ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

প্রবীণদের জন্য নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি

মুরাদ হুসাইন | প্রকাশিত: ০৫:০৭ এএম, ০১ অক্টোবর ২০১৭

ভালো নেই প্রবীণরা। শেষ বয়সে নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছেন তারা। সকলে থেকেও যেন নিঃস্ব। আদর, স্নেহ, মমতা আর বুকভরা ভালোবাসা দিয়ে যাদের বড় করেছেন শেষ বয়সে তাদের কাছেই আজ পর! সব থাকার পরও যেন পরিবারের সঙ্গে থাকা-খাওয়ার জায়গাটুকুও মেলে না। জীবনের বাকী সময় কাটাতে হয় বৃদ্ধাশ্রমে। শিক্ষিত সমাজে এর প্রবণতা অধিক। জীবনে বার্ধক্য নেমে এলে নিরাপত্তাহীনতায় জীবন কাটান তাঁরা।

আজ ১ অক্টোবর (রোববার), আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস। প্রতি বছরের মত এবারও বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে এ দিনটি। এবার প্রবীণ দিবসের প্রতিপাদ্য হলো ‘আগামীর পথে, প্রবীণের সাথে’।

দীঘদিন ধরে প্রবীণদের নিয়ে গবেষণা ও তাদের কল্যাণে কাজ করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রবীণ হিতৈষী সংঘের মহাসচিব অধ্যাপক ড. এ এস এম আতীকুর রহমান। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রায় ৮ শতাংশ প্রবীণ রয়েছেন। যার সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ। এটি খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

‘দেশের ১৭ কোটি মানুষের সংখ্যায় বর্তমানে প্রবীণের সংখ্যা কম হলেও আজকের তরুণরা আগামীতে প্রবীণ হবেন। বার্ধক্যজনিত কারণে তারা কর্মক্ষম হারিয়ে ফেলবেন। এই বিশাল সংখ্যক প্রবীণদের সামাল দেয়াটা রাষ্ট্রের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়বে। তাই প্রবীণদের জন্য নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।’ -বলেন ড. আতীকুর রহমান।

জরাবিজ্ঞানীদের এ পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে প্রবীণদের সংখ্যা বিস্ময়কারভাবে বাড়ছে। ১৯৯৫ সালের ৫৪ কোটি বিশ্বের প্রবীণ জনসংখ্যা আড়াই গুণ বেড়ে ২০২৫ সালে ১২০ কোটিটে দাঁড়াবে। এ ছাড়া ২০৫০ সাল নাগাত তা ২০০ কোটিতে ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এত প্রবীণ জনগোষ্ঠিীর বার্ধক্যের ধাক্কা মোকাবেলায় প্রয়োজীয় চিন্তাভাবনা, প্রস্তুতি ও ব্যবস্থা নেই বাংলাদেশে। গবেষক শিক্ষক আতীকুর রহমান বলেন, ‘বর্তমান রাষ্ট্রপতি ৬০ বছরের তদুর্ধ বয়সী বাংলাদেশিদের ‘সিনিয়র সিটিজেন’ আখ্যা দিয়ে সম্মানিত করেছেন। অথচ রাষ্ট্র সেই মর্যাদা প্রবীণদের আজও দেয়নি।’

অবসর গ্রহণের বয়স ৩-৫ বছর বৃদ্ধি অথবা অবসরের যাওয়া মানবসম্পদকে দেশের বিভিন্ন জাতিগঠন এবং উন্নয়নমূলক কর্মসূচিতে বিকল্পভাবে কাজের সুযোগ সৃষ্টি করার সুপারিশ করেন আতীকুর রহমান।

jagonews24

তিনি বলেন, ‘দেশের প্রবীণদের বয়স্ক ভাতা দেয়া হচ্ছে, কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। সকলে তা পায়ও না। এ ভাতা সর্বজনীন করতে হবে। তাদের সুষ্ঠু রাখতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বাৎসরিক ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। এটিও চাহিদার চাইতে সীমিত। এ অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, প্রবীণদের জন্য প্রতিটি জেলায় একটি করে বৃদ্ধশ্রম তৈরি করা দরকার। সেখানে স্বচ্ছল-অস্বচ্ছল পরিবারের সকলের জন্য বসবাসের উপযোগী করতে হবে। বিশেষ করে নারী, প্রতিবন্ধী, সমাজ বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিদের বার্ধক্য মোকাবেলা করা খুবই চ্যালেজিং। তাই সকলকে সচেতন হতে হবে।

