জল ও যানজটে দুর্ভোগ চরমে
এ যেন ঠিক আকাশ ভাঙা বৃষ্টি, দিন নেই রাত নেই কেবলই অবিরাম ধারায় ঝরছে। মৌসুমী বায়ু (বর্ষা) বিদায় নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই অঝোর বৃষ্টির কারণ স্থল নিম্নচাপ। গত দু’দিনের ক্রমাগত বৃষ্টিতে জনজীবনে নেমেছে অস্বাভাবিকতা। জল ও যানজটে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন রাজধানীবাসী। বৃষ্টিতে বেশিরভাগ এলাকা ছাড়াও ঢাকার অনেক রাজপথ পানিতে থৈ-থৈ করছে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থান করা স্থল নিম্নচাপের প্রভাবে শনিবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এটা আগামী ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। তবে সোমবার থেকে অবস্থার উন্নতি হবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত বহাল রাখতে বলে আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় এক থেকে দুই ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাসও হতে পারে।
শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে গোপালগঞ্জে ২৭১ মিলিমিটার। এ সময়ে ঢাকায় ১৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
শনিবার সকালের দিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জলাবদ্ধতা চরম আকার ধারণ করেছে। মাতুয়াইল, ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, দনিয়া, গুলিস্তান ও সেগুনবাগিচা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে বেশির ভাগ রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। মাতুয়াইলের বেশিরভাগ বাড়িতে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করেছে। মাতুয়াইল ও ডেমরার রাস্তায় কোথাও কোমর সমান পানি দেখা গেছে।
এছাড়া রাজধানীর মানিকনগর, বাসাবো, মালিবাগ, শান্তিনগর, রাজারবাগ, মুগদা, মিরপুর, মালিবাগ, রামপুরা, খিলগাঁও ও বনশ্রী এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।
শনিবার সরকারি বন্ধ হলেও বেসরকারি চাকরিজীবী ও শ্রমজীবী মানুষকে বাইরে বের হতে হয়েছে। বাইরে পা রেখেই দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে তাদের। ঘরে থেকে নেমেই পথে পানি। বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছানোর পর নতুন বিপত্তি, কোথাও গাড়ির সংকট আবার কোথাও যানজটে পড়ে নড়ছে না গাড়ি। বৃষ্টি বিপত্তি পেরিয়ে গাড়িতে উঠেও শান্তি নেই, লক্কর-ঝক্কর গাড়ি চুইয়ে পানি পড়ে যাত্রীর উপর।
রায়েরবাগ-গুলিস্তান রুটে চলাচলকারী শ্রাবণ পরিবহনের একটি গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-জ ১৪০৩৪৭) থেকে গুলিস্তানে নেমে যাত্রী ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘বাইরের চাইতে তো গাড়ির ভেতরে বেশি পানি পড়ে। দেখেন ভাই একেবারে পুরাপুরিই ভিইজ্যা গেছি। কে দ্যাখব এগুলা?’
মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে উঠতে যানজট দেখা গেছে। কাজলা থেকে ফ্লাইওভারে উঠার রাস্তার পাশে নিচ দিয়ে যাওয়ার রাস্তাটি বৃষ্টিতে ভেঙে বিভৎস্য আকার ধারণ করেছে। এ রাস্তায় গাড়ি চলতে হচ্ছে একেবারে ধীরে ধীরে তাই এ পথে যানজট রয়েছে।
গুলিস্তানে বঙ্গবন্ধু স্কয়ার ও জিরো পয়েন্টে রাস্তায় পানি থই থই। পানি চিরে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গুলিস্তান, পল্টন ও প্রেসক্লাব এলাকায় যানজট দেখা যায়নি।
অঝোর ধারায় বৃষ্টির সঙ্গে রয়েছে জোরালো বাতাস। ছাতা নিয়ে বেরুলেও রক্ষা হয়নি কারো। জোরালো বাতাসে মুহূর্তে অনেকের ছাতা উল্টে কুমরো ফুল হয়ে যেতে দেখা গেছে। বৃষ্টির জন্য বেশ বেলা হয়ে যাওয়ার পরও দোকানপাটও তেমন খোলেনি। গুলিস্তানের ফুটপাতগুলো ফাঁকা পড়ে থাকতে দেখা গেছে। নিরুপায় হয়ে জীবিকার তাগিদে বাইরে বের হওয়া অনেককেই বৃষ্টির তোড়ে টিকতে না পেরে বিভিন্ন শপিং মলে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে। গুলিস্তান শপিং সেন্টারের সামনে কোন কোন হকারকে ছাতা বিক্রি করতে দেখা গেছে।
৩ নম্বর সতর্ক সংকেত বহাল
শনিবার সকালে আবহাওয়ার সতর্কবার্তায় জানানো হয়েছে, স্থল নিম্নচাপটি উত্তর ও উত্তর-পূর্বদিকে অগ্রসর হয়ে শনিবার সকাল ৯টায় পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় বায়ু চাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে এবং গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি অব্যাহত রয়েছে।
এজন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে সতর্কবার্তায়।
আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ জানান, নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠী, পিরোজপুর, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা এবং তাদের কাছাকাছি দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে এক থেকে ২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
তিনি আরও জানান, উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
আরএমএম/এআরএস/এমএস