মিয়ানমারকে বাধ্য করতে হবে : নজরুল
অতীতে বিএনপি সরকার পেরেছে। বর্তমান সরকারও কূটনৈতিক তৎপরতায় রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে পারবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, মিয়ানমার ইচ্ছা করে অপরাধ করছে। মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাধ্য করতে হবে। সরকারের উচিত সর্বদলীয় আলোচনার আয়োজন করা।
সম্প্রতি জাগো নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা। রোহিঙ্গা ইস্যুতে কথা বলেন তিনি।
জাগো নিউজ : রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আমাদের দেশে পাড়ি জমাচ্ছে, আপনি তো সেখানে গেছেন, ত্রাণ তৎপরতাসহ সার্বিক বিষয়ে আপনি কি দেখে আসলেন?
নজরুল ইসলাম খান : এটা আমাদের জন্য জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কারণ এমনিতেই তো কয়েক লাখ রোহিঙ্গা আমাদের এখানে আছে। দীর্ঘদিন ধরেই আছে। তার ওপর হঠাৎ করে এত বেশিসংখ্যক নতুন রোহিঙ্গার সমাগম হয়ে গেল, এটাকে অর্থনৈতিক বা সামাজিকই নয়, জাতীয়ভাবে এক ধরনের বিপর্যয় বলব। আমরা মনে করি মিয়ানমার সরকার এটাকে একেবারে ইচ্ছাকৃতভাবে অপরাধটা সংঘটিত করে লোকদের পাঠিয়ে দিয়েছে। যাদের সাথে কথা বলেছি, আমরা দেখলাম যেটা সেটা হলো কেউ কিন্তু আগ্রহ করে আসেনি। তারা সেখানে থাকতেই চেয়েছিল। তাদের জায়গা তারা সেখানে থাকবে। আর বাংলাদেশে তো এমন কোনো ব্যাপার না মানুষ যেমন আমেরিকায় যায় বা জার্মানিতে যায় বা ইতালিতে যায় বেশি উপার্জন করবে এজন্য। ব্যাপারটা তো এরকম না। একেবারেই খালি হাতে তারা চলে এসেছে। আমরা ক্যাম্পে অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। বেশিরভাগ লোকই বলেছে, তাদের পরিবারের কেউ না কেউ নেই। মেরে ফেলা হয়েছে তাদের। কেউ না কেউ নিঁখোজ হয়েছে। এবং অনেকে জানেও না তাদের পরিবারের বাকি সদস্যরা কোথায়। হতে পারে তারা চলে এসেছে। তারা এক ক্যাম্পে অন্যরা আরেক ক্যাম্পে। কারও সাথে কারও কথা হচ্ছে না, দেখা হচ্ছে না। এটা যেহেতু জাতীয় সমস্যা, অতএব আমাদের সরকারের উচিত ছিল এটা মোকাবেলা করার জন্য একটা জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা। এ ব্যাপারে তো দ্বিমত করার সুযোগ ছিল না। আমরা একটা সন্তোষজনক সমাধান চাই। এরা যাতে তাদের নিজস্ব ভূমিতে ফিরে যেতে পারে। গোটা জাতিকে যদি এই দাবিতে ঐক্যবদ্ধ করা যেত তাহলে এটা সরকারের জন্য ভালো হতো। এ ধরনের একটা মানবিক বিপর্যয় শুধু সরকারের পক্ষে মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। আমরা যত লোককে ত্রাণ বিতরণ করতে দেখেছি সেখানে