প্রতিবন্ধী অধিকার ও সুরক্ষা আইন বাস্তবায়নের দাবি
প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০১৩-এর সুষ্ঠু বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে প্রতিবন্ধী নাগরিক ঐক্য নামে একটি সংগঠন। সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তায় আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধন থেকে বক্তরা বলেন, আজ ৯ অক্টোবর আইনটির চতুর্থ বছর পূর্তি হয়েছে। কিন্তু আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি দীর্ঘ চার বছরে আইনের তফসিলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সুরক্ষা কার্যক্রম হিসেবে যে ৮২টি কার্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তার একটিও রাষ্ট্র বাস্তবায়ন করেনি।
এমনকি জনগোষ্ঠীর ম্যাগনাকার্টখ্যাত এই আইন সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়নি। আইন প্রণয়নের পর জাতীয় সংসদে ৪টি জাতীয় বাজেট পাস হয়েছে। কিন্তু একটা বাজেটেও আইনে বর্ণিত কার্যক্রমগুলো বাস্তবায়নের জন্য সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ রাখা হয়নি বলেও অভিযোগ করা হয়।
মানববন্ধনে বক্তরা আরও বলেন, আইনটি বাস্তবায়নের জন্য উপজেলা, শহর, জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে কমিটি গঠনের কথা থাকলেও অধিকাংশ কমিটি এখনো গঠিত হয়নি। আার যে কমিটিগুলো গঠিত হয়েছে, সেই কমিটিগুলোর সভা অনুষ্ঠানসহ অন্যান্য কার্যক্রম দেখা যায় না।
তারা বলেন, প্রতিবন্ধীদের জন্য ক্যাডার সার্ভিস বা দ্বিতীয় ও প্রথম শ্রেণির পদে ১ শতাংশ কোটা সুবিধা থাকলেও বাস্তবে এই হারে কোটায় নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ অনুযায়ী প্রতিবন্ধীদের উপযুক্ত কর্মক্ষেত্র বা পদ চিহ্নিত করার কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত এমন কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বা নিয়োগ পরীক্ষায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য শ্রুতিলেখক ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও যথাসময়ে উপযুক্ত শ্রুতিলেখক ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয় না।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ বাস্তবায়নের জন্য মানববন্ধন থেকে ১০টি দাবি জানানো হয়। এগুলো হলো- ১. প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ অনুযায়ী গঠিত কমিটির বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে এবং জাতীয় নির্বাহী ও জাতীয় সমন্বয় কমিটির সভা আয়োজন করতে হবে।
২. বিশেষ নিয়োগের মাধ্যমে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মের মোট পদের বিপরীতে ৫ শতাংশ এবং ক্যাডার সার্ভিস, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মের মোট পদের ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে হবে।
৩. শ্রতিলেখক বিষয়ক প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত ও অপসারণ করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুসৃত শ্রুতিলেখক সংক্রান্ত নীতি সার্বজনীন করতে হবে।
৪. ঢাকাসহ সকল মহানগরের প্রতিটি রুটে এবং ৬৪টি আন্তঃজেলা সড়ক পথে প্রবেশগম্য বাস সার্ভিস চালু করতে হবে।
৫. গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ সংশোধন করে প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের সকল স্তরের কমিটিতে ৫ শতাংশ পদ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৬. অবিলম্বে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি উন্নয়ন অধিদফতর প্রতিষ্ঠা ও সক্রিয় করতে হবে।
৭. প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩-এর তফসিলে বর্ণিত কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয়ভিত্তিক বাজেট ও অর্থ বরাদ্দ করতে হবে।
৮. প্রচলিত নির্মাণ আইন সংস্কারের মাধ্যমে গণস্থাপনাগুলো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উপযোগী করার উদ্যোগ নিতে হবে। উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিতে হবে।
৯. বাংলা ইশারা ভাষা ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিতে হবে এবং এক বছরের মধ্যে কার্যকর করতে হবে।
১০. প্রত্যেকটি বিভাগীয় শহরে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মেয়ে শিশুদের জন্য রিসোর্স স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
এমএএস/এনএফ/আইআই