কীটনাশক মিশ্রিত লিচু খেয়েই ৮ শিশুর মৃত্যু : আইইডিসিআর
দিনাজপুরে কীটনাশক মিশ্রিত লিচু খেয়ে আট শিশুর অকাল মৃত্যু হয়েছে। রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমান মঙ্গলবার সকালে জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, রোগতত্ত্ব গবেষণার প্রাপ্ত প্রাথমিক অনুসন্ধান ফলাফলের ভিত্তিতে এনডোসালফিন (endosulphin) গ্রুপের কীটনাশক মিশ্রিত লিচু খেয়ে শিশুদের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। জনস্বাস্থ্য ইনষ্টিটিউটের ন্যাশনাল ফুড সেইফটি ল্যাবরেটরিতে ২৯ ধরণের কীটনাশক পরীক্ষা হয়। কিন্তু সেখানে এনডোসালফিন পরীক্ষার সুযোগ না থাকায় এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি। স্থানীয় শিশুদের সংগ্রহিত রক্তের নমুনা পরীক্ষার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি আটলান্টায় পাঠানো হবে।
তিনি জানান, দিনাজপুরের লিচুসহ বিভিন্ন বাগানে উৎপাদনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন দফায় বাগানিরা বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক, এন্টি ফাঙ্গাল ও গ্রোথ হরমোন ব্যবহার করে। আইইডিসিআরের তদন্ত দল ওই এলাকায় ১৫দিন অবস্থান করে আউটব্রেক ইনভেষ্টিগেশনের যথাযথ গাইড লাইন অনুসরণ করে প্রায় নিশ্চিত হয়েছে বিষাক্ত কীটনাশক পানেই শিশুদের মৃত্যু হয়েছে।
ইতিপূর্বে ২০১২ সালে একই এলাকায় বাগানের বিষাক্ত লিচু খেয়ে ১৩ শিশুর করুণ মৃত্যু হওয়ার পর স্থানীয় চিকিৎসকরা মৃত্যুর কারণ ম্যানেনজাইটিস বললেও পরবর্তীতে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষায় বিষাক্ত কেমিকেল মিশ্রিত লিচু খেয়ে মৃত্যু হয়েছিল বলে নিশ্চিত হন রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা।
জানা গেছে, গত তিন সপ্তাহেরও কম সময়ের ব্যবধানে দিনাজপুরের বীরগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলায় লিচু খেয়ে ৯ শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এ সব শিশুদের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে বীরগঞ্জ উপজেলাতেই চার শিশুর মৃত্যু হয়।
শিশু মৃত্যুর খবর পেয়েই আইইডিসিআরের ডা. আহমেদ শহিদ শরীফ ও রাবেয়া সুলতানা নামের দ’জন রোগতত্ত্ববিদের নেতৃত্বে একটি তদন্ত দল ওই এলাকা পরিদর্শন করে।
তারা সেখানে ১৫দিন অবস্থান করে মৃত শিশুর পরিবারের সদস্য ও এলাকার স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানতে পারেন, স্থানীয় লিচুসহ অন্যান্য বাগানের গাছে ও মাটিতে বহু প্রকারের অনুমোদিত ও অনুমোদনহীন বিষাক্ত কেমিকেল ছিটানো হয়।
স্থানীয়রা জানান, শিশুরা সেখানে খেলাধুলা করতে গিয়ে মাটিতে পড়ে থাকা লিচু ও ভুট্টা কুড়িয়ে খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুরা মারা যায়। তারা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার জন্য নমুনা হিসেবে লিচু ও ভুট্টা এবং স্থানীয় শিশুদের রক্ত সংগ্রহ করে।
জনস্বাস্থ্য ইনষ্টিটিউটের ন্যাশনাল ফুড সেইফটি ল্যাবরেটরিতে লিচু ও ভুট্টা ও রক্তের নমুনা পরীক্ষার জন্য বারডেম হাসপাতালে পাঠানো হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ৯ জুন দিনাজপুরের শিশু মৃত্যুর পর নমুনা হিসেবে লিচু ও ভুট্টা মহখালী জনস্বাস্থ্য ইনষ্টিটিউটের ন্যাশনাল ফুড সেইফটি ল্যাবরেটরিতে (নমুনা নং ৪৯০ ও ৪৯১) পাঠানো হয়েছিল। ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় লিচু ও ভুট্টায় সামান্য ফরমালডিহাইড পাওয়া গেলেও তা পরিমানে খুবই কম ছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ন্যাশনাল ফুড সেইফটি ল্যাবরেটরির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, লিচু ও ভুট্টাতে বিষাক্ত কেমিকেল ছিল। তবে তাদের সব ধরনের কেমিকেল পরীক্ষার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না থাকায় এবং এগুলো পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন ধরনের রি-এজেন্ট প্রয়োজন হওয়ায় তারা পরীক্ষার মাধ্যমে কি ধরনের কেমিকেল ছিল তা বের করতে পারেননি।
আইইডিসিআরের পরিচালক ড.মাহমুদুর রহমানের কাছে শিশু মৃুত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়ার পদ্ধতির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রোগতত্ত্ব গবেষণার সঠিক গাইডলাইন অনুসরণ করে ব্যাপকভাবে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও পারিপার্শ্বিক বিবেচনায় তারা নিশ্চিত বিষাক্ত কীটনাশক পানেই শিশুদের মৃত্যু হয়েছে।
তবে অনুসন্ধান এখনো চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা রক্তের নমুনা সিডিসি আটলান্টাতে পাঠানোর চিন্তাভাবনা করছি। ২০১২ সালে পাঠানো নমুনায় বিষাক্ত কীটনাশক থাকার প্রমান পাওয়া গিয়েছিল।
এমইউ/এআরএস/এমএস