সরকারি কোন প্রতিষ্ঠান নেই। সবই বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠনগুলো এ কাজ করছে। এবং অনেক লোক এসব কাজের জন্য আগ্রহী। চেষ্টাও করছে তারা। সরকার যদি এই কাজটা করত; তারা আমাদের প্রস্তাব করেছিল আপনারা ১০-২০টা মানুষের মধ্যে বিলি করে ছবি তুলে চলে যান বাকিটা আমাদের এখানে দিয়ে যান, আমরা দিয়ে দেব। আমরা তাদের বললাম এক কাজ করেন আপনারা আমরা সাথে থাকি বা আমরা দেই আপনারা সাথে থাকেন। তারা সেটা করতে রাজি না। তারা আমাদের ২-৩০ জনকে দিয়ে ছবি তোলার জন্য বলছে আমরা তো ছবি তুলতে যাইনি। আমরা গিয়েছি বিপন্ন মানবতার সেবা]র জন্য। এবং আমরা যেগুলো নিয়ে গেছি সেগুলো তাদের হাতে দিতে পারলে এর তৃপ্তি আলাদা। তাই নয় কি? আমি এখনো মনে করি সরকারের উচিত ত্রাণ বিতরণে অনুৎসাহিত না করে উৎসাহিত করা। তারাই ঠিক করুক, তাদের কাছে তালিকা আছে। একটা বিসৃত এলাকাজুড়ে যে রোহিঙ্গারা আছে, কতগুলো জায়গা ভাগ করে তারা দিতে পারে। যারাই যাবে ত্রাণ নিয়ে তাদের বাধা না দিয়ে বলা উচিত আমাদের লোক আপনাদেও সঙ্গে যাবে আপনারা ঐ জায়গায় দেন। একেকজনকে একেক যায়গায় দিবে যাতে করে সব লোকেরা ত্রাণ পায়। সরকারের যে সব লোক কাজ করছে, তাদের এত অভিজ্ঞতা নাই এগুলো মোকাবেলা করার। সেজন্য সবাইকে উৎসাহ দেয়ার জন্য। যারা ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছে তারাও বিভিন্ন স্থান থেকে চাঁদা তুলে একত্র করে, ধরেন একটা পুরা এলাকার লোক কিছু টাকা জোগাড় করে ঐখান থেকে দশজন লোককে পাঠিয়ে দিলো। তারা যে ত্রাণ দিলো এটার তো একটা রেকর্ড দেখাতে হবে। তা না হলে যারা ত্রাণ কাজে আর্থিক সহযোগীতা করেছেন তারা ভাবতেও পারে যে পাঠানো সহযোগীতা ঠিকভাবে খরচ করা হয়নি বা দেয়া হয়নি। কাজেই যারা নিয়ে যাচ্ছে তারা নিজেরাই এসব ত্রাণ দিতে চায়। তাদেরও একটা তৃপ্তির ব্যাপার আছে যে আমরা নিজ হাতে বিপন্ন মানুষগুলোর যারা কষ্টে আছে তাদেরকে দিলাম। সে কারণে আমরা মনে করি সরকারের উচিত এটাকে নিয়ন্ত্রণ না করে এটাকে উৎসাহিত করা। সহায়তা করা সহযোগীতা করা। তাহলে আরো বেশি লোক ত্রাণ বিতরণ করবে। বিদেশ থেকে যেগুলো আসছে সেগুলো বিতরণ করবে সরকার। আমারা একটা প্রস্তাবও করেছি সেনাবাহিনী মোতায়ন করা দরকার। কারণ খুবই বিশৃঙ্খল অবস্থা চলছে সেখানে। বিশৃঙ্খলা হওয়াটাও স্বাভাবিক। কারণ এত অল্প সময়ের মধ্যে এত বেশি সংখ্যক লোক এসে গেছে যাদের জন্য আগে থেকে ঘর বাড়ি তৈরী করা সম্ভব নয়। এমনকি তারা কি একটা প্লাস্টিকের তাবুর মতো করে থাকবে এরও তো কোন ব্যবস্থা নেই। কাজেই এগুলো করার জন্য যে সময়টা তা তো পেতে হবে। কিন্তু