যা, বাংলাদেশে যা
নৌকায় করে টেকনাফ থেকে শাহ্ পরীর দ্বীপে মাত্র নেমেছি। গলায় আইডি কার্ড ঝুলান। দুপুর গড়িয়েছে। ঘাটে এসে দাঁড়াল একটি সিএনজি।
আইডি কার্ড দেখে পরিচয় নিশ্চিত হয়ে এক সিএনজিচালক আমাদের থামালেন। বললেন, ‘ভাই দেখেন ওই সিএনজির ভেতরে কী অবস্থা?’
সিএনজির ভেতরে ভালো করে তাকিয়ে দেখি, দু’জন বসা। একজন তরুণ, অপরজন মধ্যবয়স্ক। তরুণ ছেলেটি মধ্যবয়স্ক ব্যক্তিকে জাপটে ধরে আছেন। কোমরে কাপড় পেঁচানো। কোমরের বাম পাশে কাপড়ে তাজা রক্ত…
সিএনজি থেকে নেমেই তারা ঘাটের নৌকার উদ্দেশে হাঁটা ধরল। হাঁটতে হাঁটতেই কথা হয়। গুলি লেগেছে? উত্তর দিল, না। মিলিটারিরা কোমরে ছুরি মেরেছে।
জানা গেল, মিয়ানমারের গুদিচরা থেকে এসেছেন তারা। আহতের নাম মমতাজ উল্লাহ। জাগো নিউজকে বললেন, রাত ১১টার সময় (সোমবার) আমি আর আমার ভাই নাফ নদ দিয়ে নৌকায় করে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দেয়ার প্রস্তুতি নেই। মিলিটারিরা এসে আমার নৌকা উল্টে দেয়। আমার কোমরে ছুরি মারে। কোনোমতে তাদের কাছ থেকে পালিয়ে বেঁচেছি।
মিয়ানমারের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে নেসাডং থেকে সোমবার রাতে বাংলাদেশে আসা নাজিমুল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, প্রথম যখন হামলা শুরু হয়, আমরা সবাই বাড়ি থেকে পালিয়ে পাশের জঙ্গলে আশ্রয় নেই। কাছে কোনো টাকা-পয়সা ছিল না। যা ছিল বাড়িতে; এ কারণে তখন বাংলাদেশে আসতে পারিনি।
‘কয়েকদিন এভাবে কাটানোর পর ভাবলাম, পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়েছে। নেসাডংয়ে ফিরে যাই। কিন্তু বাড়িতে গিয়ে দেখি, টাকা-পয়সা, জামা-কাপড়, আসবাবপত্র সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
সেখানকার বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, মিয়ানমারের পরিস্থিতি এখনও ভয়াবহ। দু’দিন আগে নিজ গ্রাম নেসাডংয়ে গিয়ে দেখি, কয়েকজন পুরুষকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করছে মিলিটারিরা। রাইফেলের বাট দিয়ে আঘাত করা হচ্ছে।
‘রোহিঙ্গা যুবকদের একসঙ্গে দেখলেই তারা ধরে মারধর করে। কেউ যদি দ্রুত হেঁটে যায় বা দৌড় দেয় তাকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, আমার সামনেই ১০-১২ জন নারী একসঙ্গে হেঁটে যাচ্ছিল। মিলিটারিরা তাদের আটকায়। ব্যাগ তল্লাশি করে। এরপর সবাইকে লাইনে দাঁড় করিয়ে শরীর তল্লাশি করে। বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়, কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা বলে। শরীরে তল্লাশি শেষে মিলিটারিরা বলে, ‘যা, বাংলাদেশে যা।’
পরবর্তীতে ওই স্থান থেকে লুকিয়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে উঠি। সেখান থেকে টাকা নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসি।
শাহ্ পরীর দ্বীপ সংলগ্ন নাফ নদের তীর থেকে ওপারে মিয়ানমার সীমান্তে যেসব গাছ দেখা যায় সেগুলো যেন বাদামী রঙ ধারণ করেছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানান, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেয়া আগুনে পুড়ে গেছে ওইসব গাছ।
২৫ অগাস্ট নিরাপত্তা বাহিনীর প্রায় ৩০টি ক্যাম্পে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমনপীড়নের মুখে রোহিঙ্গারা পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা বেড়ে চার লাখ ৮০ হাজারে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে কক্সাবাজারে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর সমন্বয় কমিটি।
এআর/এমএআর/বিএ