েছে বিড়ম্বনায়।
রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় ছাতা হাতে দাঁড়িয়েছিলেন নাজমুল ইসলাম নামের একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। তিনি বলেন, বৃষ্টির কারণে সঠিক সময় অফিসে যেতে পারিনি। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও বাস পাচ্ছি না। জলাবদ্ধতার কারণে অনেক বাস আটকা পড়েছে।
মিরপুর এলাকার কাজীপাড়া সড়কে হাটু পানি, এর মধ্যেই অনেকে বাস না পেয়ে হাঁটতে শুরু করেছেন। জলাবদ্ধতার যানজটের যে দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়েছে তা ১০ নম্বর গোলচত্বর পেরিয়ে গেছে।
বাস থেকে নেমে প্যান্ট গুটিয়ে হাটু পানির মধ্যেই হেঁটে যাচ্ছিলেন এরশাদ আলী নামের একজন মধ্যবয়সী। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এই রাজধানীতে কি মানুষ বসবাস করে? বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়েছি সকাল থেকে এরপর হাটু পানি পেরিয়ে বাসে ওঠেছি কিন্তু জলাবদ্ধতার কারণে তা যেতে পারছে না। সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘ যানজট। আধা ঘণ্টাতে বাসের চাকা একটুও গড়ায়নি।
সিটি কর্পোরেশন যা বলছে
বৃষ্টিতে রাজধানীতে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয় এটা নতুন নয়। তবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা বারবার সংস্কার হলেও কোনো সমাধান মিলছে না। বরং রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির ফলে দুর্ভোগের মাত্রায় আরও নতুন কিছু যুক্ত হয়। এ বিষয়ে বরাবরই নিশ্চুপ থাকে সিটি কর্পোরেশন।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী খান মোহম্মাদ বিলাল জাগো নিউজকে বলেন, অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে রাজধানীজুড়েই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে আমারা সার্বিকভাবে সর্বোচ্চ কাজ করার চেষ্টা করছি।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত সহকারী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম বলেন, গুলশান এলাকাসহ বেশ কিছু এলাকায় কোনো জলাবদ্ধাতা নেই। তবে যে সব এলাকায় জলাবদ্ধতা আছে তা নিরসনে সেসব এলাকায় কাজ চলছে।
তিনি আরও বলেন, এ জলাদ্ধতার দায় আমাদের না, এটা ওয়াসার কাজ। তারপরও জলাবদ্ধ জায়গাগুলোর প্রতিটি পয়েন্টে আমাদের কর্মীরা কাজ করছে। রাজধানীর খাল দখল হয়ে থাকার কারণে এসব পানি সহজে বের হতে পারছে না, তাই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
জলাবদ্ধতা নিরসনে ‘জেট অ্যান্ড সাকার মেশিন’ কোথায়?
জলাবদ্ধতা নিরসনে ইতালি থেকে অত্যাধুনিক একটি মেশিন কিনেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। ‘জেট অ্যান্ড সাকার মেশিন’ জেট অ্যান্ড সাকার মেশিন নামের এই যন্ত্র দিয়ে প্রতি ১০ মিনিটে ১২০ মিটার দীর্ঘ ড্রেন সম্পূর্ণ পরিষ্কার করা যায়। অথচ এতো জলাবদ্ধতার মাঝেও রাজধানীর কোথাও এ মেশিন ব্যবহার করতে দেখা যায়নি।
সাকার মেশিন সম্পর্কে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘এই মেশিন নর্দমায় আটকে থাকা ময়লা পরিষ্কার করতে পারে কিন্তু অতিরিক্ত বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার পানি বের হতে পারছে না। এ ছাড়া রাজধানীর আশেপাশের খাল দখল থাকার কারণে এ জলাবদ্ধতা। পানি বের হওয়ার রাস্তায় না থাকলে এ মেশিন দিয়ে তো আর পানি বের করা যাবে না। তারপরও আমাদের লোকজন জলাবদ্ধতা নিরসেনে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।’
জলাবদ্ধতার দায় কার?
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিটি কর্পোরেশনের ড্রেনের পানি গিয়ে জমা হচ্ছে ঢাকা ওয়াসার ড্রেনে ও খালে। মূলত ওয়াসার ড্রেনের পানি বের হচ্ছে না, পানি বেড়েই চলছে। বলা হয়ে থাকে, ওয়াসার কাজের ওপর নির্ভর করে কর্পোরেশনের কাজ। ওয়াসার পাম্প থেকে পানি অপসারণ করা হয়। যদি ওয়াসা ঠিকভাবে পানি অপসারণ না করে তাহলে শহরের জলাবদ্ধতা কমবে না। কিন্তু একটু বৃষ্টি হলেই জলের মধ্যে বদ্ধ হয়ে যায় রাজধানীবাসী। এ দায় আসলে কার?
এএস/আরএস/এমএস