ইতিমধ্যে সেখানে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। মানবিক অবস্থার মধ্যে আছে তারা। সেখানে থাকার জায়গা নাই, টয়লেটের সুযোগ সুবিধা নাই, পানির ব্যবস্থা নাই। তারা কি যে বিপদাপন্ন অবস্থায় আছে। একে তো মানুষিক বিপর্যয়, তারপর এত লম্বা রাস্তা হেটে, কেউ নৌকা দিয়ে, কেউ বিভিন্নভাবে আসছে। শোনা যায় রাস্তায় আসার সময় তাদের জিনিসপত্র লুট করা হয়েছে। তাদের গরু ছাগল লুট করা হয়েছে। নানাভাবে তাদেরকে কষ্ট দেয়া হয়েছে। এখন সীমান্তের ঐপারে তাদেরকে কষ্ট দেয়া হয়েছে এপারেও যে কষ্ট পাচ্ছে না তা না। এই যে বিপন্ন মানুষগুলো কষ্টের মধ্যে থাকা মানুষগুলো তাদের পাশে সবার খোলা মন নিয়ে সহানুভূতি নিয়ে দাড়ানো উচিত। এবং যে জিনিসটা দরকার সরকারকে ঘোষণা দেয়া। যাদের থাকার জায়গা নাই তারা চাউল দিয়ে কি করবে? তাকে চাল দিলে তো কোন লাভ নাই। কিছু লোক আছে যাদের থাকার জায়গা হয়েছে তাদের জন্য চাউল ডাল লবন মরিচ তেল ইত্যাদি দেয়া যেতে পারে। যাদের কোন ব্যবস্থা নাই তাদেরকে তৈরী খাবার দিবে হবে ছিড়া গুড় দিতে হবে পানি দিতে হবে। উচিত যেটা সেটা হলো তাদের থাকার জন্য সহযোগীতা করা। তাদের টয়লেটওে সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা তাদের জন্য টিউবওয়েলের ব্যবস্থা করা তাদের রোগের চিকৎিসার ব্যবস্থা করা। আমাদের মেডিক্যাল ক্যাম্প সেখানে কাজ করছে। আমরা সেখানে স্যানিটারি টয়লেট করার জন্য টিউবওয়েলের জন্য এবং মারা গেলে তাদের দাফন কাফনের জন্য আমরা টাকা পয়সা দিয়ে এসেছি। কাজ চলছে সেখানে। স্থানীয়ভাবে আমাদের সহকর্মীরা সেখানে কাজ করছে। রিলিপের জিনিসগুলো আমরা দিতে পারিনি, আমাদেরকে দিতে দেয়া হয়নি। কিন্তু আমরা ব্যবস্থা করে আসছি। সেখান থেকে অল্প অল্প করে ঐখান থেকে নিয়ে তারা লোকজনকে বিলি করতেছে। কিন্তু আমি আবারো বলতে চাই, এই যে বিপুল সংখ্যক মানুষ আসছে এদের ত্রাণ দেয়ার ব্যাপারে সরকারের উচিত নিয়ন্ত্রণ নয় বরং সহযোগীতা করা। তাহলে অনেক বেশি মানুষ সাহায্য করতে সেখানে যাবে। অনেক বেশি রিলিপ সামগ্রী সেখানে পৌছবে। এবং অনেক বেশি মানুষ উপকৃত হবে। তারপর তাদের জন্য যখন ক্যাম্প হয়ে যাবে, অন্যান্য সুযোগ সুবিধা হয়ে যাবে, তাদের আটকানো যাবে যে তারা কোথাও বের হতে পারবে না, শৃঙ্খলার মধ্যে এসে যাবে যখন। ইতিমধ্যে বাহিরে থেকে ত্রাণ সামগ্রী আসা শুরু হয়েছে। তখন হয়তো বাহিরের কারো সেবা করার প্রয়োজন হবে না। তখন সরকার নিজেরাই ম্যানেজ করতে পারবে। কিন্তু এখন যে সময়টা এটা খুবই মারাত্মক সময়। আপনি বিশ্বাস করেন আমরা যখন ঔখান দিয়ে হেটে যাচ্ছিলাম, লোকদেরকে