প্রবীণ কল্যাণে গড়ে ওঠেছে সভ্যতা সংস্থা। এ প্রতিষ্ঠানের সভাপতি সাকিল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, প্রবীণদের কল্যাণে আমরা তিনটি বিষয় নিয়ে কাজ করি। প্রবীণদের বৃদ্ধাশ্রমে না রাখতে উৎসাহিতকরণ, প্রতিটি জেলায় একটি করে প্রবীণ নিবাস ও সৎ উপার্জনে সন্তানদের লালন-পালন করতে জনমানুষকে সচেতনতা সৃষ্টি।

তিনি বলেন, জীবনের সবকিছু উজার করে দিয়ে পিতা-মাতারা আমাদের বড় করে থাকেন। অথচ বৃদ্ধ হয়ে গেলে সেই পিতা-মাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নিতে হয়। এটি কোনো সভ্য-সামাজিক আচরণ হতে পারে না। এসব বিষয়ে সচেতন করতেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

সমাজের প্রবীণদের কল্যাণে প্রবীণ দিবসকে সামনে রেখে ১৩টি সুপারিশ করেছে প্রবীণ হিতৈষী সংঘ। সেগুলো হচ্ছে- প্রবীণদের স্বাস্থ্য, জনমিতিক ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার ওপর জাতীয় পর্যায়ে জরিপ করে পরিস্থিতি অবলম্বন করা, আলাদা একটি মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা ও প্রবীণ নীতিমালা-২০১৩ বাস্তবায়ন, প্রবীণ জনগোষ্ঠী বিষয়ক সংস্থা গঠনে জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিকভাবে দ্রুত প্রস্তাবনা উত্থাপন, প্রবীণ উন্নয়ন ফাউন্ডেশন আইন পাসকরণ, প্রচলিত সাধারণ ও পেশাগত শিক্ষা কার্যক্রমে বার্ধক্য ও প্রবীণকল্যাণ বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা, গণমাধ্যমে বার্ধক্য ও পেশাগত শিক্ষা কার্যক্রমে বার্ধক্য ও প্রবীণকল্যাণমূলক ইতিবাচক এবং প্রস্তুতিমূলক প্রোগ্রাম চালু করা, প্রবীণদের স্বাস্থ্য সেবাখাতে প্রদত্ত প্রবীণ হিতৈষী সংঘের আর্থিক বরাদ্দ ২০ কোটি করা, স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী এবং সহজলভ্য স্বস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থা করণ, দেশের ৭০ লাখ প্রবীণ নারীর সার্বিক সুরক্ষায় বাস্তবমুখী কর্মসূচি হাতে নেয়া, প্রতিবন্ধী, অটিস্টিক ও সমাজের বিচ্ছিন্ন প্রবীণদেও জন্য বিশেষ সেবা, প্রবীণদেও সেবায় উপযোগী ডে-কেয়ার সেন্টার এবং হোম হেলথকেয়ার সার্ভিস চালু, আবাসন ব্যবসায়ী এবং অর্থলগ্নিকারী সংস্থগুলোকে নিয়ে প্রবীণ নিবাস এবং বার্ধক্য বীমা চালু এবং প্রবীণকল্যাণে স্থানীয় পর্যায়ে স্বনির্ভর ক্লাব কর্মসূচি গড়ে তুলতে নাগরিকদের উৎসাহিত করা।

এমএইচএম/আরএস/আরআইপি

আরও পড়ুন