দেখছিলাম কি রকম একটা অসহায় অবস্থার মধ্যে আছে তারা। কি অসহায় দৃষ্টি নিয়ে তাকায় তারা। সবায় আশা করে তাদেরকে কেউ কিছু না কিছু দিবে। সহযোগীতা করবে তাদেরকে। আজকেও একটা ছবি দেখলাম, ছাড়া নিয়ে একজন্য বৃদ্ধ মহিলা কাদার মধ্যে বসে আছে। এরা যে অসুস্থ হয়ে পড়বে কে চিকিৎসা দেবে? অনেক প্রাইভেট অরগানাইজেশন মেডিকেল ক্যাম্প করে সাহায্য করছে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে দেখলাম কাজ করতে। দু চারটা মেডিক্যাল ক্যাম্প করে তো কিছু হবে না। অনেক। লক্ষ লক্ষ মানুষ। উৎসাহি করা দরকার। বিভিন্ন হাসপাতালগুলোকে বলা দরকার। বিভিন্ন ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানিগুলোকে বলা দরকার যে আপনারা ডাক্তার পাঠান, ঔষুধ পাঠান, চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। কাউকে বাধা না দিয়ে বরং সরকার বলে দিবে আপনি দুটো ক্যাম্প করতে চান আপনি অমুক যায়গায় করেন। আপনি কিছু খাবার দিতে চান আপনি অমুক জায়গায় দেন। আপনি কিছু কাপড় দিতে চান অমুক যায়গায় দেন। আপনি কিছু তাবু দিতে চান আপনি অমুক যায়গায় দেন। তাহলেই তো হয়। আমি মনে করি দুটো কাজ, একটা হলো তাৎক্ষণিকভাবে তাদেরকে বাঁচতে সহযোগীতা করা। আর মূল কাজ যেটা সেটা হলো কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করা। যাতে করে তারা তাদের মার্তৃভূমিতে ফিরে যেতে পারে। তারা এখানে কেউ থাকতেও চায় না। তারা তাদেও আবাস ভূমিতেই ফিরে যেতে চায়। সেখানে তাদের জমি আছে, তাদের ঘর আছে, এগুলো পুড়িয়ে দিলেও ভিটা তো আছে। আবার তারা সেখানে ঘর করে থাকবে। এটা তো এবারই নয়। এর আগে ১৯৭৮ সালে হয়েছে, ১৯৯২ সালে হয়েছে। বিভিন্ন সময় হয়েছে। গত কয়েক বছরের মধ্যে কয়েকবার হয়েছে। কিন্তু তারা যদি নিশ্চয়তা না পায় যে ঐখানে তাদেরকে মেরে ফেলা হবে না। তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে ফেলা হবে না তাহলে তারা তো যেতে চাইবেই। যাবে না কেন তারা। সেজন্য উচিত নিশ্চিত করা তারা সেখানে গিয়ে নিরাপদে বাস করতে পারবে। এটা করা উচিত। এবং এটা সরকারকেই করতে হবে। আমরা তো করতে পারবো না। এই ব্যাপারে সরকারের কাজটা সহজ হতো যদি একটা সর্বদলীয় মিটিং ডাকতো। এবং সেই মিটিং থেকে একটা রেজুলেশন হতো। সবাই আমরা বুঝেছি সরকারকে আহ্বন জানাবে আপনি এটা করেন। এবং জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছি আপনারা এটা করেন। তাহলে ভাল হতো।
জাগো নিউজ: রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকারের অবস্থান নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কি?
নজরুল ইসলাম খান: আমাদের প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে গেছেন। সেখানে উনি রোহিঙ্গা ইস্যুতে কথা বলবেন। আমরা চাইবো উনি খুব শক্ত অবস্থান যাতে নেয়। এটা আমাদের কোন দোষে হয়নি। যা হয়েছে তা মিয়ানমার সরকারের ইচ্ছায় হয়েছে। মিয়ানমার সরকারের নিপীড়নে তারা বাধ্য হয়ে চলে আসছে এখানে। কাজেই যে সরকার তার নাগরিকদেও বিরুদ্ধে নিপীড়নমূলক আচরণ করে। গোটা আন্তর্জাতিক বিশ্ব তার বিপক্ষে যাতে দাঁড়ায়। এবং তাকে যাতে বাধ্য করে যদি সে কথা না শুনতে চাই তাহলে তাকে একঘরে করে দেয়া। এটা তো পারে অন্তত বিশ্ব। বাণিজ্য কিংবা অন্যান্য সুবিধার জন্য কেউ অন্যায় সহ্য করবে এটা যেন গোটা বিশ্ব মেনে না নেয়। সেজন্য আমরা চাই সরকার আরও শক্ত ভূমিকা নেবে, যাতে করে রোহিঙ্গারা তাদের স্বদেশে ফিরে যেতে পারে। এটা হলো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেছেন দরকার হলে আমরা খাবার শেয়ার করব। ঠিক আছে। সারাদেশের মানুষ প্রয়োজন হলে খাবার শেয়ার করবে। কিন্তু কত দিন? আর কেন? যে পর্যন্ত আমরা তাদের ফিরিয়ে দিতে না পারি এ পর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু এটা কোন স্থায়ী ব্যবস্থা হতে পারে না। স্থায়ী ব্যবস্থা হলো তারা তাদের নিজেদের ঘরে যাতে ফিওে যেতে পারে। তাদের নিজেদেওে দেশে যাতে ফিরে যেতে পারে। এখানে যে লোকগুলো আসছে তাদের জন্ম হয়েছে সেখানে। বড় হয়েছে সেখানে। তাদের সেখানে সবারই চলার একটা ব্যবস্থা ছিল। চাষাবাদ করেছে। ব্যবসা বাণিজ্য করেছে। এখানে তারা কি করবে? এখানে ক্যাম্পে আটকে থাকতে হবে। বন্দি জীবন যাপন করতে হবে। না হয় খাবার দিলাম তাদের। এটাতে তো সন্তুষ্ট হ্ওয়ার কথা না। সেজন্য সরকারের যেটা উচিত হবে মানবিক বিবেচনায় তাদের থাকতে দেয়া ততদিন পর্যন্ত যতদিন না আমরা তাদের নিরাপদে তাদের দেশে ফিরিয়ে দিতে পারি। কিন্তু মূল চেষ্টাটা করা উচিত যত দ্রুত সম্ভব তাদেরকে যেন নিরাপদে তাদের দেশে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারি। এটা ১৯৭৮ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সাহেব করেছিলেন। ১৯৯২ সালে বেগম খালেদা জিয়া করেছিলেন। আমরা আশা করি এ সরকারও পারবে। উচিত হবে সেটা করার।
জাগো নিউজ: বাংলাদেশের কি সেই সক্ষমতা আছে?
নজরুল ইসলাম খান: নিশ্চয়ই আছে। আমরা কি ’৭৮ সালে এর চেয়ে বেশি শক্তিশালী ছিলাম, না ’৯২ সালে এর চেয়ে বেশি শক্তিশালী ছিলাম। এখন তো বাংলাদেশে তখনকার ছেয়ে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে আরও বেশি শক্তিশালী বলে সরকার দাবি করছে।
জাগো নিউজ: বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করছে...
নজরুল ইসলাম খান: এটা নিয়ে আমরা আমাদের বক্তব্যে বলেছি। আরও শক্ত অবস্থান নেয়া দরকার। আমাদের দেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করা এটা তো আন্তর্জাতিক আইনেই গর্হিত একটা কাজ করেছে মিয়ানমার সরকার। এর বিরুদ্ধেও বাংলাদেশ সরকারের শক্ত অবস্থান নেয়া দরকার। কেবলমাত্র মিয়ানমার নয়, যে কোনো দেশ যদি আমাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে তাহলে এর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ করা দরকার। জাস্ট তাদের ডেকে নিয়ে এসে একটু কথা বলা নয়। আন্তর্জাতিক বিশ্বকে বলা দরকার। মিয়ানমারও এমন কোনো শক্তিশালী রাষ্ট্র নয় যে তার আন্তর্জাতিক সহযোগিতা দরকার নেই। আন্তর্জাতিক বিশ্ব থেকে সবাই যেন একটা প্রেসার দেয় যে মিয়ানমার সরকার যেন এই ধরনের একটা মানবতাবিরোধী অপরাধ না করতে পারে। এ ধরনের একটা নিপীড়নমূলক সরকারের পাশে কেউ না থাকে। এটার জন্য প্রয়োজনীয় প্রচারণা দরকার।
জাগো নিউজ: রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর অবস্থান নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কি?
নজরুল ইসলাম খান : প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে একটা হলো ভারত। ভারতের প্রধানমন্ত্রী সেখানে গিয়ে যে কথাবার্তা বলেছেন বা যে আচরণ করেছেন বাংলাদেশের মানুষ সেটা পছন্দ করেনি। কিছুটাও হলেও ভারত তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেছে। মানবিক সাহায্য দিয়েছে। তারা বলেছে আমাদের তারা সহানুভূতি প্রকাশ করেছে ভালো। আমরা আশা করব মানুষের অধিকার হরণ করা হচ্ছে ভারত একটা দেশ হিসেবে সেটির বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে। চায়না আরেকটি নিকট প্রতিবেশী আমাদের না হলেও মিয়ানমারের। তাদের অবস্থান নিয়েও আমাদের পর্যবক্ষেণ আছে। বাণিজ্য সুবিধা বা টেকনিক্যাল কারণে বা তার রাষ্ট্রীয় সুবিধার কারণে তারা এই অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু কোনো স্বার্থই মানবতাকে অগ্রাহ্য করার মত নয়। আশা করব চায়না যেন এমন অবস্থান নেয় যাতে করে মিয়ানমার তার জনগণের ওপর নিপীড়ন অত্যাচার না করে। মানুষের বাড়িঘর পুড়িয়ে ফেলা, মানুষ হত্যা করা, সীমান্তে মাইন পুঁতে রাখা। এভাবে অপরাধ যাতে না করতে পারে সে ব্যবস্থা করা। আশা করি থাইল্যান্ডও শক্ত অবস্থান নেবে। মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়া অলরেডি ডিসিশন নিয়ে নিয়েছে। আমরা ব্রিটেনের কনজারভেটিভ পার্টির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে রোহিঙ্গা ইস্যুতে কথাবার্তা বলেছি। তারাও শরণার্থী শিবিরে যাচ্ছেন।
জাগো নিউজ : রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো কতটা চ্যালেঞ্জিং?
নজরুল ইসলাম খান : তাদের সেনাপ্রধানের যে বক্তব্য দেখলাম। খুবই মারত্মক কথা বলেছেন। তিনি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করতে বলেছেন। একটা গণতান্ত্রিক সরকার যেখানে প্রতিষ্ঠিত আছে সেখানে সেনাবাহিনীর এই ধরনের বক্তব্যে বোঝা যায় মিয়ানমার এখনও সেনাবাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হতে পারেনি। সেনাবাহিনী যে তাণ্ডব চালিয়েছে সেটি সিদ্ধান্ত ছাড়া হয়নি। সেই অবস্থায় সেনাবাহিনী প্রধান এই ধরনের অবস্থান নিতে সাহস পান। সেখানে গণতান্ত্রিক সরকার কি করতে পারে সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে। তবে যে যতই বড় কথা বলুক বিশ্বনেতাদের চাপের মুখে তাদের নতি স্বীকার করতে হবে। গণতান্ত্রিক বিশ্বের চাপ জোরদার করতে হবে। মিয়ানমার যেন নত হয়। যারা নিজ ভূমি ছেড়েছে তাদের জন্য নিরাপদে ফেরত নেয়া হয়, যারা খুন করেছে তাদের যেন বিচার হয় এই বিষয়গুলো সামনে আনা দরকার। কারণ অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে মানবতাবিরোধী যারা অপরাধ করেছে তাদের সাজা হয়েছে। আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার হয়েছে।
জাগো নিউজ: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
নজরুল ইসলাম খান: আপনাকে ও জাগো নিউজকে ধন্যবাদ।
এমএম/ওআর/জেআইএম
আরও পড়ুন
সর্বশেষ - জাতীয়
- ১ নিউ এইজ সম্পাদককে হয়রানি, ঘটনা তদন্তের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
- ২ লেখাপড়ায় মনোযোগ দেন, প্রয়োজনে আবারও রাস্তায় নামবো
- ৩ ৩৭ বছর পর চট্টগ্রাম কমার্স কলেজে প্রকাশ্যে শিবির
- ৪ ৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি এ সপ্তাহে, ক্যাডার-ননক্যাডারে পদ ৩৭০১
- ৫ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ, ওষুধে ব্যয় ২০ শতাংশ